বাংলাদেশের রাজসিক ওয়ানডে অভিষেক

সাভার: খেলা বোঝেন আর নাই বোঝেন দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য একটি উপহার নারী ক্রিকেটারদের পক্ষ থেকে। বস্তুগত কোন উপহার নয় উপলব্ধির। জয়, জয় এবং জয় উপহার পেয়েছেন। 

বাংলাদেশ: ২১০/৭ (৫০ ওভার)
আয়ারল্যান্ড: ১২৮ (৪৫.৪ ওভার)
ফল: বাংলাদেশ ৮২ রানে জয়ী। 


এরচেয়ে বড় উপহার কিছু নেই। সাদরে গ্রহণ করে নিতে পরেন। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক ওয়ানডে দলের মর্যাদা পেয়ে শনিবারই আয়ারল্যান্ডকে ৮২ রানে হারিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে জয়ের স্বাদ নেয় বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। একেবারে রাজসিক অভিষেক। 

বাংলাদেশ পুরুষ ক্রিকেট দল প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলেছে ১৯৮৬ সালে দ্বিতীয় এশিয়া কাপে। গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর নেতৃত্বে জাতীয় দল পাকিস্তানের কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছিলো ওই ম্যাচে। ১৩ বছর পর পুরুষ দল প্রথম ওয়ানডে জয়ের স্বাদ নেয় ভারতে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় ক্রিকেট সিরিজে। ১৯৯৮ সালের ১৭ মে লাল বহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়ামে কেনিয়াকে ৬ উইকেটে হারিয়েছিলো জাতীয় দল। সেখানে নারী দলের অর্জন আন্তার্জাতিক স্বীকৃতির মাত্র দুই দিনের মাথায়। জয়তু বাংলাদেশ, জয়তু নারী ক্রিকেট দল। যদিও তুলনাটা সমীচীন নয়। কোন ভাবে তুলনা আসেও না। বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সম্ভাবনা বোঝাতেই তথ্যগুলো তুলে ধরা। 

বিকেএসপির সঙ্গে ক্রিকেটের সম্পর্ক অনেক দিনের। জাতীয় দলের প্রস্তুতি থেকে শুরু করে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে। ওসবের কিছুই ইতিহাসের অংশ হতে পারেনি। শনিবার নারী ক্রিকেট দল বিকেএসপিকে সেই স্বীকৃতিটাও দিয়েছে। 

অনেক দিক থেকে রেকর্ড বুকে ঢুকে গেছে আন্তর্জাতিক প্রথম ওয়ানডে। দেশের ১১ জন নারী ওয়ানডে ক্রিকেটারের স্বীকৃতি পেলেন। 

আইরিশ অধিনায়ক ইসবেল জয়েসের বল পিচ করার সঙ্গে সঙ্গে নিখুঁত শটে তা সীমানা ছাড়া করেন শুকতারা রহমান। ওই রানের মধ্যদিয়ে দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ব্যাটারের স্বীকৃতিও পেয়েছেন। উদ্বোধনী জুটির অপর ব্যাটার অচেনা। অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আয়শা আক্তারের আড়ালে পড়ে ছিলেন। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়ে বাজিমাত করেছেন বিকেএসপির একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী শারমিন সুপ্তা। প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে অর্ধশতক তার ব্যাট থেকেই এসেছে। শুকতারা ও সুপ্তার উদ্বোধনী জুটি বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে ১১৩ রান করেছেন। রান আউট হয়েছেন ৮৮ বলে ছয়টি চারের সাহায্যে ৫২ রনা তুলে। 

শুকতারাও অর্ধশতক পেয়েছেন। জিল হুইল্যানের বলে বোল্ড হওয়ার আগে পাঁচটি চারের মার দিয়ে ১১৯ বলে ৫৩ রান করেন জাতীয় দলের সহঅধিনায়ক। তৃতীয় উইকেটের পতনের সময় বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিলো ১৪৫ রান। 

মাঝে একটি উইকট হারালেও শেষদিকে লতা মন্ডল ও রুমানা আহমেদ দ্রুত রান তুলে পুষিয়ে নেন। ৪৯তম ওভারে ১৮ রান এসেছে। তারমধ্যে রুমানার ব্যাট থেকে এসেছে ১৭। ইসবেলের ওই ওভারে টানা চারটি চার হাঁকিয়েছেন জাতীয় দলের এই অলরাউন্ডার। ছয়টি চারের সাহায্যে ৩০ বলে ৩৬ রানে অপরাজিত ছিলেন রুমানা। লতা করেছেন ২৭ রান। দলের সংগ্রহ ৫০ ওভারে সাত উইকেটে ২১০ রান।

কোন বিদেশি দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটি সর্বোচ্চ রান। আগের সর্বোচ্চ ২০৯ রান করেছিলো এই বিকেএসপিতে আইরিশদের বিপক্ষেই। নরাী বিশ্বকাপের বাছাই প্রতিযোগিতার গ্রুপ ম্যাচে পাঁচবার বিশ্বকাপে খেলা দলটিকে। 

আইরিশদের গুঁড়িয়ে দেওয়ার অস্ত্র স্পিন। অথচ স্পিন বোলারের খনি বাংলাদেশ দলে। গ্রুপ ম্যাচে খাদিজা তুল কুবরা ১১৪ রানে গুটিয়ে দিয়েছিলেন আইরিশদের ইনিংস। পঞ্চম স্থান নির্ধারণী ম্যাচেও দুই স্পিনার সালমা খাতুন ও রুমানা আহমেদ তাদেরকে বেঁধে ফেলেছেন। সালমা তিনটি এবং রুমানা দুটি উইকেট নিয়েছেন। একটি উইকেট নিয়েছেন খাদিজা তুল কুবরা। হাতের আঙ্গুলে চোট পাওয়ায় তিন ওভার বল করতে পারেননি তিনি। 

শুকতারা, সুপ্তা অর্ধশতক করলেও ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন রুমানা আহমেদ। 

0 comments:

Thanks for Comment

Copyright © 2013 MEDIA INFO