‘ঢাকা’ নেই, সাংবিধানিক রাজধানী শূন্যতা


আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘প্রশাসনের কাজ সহজ করার জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। উনারা যেভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন তাতে মনে হয় ঢাকা ভেঙে দু’টুকরো হয়ে গেছে। কই কোথাও কোনো ফাটল তো দেখা যাচ্ছে না।’’
‘উনারা’ মানে বিরোধীরা রাজনৈতিক দলটি প্রচারণা চালাতেই পারে রাজনৈতিক কিংবা জাতীয় ইস্যু নিয়ে। সরকারে থাকা দলও চাইলে পারে। ক্ষমতার রাজনীতিতে এমন প্রচারণা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বটে।
তবে প্রধানমন্ত্রীর রসবোধ বেশ।  সত্যিই আমাদের পায়ের নীচের ঢাকার ভূ-উপরিভাগে কোনো ফাটল তো আমরাও টের পাচ্ছি না!  কিংবা এই বিভক্তির ফলে ঢাকার অনেক শত বছরের ঐতিহ্যের কিছু হেরফের হবে বলে অনেকে যা বলছেন, তার সঙ্গে একমত হবার কোনো কারণও আমি দেখছি না।
বিমূর্তভাবে যে ‘ঢাকার শহর’-এর কথা বলা হয়, সে শহরের ভূমিতে ফাটল নিশ্চয় ধরানো হয়নি আইন করে।  বরং ঢাকায় বিদ্যমান ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) এর বদলে দুটি করপোরেশন করা হচ্ছে।  আর মুশকিলটা এখানেই।
সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে  ‘ঢাকা শহর’ বা ঢাকা সিটি মানে হলো সিটি করপোরেশন আইনে নির্ধারিত একটা এলাকা। এই ‘ঢাকা’ই ছিল সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজধানী।
সংবিধানের ৫ম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে প্রজাতন্ত্রের (বাংলাদেশের) রাজধানী ঢাকা। অপরদিকে ব্যাখ্যামূলক অনুচ্ছেদ ১৫২-তে ঢাকা বলতে অন্য কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি, বরং রাজধানী বলতে ৫ম অনুচ্ছেদে বর্ণিত ঢাকাকেই বোঝানো হয়েছে।
আগের ঢাকা সিটি করপোরেশন আইনে নির্ধারিত এলাকাই ছিল ‘ঢাকা’ সিটি।  আর এখন আইনটি সংশোধন করে সাবেক ঢাকা সিটির বদলে দুটি সিটি করা হয়েছে। ঢাকা সিটি বলে আইনত কিছু আর নেই। আছে ঢাকা উত্তর সিটি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি। তবে যে বাংলাদেশের রাজধানী রইলো ঢাকায়! সেই ঢাকা কই?
এ এক বিশাল সাংবিধানিক ও আইনগত মুশকিল। প্রধানমন্ত্রীর কথা সরল বিশ্বাসে কবুল করে নিচ্ছি। নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর জন্যই এই দুটি সিটি করা হয়েছে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বাড়তি নাগরিক সুবিধা না হয় হবে আশা করি। কিন্তু এ সাংবিধানিকভাবে এ রাজধানীশূন্যতা কি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অপরিপক্বতা ও আমাদের জাতীয় রাজনীতির অক্ষমতা প্রকাশ করে না?
যে কারণেই হোক, সরকার মনে করেছেন ঢাকা বিলুপ্ত করে দুটি সিটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটা দেশের জন্য কি উপকার বা অপকার বয়ে আনবে সে বিবেচনা আলাদাভাবে করা যেতে পারে। কিন্তু এমন একটা ঐতিহাসিক ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সাংবিধানিক ইস্যুটা ভাবা কি জরুরি ছিল না?
এখন হয় উত্তর কিংবা দক্ষিণ ঢাকায় রাজধানী স্থাপনের বিধান করে সংবিধান সংশোধন করে, নয়তো এ আইনের এ সংশোধন বাতিল করে আবার ঢাকা ফিরিয়ে এনেই কেবল এই মুশকিলের আসান হতে পারে।
অবিভক্ত ঢাকার সর্বশেষ মেয়র সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করেছেন, সাবেক ঢাকা সিটির এলাকায় দুটি সিটি করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে।  ফলে উচ্চ আদালত নিশ্চয় এ বিষয়ে তার বিজ্ঞ মতামত দিতে যাচ্ছেন। তখন হয়তো আরো পরিস্কার হবে সাংবিধানিক এ মুশকিলের বিষয়টি।
খন্দকার এরশাদুল বারী

0 comments:

Thanks for Comment

Copyright © 2013 MEDIA INFO