আমিন আমিন ধ্বনিতে প্রকম্পিত টঙ্গী

বিশ্ব ইজতেমা ময়দান, টঙ্গী থেকে: বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত শেষ হয়েছে। বেলা ১২টা ৩৩ মিনিটে শুরু হয়। শেষ হয় ১২টা ৫৩ মিনিটে। ২০ মিনিট স্থায়ী মোনাজাতে লাখ লাখ মুসল্লির ‘আমিন আমিন’ ধ্বনিতে পুরো টঙ্গী মুখরিত হয়ে ওঠে।


মোনাজাত পরিচালনাকারী ভারতের মাওলানা জোবায়রুল হাসান দোয়া করলেন বিশ্ব মুসলিমের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের জন্যও দোয়া করা হলো। আর এই আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়েই শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব শুরু হবে আগামী ২০ জানুয়ারি। শেষ হবে ২২ জানুয়ারি।


বিশ্বের ৯৫টি দেশের প্রায় ১০ হাজার বিদেশি মেহমানসহ প্রায় কয়েক লাখ মানুষ এই আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। কয়েকটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন সরাসরি আখেরি মোনাজাত সম্প্রচার করার ফলে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ মুনাজাতে শরিক হতে পেরেছেন।


রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও বিদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তা, বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তি ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এই আখেরি মোনাজাতে শরিক হন।


হেদায়তি বয়ান
এদিন সকাল নয়টা থেকে মোনাজাতের আগে চলে হেদায়তি বয়ান। হেদায়তি বয়ান করেন ভারতের মাওলানা সাদ। বয়ানে তিনি বলেন, আল্লাহর গজবের বড় স্থান হচ্ছে জাহান্নাম। তিনি আল্লাহর রাস্তায় (তাবলিগে) দাওয়াতি কাজে পায়ে হেঁটে মানুষের কাছে দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ পায়ে হেঁটে বেশি মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া সম্ভব। এতে পায়ে যে ধূলাবালি লাগবে তা জাহান্নামের আগুনকে ঠাণ্ডা করে দেয়। তিনি তাবলিগের দাওয়াতি কাজে গিয়ে মানুষের কাছে ইহজগতের জন্য সওয়াল করতে বারণ করে বলেন, যে জামায়াত সওয়াল করে আল্লাহর সাহায্যের দরজা তাদের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। সওয়াল করলে দিলে শয়তান স্থান পায়। দাওয়াতি কাজে সবচেয়ে বড় কাজ হলো নিজের নিয়তকে সহি করা এবং অন্যের কাছে সওয়াল না করা।


মোনাজাতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে যানজট এড়াতে গণভবনে বসে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।


রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ইজতেমার দোয়া মঞ্চে পৌঁছেন ১২টা ২০ মিনিটে, আর বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া অ্যাটলাস হোন্ডা কারখানা ভবনে বিশেষ মঞ্চে মোনাজাতে অংশ নিতে উপস্থিত হন ১২টা ১৫ মিনিটে।


আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে রোববার ভোর থেকেই টঙ্গীর ইজতেমা অভিমুখে শুরু হয় মানুষের ঢল। টঙ্গীর পথে শনিবার মধ্যরাত থেকেই ঢাকা-ময়মনসিং মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মোনাজাতে অংশ নিতে চার দিক থেকে লাখ লাখ মুসল্লি পায়ে হেঁটেই ইজতেমাস্থলে পৌঁছেন। সকাল ১০টার আগেই ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলিগলিতে অবস্থান নেন। ইজতেমা স্থলে পৌঁছাতে না পেরে কয়েক লাখ মানুষ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মোনাজাতের জন্য পুরানা খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন বিছিয়ে বসে পড়েন।


এছাড়াও পার্শ্ববর্তী বাড়ি-কলকারখানা-অফিস-দোকানের ছাদে, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায় মুসল্লিরা অবস্থান নেন। যে দিকেই চোখ যায় সেদিকেই দেখা যায় শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পড়া মানুষ। সবাই অপেক্ষায় আছেন কখন শুরু হবে সেই কাঙ্ক্ষিত আখেরি মোনাজাত। ইজতেমা স্থলের চারপাশের ৩-৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।


আখেরি মোনাজাতের জন্য রোববার আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানাসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে ছিল ছুটি। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা না করলেও কর্মকর্তাদের মোনাজাতে অংশ নিতে বাধা ছিল না। নানা বয়সী ও পেশার মানুষ এমনকি নারীরাও ভিড় ঠেলে মোনাজাতে অংশ নিতে রোববার সকালেই টঙ্গী এলাকায় পৌঁছান।


মোবাইল ফোনে মোনাজাত
ইজতেমা স্থলে যেতে পরিবহন সংকট ও ভিড় এড়াতে গাজীপুরের কয়েকটি স্থানে এলাকাবাসি মোবাইল ফোনে মোনাজাতে অংশ নেয় বলে জানা গেছে। ইজতেমার মূল মাঠ থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর সদরের চান্দনা চৌরাস্তা ঈদগাহ ময়দানে কয়েক হাজার মুসল্লি জমায়েত হন। পরে তারা মোবাইল ও পুলিশের ওয়াকিটকির মাধ্যমে ইজতেমা স্থলে যোগাযোগ রক্ষা করে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে শরিক হয়েছেন। একইভাবে জেলার ভোগড়া, বাসন সড়ক ও শিমুলতলী এলাকায় মোবাইল মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।


মোনাজাত শেষে যানজট ও মানবজট
আখেরি মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেওয়া মানুষ একযোগে নিজ নিজ গন্তব্যে ফেরার চেষ্টা করেন। মুসল্লিরা শুরু করে দেয় হুড়োহুড়ি এবং আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। এতে টঙ্গীর আশপাশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় যান ও মানুষের জট। ফলে আবারও পায়ে হেঁটে রওনা দেয় মুসল্লিরা। আর পায়ে হাঁটা মুসল্লিদের চাপে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মুসল্লিদের যানবাহন রোববার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত থেমে থাকবে।


হাজারো পরিত্যক্ত জুতা
আখেরি মোনাজাত শেষে হুড়োহুড়ি করে বের হতে গিয়ে জুতা-স্যান্ডেল ফেলেই মাঠ ত্যাগ করেন মুসল্লিরা। আশপাশের সড়ক-মহাসড়কে কয়েক হাজার জুতা-স্যান্ডেল পড়ে থাকতে দেখা গেছে।


বিশ্ব ইজতেমা: কাকলী মোড়ে ডিএমপি ট্রাফিকের ব্যারিকেড
বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তায় হেলিকপ্টার ও নৌ-টহল
আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে জনস্রোত
ইজতেমায় তিন মৃত্যু, ১০৪ বিয়ে
রোববার আখেরি মোনাজাত
আখেরি মোনাজাতে নারীদের অংশগ্রহণ
আমিন, ছুম্মা আমিন

0 comments:

Thanks for Comment

Copyright © 2013 MEDIA INFO