‘করপোরেট গর্ভনেন্স’ কি ও কেন?

‘ব্যক্তি’ এবং ‘ব্যবসা প্রতিষ্ঠান’ দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন আইনগত সত্ত্বা। ‘ব্যক্তি’ যখন ব্যক্তি হিসেবে ব্যবসা করে তখন তার থাকে এক ধরনের সত্ত্বা। আবার একই ব্যক্তি যখন একটি ‘ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে’ সম্পৃক্ত হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে তখন তার ভিন্ন আইনগত সত্ত্বা ও অবস্থান তৈরী হয়।

এটাই আইন এবং বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি ব্যবসায়ীক রীতি।

ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে দেশের সকল বিধিবদ্ধ আইন ও রীতিনীতি অনুসরন করা, কোম্পানী সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণ করা, প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিকট কোম্পানীর প্রকৃত ও সত্য তথ্য প্রকাশ করে প্রকৃত আর্থিক অবস্থা অনুধাবন করতে সহায়তা করা ইত্যাদি কর্পোরেট গর্ভনেন্স নীতিমালার অংশ।

কোম্পানী পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদে এক বা একাথিক স্বাধীন পরিচালক প্রতিনিধির অংশগ্রহন নিশ্চিত করা এ নীতিমালার অংশ। নিয়মিত বোর্ড সভা ও বার্ষিক সাধারন সভা আয়োজন, কোম্পানীর বোর্ড ও সাধারন পরিষদের সভাকে এর সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্র বিন্দু বানানোর বিষয়ে এই নীতিমালা সহায়তা করে।

সকল পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কোম্পানী পরিচালনার ক্ষেত্রে মালিক পক্ষের একক ও খামখেয়ালীপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ন্ত্রিত করাও এর অন্যতম উদ্দেশ্য।

আমাদের দেশে প্রায় ৭০ হাজারের বেশী প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী গঠিত ও পরিচালিত হলেও সেসকল প্রতিষ্ঠানসমূহে গড়ে উঠেনি বিশ্বমানের কর্পোরেট কালচার। পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানী হয়েও কখনো কখনো এসকল কোম্পানীর বোর্ড/পরিচালনা পর্ষদ প্রাইভেট বা ব্যক্তিগত কোম্পানীর বা একক মালিকানা প্রতিষ্ঠানের মত আচরণ করে।

প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীসমূহ মালিকের একক ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় পরিচালিত হলেও ষ্টক মার্কেটে শেয়ার ইস্যূ করে লক্ষ-লক্ষ শেয়ারহোল্ডোরের নিকট থেকে সংগৃহীত টাকায় পরিচালিত পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানীসমূহেও যথাযথ কর্পোরেট কালচারের অভাব রয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা।

ফলে ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীদের টাকায় ব্যবসা পরিচালনা করলেও তাদের প্রতি যে দায়িত্ব পালন করার কথা তা মালিকপক্ষ পালন করেনা। ফলে বিনিয়োগকারীরা প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে। কখনো কখনো বঞ্চিত হচ্ছে টাকা লগ্নিকারী ব্যাংকও।

এ সমস্যা থেকে পরিত্রানের উপায় হচ্ছে- কর্পোরেট গর্ভনেন্স নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরন করা। এর ফলে ব্যক্তি ও কোম্পানী যথাযথভাবে স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করতে পারবে এবং বিনিয়োগকারীর স্বার্থও সংরক্ষিত হবে। কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানীসমূহ প্রতি অর্থ বছরে কর্পোরেট গর্ভনেন্স নীতিমালা কিভাবে অনুুসরন করেছে তা বছরান্তে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করবে যাতে শেয়ারহোল্ডার ও সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ তা পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করতে পারে।

কিন্তু খুবই দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দেশের অনেক পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানী রয়েছে যাদের ষ্টক মার্কেটে লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারী থাকলেও এগুলো এখনো পরিচালিত হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানাধীন মুদি দোকানের মত।

সেখানে নেই কোন কর্পোরেট কালচার, নেই কোন কর্পোরেট ষ্ট্রাকচার। মালিক যা বলেন তাই হয়। অনেক বিধিবদ্ধ পদে নেই জনবলও। মালিকের ইচ্ছেয় একই ব্যক্তিকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্বশীল হিসাবে কর্তৃপক্ষকে দেখানো হয়।

