বিয়ের প্রস্তাব করণীয় ও বর্জনীয়

লেখার শিরোনাম দেখেই অনেকে চমকে উঠতে পারেন। না আসলে চমকাবার কিছু নেই। সবার জীবনেই আসে বিয়ের ঘটনা। আর বিয়ের আগে আসে কনে দেখার পর্ব। ইসলাম শুধু নামায-রোযার নয়; ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। তাই এখানে সালাত-সিয়ামের সঙ্গে সঙ্গে বিয়ে-শাদীর আমলও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল মসজিদে আমরা মুসলিম পরিচয় বজায় রাখি; কিন্তু বিয়ে-শাদীতে কেন যেন ইসলাম পরিপন্থী কাজই বেশি করি। বিয়ে-শাদীর আগে যেহেতু কনে দেখার পর্ব তাই আগে বিয়ের প্রস্তাব বা কনে দেখা সংক্রান্ত ইসলামী নির্দেশনাগুলো আগে তুলে ধরার প্রয়াস পাচ্ছি এ নিবন্ধে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।


শরীয়তে বিবাহ বলতে কী বুঝায় :


নারী-পুরুষ একে অপর থেকে উপকৃত হওয়া এবং আদর্শ পরিবার ও নিরাপদ সমাজ গড়ার উদ্দেশ্যে পরস্পর চুক্তিবদ্ধ হওয়া। এ সংজ্ঞা থেকে আমরা অনুধাবন করতে পারি, বিবাহের উদ্দেশ্য কেবল ভোগ নয়; বরং এর সঙ্গে আদর্শ পরিবার ও আলোকিত সমাজ গড়ার অভিপ্রায়ও জড়িত।


বিবাহের তাৎপর্য :


বিবাহ একটি বৈধ ও প্রশংসনীয় কাজ। প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির ক্ষেত্রেই এর যার গুরুত্ব অপরিসীম। বিয়ে করা নবী-রাসূলদের (আলাইহুমুস সালাম) সুন্নাত। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,


وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً


‘আর অবশ্যই তোমার পূর্বে আমি রাসূলদের প্রেরণ করেছি এবং তাদেরকে দিয়েছি স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি।’


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে বিবাহ করেছেন এবং এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে বলেছেন,


أَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي.


‘আমি নারীকে বিবাহ করি। (তাই বিবাহ আমার সুন্নত) অতএব যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’


এ জন্যই আলিমগণ বলেছেন, সাগ্রহে বিবাহ করা নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। কারণ, এর মধ্য দিয়ে অনেক মহৎ গুণের বিকাশ ঘটে এবং অবর্ণনীয় কল্যাণ প্রকাশ পায়।
কারও কারও ক্ষেত্রে বিবাহ করা ওয়াজিব হয়ে পড়ে। যেমন : যদি কেউ বিবাহ না করলে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করে। তখন নিজেকে পবিত্র রাখতে এবং হারাম কাজ থেকে বাঁচতে তার জন্য বিয়ে করা ওয়াজিব হয়ে দাঁড়ায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,


يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاء.


‘হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা তা চক্ষুকে অবনত করে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। আর যে এর সামর্থ্য রাখে না, তার কর্তব্য রোযা রাখা। কেননা তা যৌন উত্তেজনার প্রশমন ঘটায়।’


বিয়ের প্রস্তাব এবং তার নিয়ম :


কেউ যখন কোনো নারীকে বিবাহ করতে আগ্রহী হয় তার জন্য সমীচীন হলো ওই মেয়ের অভিভাবকের মাধ্যমে তাকে পেতে চেষ্টা করা। আর এর জন্য রয়েছে কিছু মুস্তাহাব ও ওয়াজিব কাজ, যা উভয়পক্ষের আমলে নেওয়া উচিত :


১. শরীয়তে বিয়ের প্রস্তাব কী বুঝায় :


এমন ব্যক্তির পক্ষ থেকে বিয়ে করতে চাওয়া যার কাছ থেকে এমন প্রস্তাব গ্রহণ হতে পারে। এটি বিবাহ পর্ব সূচনাকারীদের প্রাথমিক চুক্তি। এটি বিবাহের ওয়াদা এবং বিবাহের প্রথম পদক্ষেপ।