কখনো কখনো কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয় নিজের সন্তান বা আত্মীয় স্বজনকেই। কর্মকর্তাদের কারোরই থাকেনা স্বাধীন মতামত প্রকাশের স্বাধীনতাও। উপরন্তু স্বাধীন মত প্রকাশের দুঃসাহস দেখালে চাকরী খোয়াতে হয়।

এ সকল কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদের অবস্থা আরো শোচনীয়। একই পরিবারের স্বামী,স্ত্রী, সন্তান বোর্ডের সদস্য। নিরপেক্ষ পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয় নিজের পছন্দমত, তিনিও মালিকের কথায় থাকেন নীরব, নিশ্চুপ। এদের নিয়মিত বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়না। মালিক একক সিদ্ধান্তে কোম্পানী পরিচালনা করে থাকেন।

যদি বোর্ডসভার কার্যবিবরণীর প্রয়োজন হয় তবে কার্যবিবরনী প্রস্তুত করে সকলের নিকট পাঠিয়ে স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়। কোন কোন পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানীর মালিক, চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সারাবছর সপরিবারে বিদেশে অবস্থান করেন। দেশে নিয়োগ দেয়া কয়েকজন কর্মকর্তা পুরো বিষয়টিকে সামলান।

বোর্ড সভাতো বাদই দিলাম, এসকল কোম্পানী বার্ষিক সাধারন সভারও আয়োজন করেনা। বার্ষিক হিসাব বিবরণী তৈরী করে ইচ্ছেমত। কোন বছর লাভ দেখান তো, কোন বছর লোকসান।

সামান্য কিছু সংখ্যক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে বিতরণ করেন, কিন্তু কমিশনকে রিপোর্ট দেয় সকল শেয়ারহোল্ডারকেই পাঠানো হয়েছে -ইত্যাদি। কমিশন বা ষ্টক এক্সচেঞ্জ প্রতি বছর তাদেরকে আর্থিক জরিমানা করে আর এর মালিকরা ৫-১০ লক্ষ টাকা জরিমানা দিয়ে পার পেয়ে যায়। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর।

এসকল কোম্পানীর ষ্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভূক্তিও বাতিল হয়না। কমিশন কোন পদক্ষেপ নিলে এরা দ্বারস্থ হয় মাননীয় আদালতের, স্থগিতাদেশ নেয় ও সময় অতিবাহিত করে। দেশের একাধিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা মিলেই যেহেতু এদের সাথে পেরে উঠেনা, সেহেতু এদের দ্বারা কোম্পানীর লক্ষ লক্ষ শেয়ারহোল্ডারের স্বার্থ কতটা সংরক্ষিত হয় তা সহজেই অনুমেয়।

তবে এটা আশার কথা এই যে, নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহের সার্বক্ষণিক জোরালো মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রনের কারনে দেশের ব্যাংকসমূহ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ও গুটিকতক বহুজাতিক কোম্পানী কর্পোরেট গর্ভনেন্স এর নীতিমালা অনুসরণ করছে।

ধাপে ধাপে অন্যান্য খাতের প্রতিষ্ঠানসমূহ এই নীতিমালার আওতায় আসবে বলে সকলে বিশ্বাস করে।

দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও ষ্টক মার্কেটের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সংক্ষেপে ‘কমিশন’) গত ০৭ আগষ্ট, ২০১২ইং তারিখে নোটিফিকেশন No. SEC/CMRRCD/2006-158/134/Admin/44-এর ইস্যূর মাধ্যমে কর্পোরেট গভর্নেন্স নীতিমালা বিষয়ক ইতিপূর্বেকার গত ২০-০৬-২০০৬ইং তারিখে ইস্যূকৃত নোটিফিকেশন বাতিল করে সংশোধিত গাইডলাইন প্রকাশ করেছে।

ঢাকা ষ্টক এক্সচেঞ্জ লিঃ ও চট্টগ্রাম ষ্টক এক্সচেঞ্জ লিঃ -উভয় ষ্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভূক্ত (পাবলিকলি ট্রেডেড) সকল কোম্পানীসমূহকে এই গাইডলাইন/নীতিমালা অনুসরন করতে হবে।

উক্ত কর্পোরেট গর্ভনেন্স গাইডলাইন অনুযায়ী পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানীসমূহকে তাদের ব্যবসায়ীক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য নি¤œলিখিত নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। যথা- কোম্পানীর পরিচালনা পষর্দের (বোর্ড) আকার প্রতিটি পাবলিককি ট্রেডেড কোম্পানীর বোর্ডের পরিচালক সংখ্যা হবে সর্বনিম্ন ৫(পাঁচ)জন এবং সর্বোচ্চ ২০(বিশ) জন।

তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ইন্সুরেন্স কোম্পানী বা বিশেষায়িত খাতের কোম্পানীসমূহকে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার আইন মেনে পরিচালনা পর্ষদের আকার নির্ধারণ করতে হবে। স্বাধীন (ইনডিপেন্ডেন্ট) পরিচালক নিয়োগ প্রদানপ্রতিটি পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানীসমূহকে এক বা একাধিক স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ প্রদান করতে হবে।

উক্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে নীচের নীতিগুলেঅ অনুসরন করতে হবে-

ক. কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদে কমপক্ষে ২০%(এক পঞ্চমাংশ) স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে ;

খ. স্বাধীন পরিচালক বলতে এমন পরিচালককে বোঝাবে যিনি কোন শেয়ারের মালিক নয় অথবা কোম্পানীর ১% এর কম শেয়ারের মালিক হবেন ;

গ. স্বাধীন পরিচালকবৃন্দ কোম্পানীর ষ্পন্সর শেয়ারহোল্ডার হবেন না এবং পরিবারভূক্ত কেউ যিনি ১% বা বেশী শেয়ার ধারন করে এমন পরিচালকদের সাথেও সম্পৃক্ত হবেন না ;

ঘ. কোম্পানীর সাথে নিরপেক্ষ পরিচালকদের অন্য কোন কোনরূপ সম্পৃক্ততা থাকবে না ;

ঙ. যিনি কোন ষ্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য, পরিচালক বা কর্মকর্তা নয়

চ. যিনি ষ্টক এক্সচেঞ্জের বা ক্যাপিটাল মার্কেটের কোন সদস্যের কোম্পানীর শেয়ারহোল্ডার, পরিচালক বা কর্মকর্তা নয়

ছ. যিনি কোম্পানীর বিগত ৩ বছরের বিধিবদ্ধ অডিটর ফার্মের অংশীদার বা কর্মকর্তা ছিলেন না

জ. যিনি ৩(তিন)টির বেশী তালিকাভূক্ত কোম্পানীর নিরপেক্ষ পরিচালক হবেন না

ঝ. যিনি ঋণ খেলাপীর কারনে আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত/সাজা প্রাপ্ত নন

ঞ. যিনি আদালত কর্তৃক অন্য কোন অপরাধে শাষিÍপ্রাপ্ত নন

ট. কোম্পানীর সাধারন সভার অনুমোদনক্রমে বোর্ড এ ধরনের পরিচালক নিয়োগ দিবে

ঠ. স্বাধীন পরিচালকের পদ ৯০(নব্বই) দিনের বেশী শূণ্য থাকবেনা

ড. বোর্ড এ বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রস্তুত করবে এবং বছরে তার কি কি অনুসরন করা হয়েছে তার রেকর্ড রাখবে

ঢ. স্বাধীন পরিচালকের মেয়াদকাল হবে ৩(তিন) বছর এবং একজনকে সর্বোচ্চ ২(দুই) মেয়াদের বেশী নিয়োগ দেয়া যাবে না -ইত্যাদি।

স্বাধীন পরিচালকের যোগ্যতা স্বাধীন পরিচালককে ব্যবসা সম্পর্কিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে। অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী নেতা, ব্যুরোক্র্যাট, অর্থনীতি আইন বা ব্যবসায় প্রশাসনের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সি.এ., চার্টার্ড সেক্রেটারীজ বা কষ্ট ম্যানেজমেন্ট একাউন্টেন্ট পেশার যে কাউকে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে, যার স্ব-স্ব ক্ষেত্রে/কর্পোরেট প্রশাসনে কমপক্ষে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

তবে কমিশনের সুপারিশে বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন যে কাউকে নিয়োগ দেয়া যাবে। একই ব্যক্তি চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হতে পারবে নাপাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানী একই ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দিতে পারবে না।

বোর্ড সদস্যদের মধ্য হতে একজনকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হবে এবং বোর্ড তার কাজের পরিধি ও দায়িত্ব-কর্তব্য সুষ্পষ্টভাবে নির্ধারন করে দেবে।

কোম্পানী তার পরিচালকদের মধ্য হতে অন্য একজনকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দিতে পারেন বা বাইরের কাউকে এই পদে নিয়োগ দিতে পারেন। তবে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা বীমা কোম্পানী স্ব-স্ব আইন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধিমালা অনুযায়ী উক্ত পদে নিয়োগ দিতে পারেন।

পরিচালকের রিপোর্ট কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ এর ১৮৪ ধারা অনুযায়ী প্রতিটি পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানী প্রতি বছরান্তে কোম্পানীর সার্বিক অবস্থা উল্লেখপূর্বক একটি ‘পরিচালক রিপোর্ট ’ প্রস্তুত করে বার্ষিক রির্পোটের সাথে শেয়ারহোল্ডারদের নিকট প্রেরণ করবে। কোম্পানীর আয়-ব্যয়, উন্নয়ন, পণ্য ভিত্তিক বিশ্লেষণ, ঝুকি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি এ রিপোর্টে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করতে হবে।

প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা, আভ্যন্তরীন নিরীক্ষার প্রধান ও কোম্পানী সেক্রেটারী নিয়োগপ্রতিটি পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানী একজন করে প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা, আভ্যন্তরীন নিরীক্ষা প্রধান ও কোম্পানী সেক্রেটারী নিয়োগ দিবেন এবং বোর্ড তাদের কাজের পরিধি ও দায়-দায়িত্ব বিস্তারিতভাবে নির্ধারন করে দিবেন।

প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ও কোম্পানী সেক্রেটারী বোর্ড সভায় উপস্থিত থাকবেনপাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানী কর্তক নিয়োগকৃত প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ও কোম্পানী সেক্রেটারী কোম্পানীর বোর্ড সভাসমূহে উপস্থিত থাকবেন তবে তাদের ব্যক্তিগত বিষয়ে আলোচনা হতে পারে এমন সভায়/সভার অংশে তারা উপস্থিত না থাকলেও চলবে।

অডিট কমিটি গঠন ও দায়িত্ব পালনপ্রতিটি পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানীতে পরিচালনা পর্ষদের (বোর্ড) সাব-কমিটি হিসাবে একটি অডিট কমিটি কাজ করবে। কোম্পানীর আর্থিক প্রতিবেদন যাতে কোম্পানীর সঠিক চিত্র তুলে ধরে এ লক্ষ্যে অডিট কমিটি বোর্ডকে সহায়তা করবে। এই কমিটি বোর্ডের নিকট দায়বদ্ধ থাকবে এবং এর কাজের আওতা ও দায়িত্ব সুনির্দিষ্টভাবে লিখিত থাকবে।

কমপক্ষে ৩(তিন) জন সদস্যের সমন্বয়ে অডিট কমিটি গঠিত হবে। একাধিক পরিচালক এবং কমপক্ষে ১জন স্বাধীন পরিচালক নিয়ে বোর্ড এই কমিটি গঠণ করবেন। কমিটির সদ্যবৃন্দ কোম্পানীর আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে পারদর্শী হতে হবে এবং কমিটির কমপক্ষে একজন সদস্যকে হিসাব/ফিন্যান্স ব্যবস্থাপনায় পারদর্শী/অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে।

কোম্পানী সেক্রেটারী উক্ত কমিটির সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। উক্ত কমিটির সভার কোরাম পূর্ণ হতে হলে কমপক্ষে একজন স্বাধীন পরিচালকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

বোর্ড, স্বাধীন পরিচালকদের মধ্য হতে একজনকে উক্ত কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে নির্ধারন করবেন। এই কমিমিটর চেয়ারম্যান কোম্পানীর সাধারন সভায় উপস্থিত থাকতে পারবেন। বহিঃ নিরীক্ষককে আভ্যন্তরীন কাজে নিয়োগ না করাকোম্পানী আইনের ধারা অনুযায়ী যে বহিঃ নিরীক্ষককে কোম্পানীর হিসাব প্রতিবেদন নিরীক্ষার জন্য নিয়োগ দেয়া হবে তাকে এর আভ্যন্তরীন সম্পদ মূল্যায়ন, ব্রোকার-ডিলার সেবা প্রদান, এ্যাকচুয়ারী সেবা প্রদান, আর্থিক কাঠামো উন্নয়ন, হিসাব সংরক্ষণ, আভ্যন্তরীন নিরীক্ষা কাজ তদারকী ইত্যাদি কাজে নিয়োগ প্রদান করা যাবেনা ।

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তার দায়িত্ব-কর্তব্য পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা বোর্ডকে নিশ্চিত করবে যে, তারা কোম্পানীর বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করেছে এবং তাদের বিশ্বাস ও জানামতে উক্ত প্রতিবেদনে কোন মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়নি, বড় ধনের কোন সত্য ঘটনা বাদ দেয়া হয়নি, এসকল প্রতিবেদন কোম্পানীর প্রকৃত তথ্যকে চিত্রায়িত করছে ইত্যাদি।

রিপোর্টিং ও কর্পোরেট গর্ভনেন্স রীতি নীতি অনুসরনকোম্পানীসমূহ, সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ইস্যূকৃত কর্পোরেট গর্ভনেন্স নীতিমালার শর্তাবলী কিভাবে বা কতটুকু অনুসরণ করছে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রতি বছরান্তে, প্রতিটি পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানীকে এ বিষয়ে চার্টার্ড একাউন্টেন্ট বা চার্টার্ড সেক্রেটারীজ বা কষ্ট ম্যনেজমেন্ট একাউন্টেন্টদের নিকট থেকে একটি ‘কমপ্ল্যায়েন্স সার্টিফিকেট’ গ্রহণ করতে হবে।

এই সার্টিফিকেটের কপি কোম্পানীর বার্ষিক প্রতিবেদনের অংশ হিসাবে প্রতিটি শেয়ারহোল্ডারদের নিকট প্রেরণ করতে হবে। পাশাপাশি কমিশনের নির্ধারিত ফরমেটে পরিচালকবৃন্দ বার্ষিক প্রতিবেদনের সাথে কর্পোরেট গর্ভনেন্সের শর্তাবলী অনুসরণ করার বিস্তারিত বিবরণ/রিপোর্ট শেয়ারহোল্ডারদেরকে প্রেরণ করবেন।

বিগত বছরে কোম্পানীর কতগুলো বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, বোর্ড সভায় পরিচালকদের উপস্থিতি ও ভূমিকার বিবরণ, অডিট কমিটিসহ বিভিন্ন সাব-কমিটির কাজের বিস্তারিত বিবরণ, পরিচালকদের স্বার্থ ও নৈতিকতা সংশ্লিষ্ট তথ্যাদির বিবরণ ইত্যাদি।

সিঙ্গাপুর, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন উন্নত দেশের কর্পোরেট কালচারের চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, তারা কর্পোরেট গর্ভনেন্স গাইডলাইন বেশ কয়েক দশক ধরেই যথাযথভাবে অনুসরণ করছে এবং তাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এ বিষয়ে খুবই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে।

ফলে এ সকল দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুব দ্রুত ক্রেতার আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয় এবং দ্রুত ব্যবসা সম্প্রসারণও সম্ভব হয়।

তাদের কোম্পানীগুলো এ কারণে দ্রুত দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আর্ন্তজাতিক বিশ্বে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে সক্ষম হয়।

দেশের স্টক মার্কেটের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানসমূহে কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কর্পোরেট গর্ভনেন্স নীতিমালা অনুসরণ করা একান্ত জরুরী। এর প্রয়োগ যত বাড়বে দেশের প্রতিষ্ঠানসমূহ তত বেশী সমৃদ্ধ হবে এবং তা বিনিয়োগকারীসহ সকল পক্ষসমূহের স্বার্থ সংরক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

এ বিষয়ে উদ্যোক্তাদের ইতিবাচক মনোভাব ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসাবে কমিশনের নিয়মিত তদারকী ও গঠণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ সুফল এনে দিতে সক্ষম হবে বলে সকলে প্রত্যাশা করেন।
=> বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

3 comments:

  1. এইটা কোন পেজ ডিজাইন হলো !! পড়তে গেলে নিশ্চত চোখ নষ্ট হবে..

    ReplyDelete
  2. এইটা কোন পেজ ডিজাইন হলো !! পড়তে গেলে নিশ্চত চোখ নষ্ট হবে..

    ReplyDelete
  3. আমাদের সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন কতটুকু সুগঠিত, সদস্যদের মনন-মেধা,দক্ষতা,কার্যকরী,কতটুকু রাজনৈতিক প্রভাব,চাপ মুক্ত বা কমিশন কতটুকু স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেন! তাছাড়া দেশের অন্যান্য ল'গুলোও কর্পোরেট গর্ভানেন্সের সঙ্গে জড়িত। আমাদের দেশের রেগুলেটরি বডির স্বতন্ত্রতা এবং স্বাধনীনতা প্রশ্নবিদ্ধ। তাহলে কীভাবে দেশে ভালো কর্পোরেট গর্ভানেন্স প্রতিষ্ঠিত হব?

    ReplyDelete

Thanks for Comment

Copyright © 2013 MEDIA INFO