২. ইস্তিখারা করা :


মুসলিম নর-নারীর জীবনে বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই যখন তারা বিবাহের সিদ্ধান্ত নেবেন তাদের জন্য কর্তব্য হলো ইস্তিখারা তথা আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করা। জাবির রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,


عَنْ جَابِرٍ- رَضِيَ اللهُ عَنْهُ- قَالَ كَانَ النَّبِيُّ- صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ- يُعَلِّمُنَا الْاِسْتِخَارَةَ فِي الْأُمُوْرِ كُلِّهَا، كَالسُّوْرَةِ مِنَ الْقُرْآنِ : (إِذَا هَمَّ أَحَدُكُمْ بِالْأَمْرِ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ مِنْ غَيْرِ الْفَرِيْضَةِ، ثُمَّ يَقُوْلُ : اللّهُمَّ إنِّيْ أسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ، وَ أسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَ أسْألُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيْمِ، فَإنَّكَ تَقْدِرُ وَ لآ أقْدِرُ، وَ تَعْلَمُ وَ لآ أعْلَمُ، وَ أنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوْبِ، اللّهُمَّ إنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أنَّ هذَا الْأمْرَ خَيْرٌ لِّيْ فِيْ دِيْنِيْ وَ مَعَاشِيْ وَ عَاقِبَةِ أمْرِيْ- أوْ قَالَ: فِيْ عَاجِلِ أمْرِيْ وَآجِلِه- فَاقْدُرْهُ لِيْ، وَ إنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أنَّ هذَا الْأمْرَ شَرٌّ لِّيْ فِيْ دِيْنِيْ وَ مَعَاشِيْ وَ عَاقِبَةِ أمْرِيْ- أوْ قَالَ: فِيْ عَاجِلِ أمْرِيْ وَ آجِلِه- فَاصْرِفْهُ عَنِّيْ وَ اصْرِفْنِيْ عَنْهُ، وَ اقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ رَضِّنِيْ بِه. ( وَ يُسَمِّيْ حَاجَتَه.)


‘যখন তোমাদের কেউ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চায় সে যেন দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ে অতপর বলে :


اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ ، وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ ، وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي ، أَوْ قَالَ عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ – فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي ، أَوْ قَالَ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ – فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِي الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي.
‌‘হে আল্লাহ, আমি আপনার ইলমের মাধ্যমে আপনার নিকট কল্যাণ কামনা করছি। আপনার কুদরতের মাধ্যমে আপনার নিকট শক্তি কামনা করছি এবং আপনার মহা অনুগ্রহ কামনা করছি।‌ কেননা আপনি শক্তিধর, আমি শক্তিহীন, আপনি জ্ঞানবান, আমি জ্ঞানহীন এবং আপনি অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানী। হে আল্লাহ, এই কাজটি (এখানে উদ্দিষ্ট কাজ বা বিষয়টি উল্লেখ করবেন) আপনার জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার দীন, আমার জীবিকা এবং আমার পরিণতির ক্ষেত্রে অথবা ইহলোক ও পরলোকে কল্যাণকর হয়, তবে তাতে আমাকে সামর্থ্য দিন। পক্ষান্তরে এই কাজটি আপনার জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার দীন, জীবিকা ও পরিণতির দিক দিয়ে অথবা ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিকর হয়, তবে আপনি তা আমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং আমাকেও তা থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং কল্যাণ যেখানেই থাকুক, আমার জন্য তা নির্ধারিত করে দিন। অত:পর তাতেই আমাকে পরিতুষ্ট রাখুন।


৩. পরামর্শ করা :


বিবাহ করতে চাইলে আরেকটি করণীয় হলো বিয়ে ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ, পাত্রী ও তার পরিবার সম্পর্কে ভালো জানাশুনা রয়েছে এমন ব্যক্তির সঙ্গে পরামর্শ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের সঙ্গে অধিক পরিমাণে পরামর্শ করতেন। আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,


مَا رَأَيْتُ أَحَدًا أَكْثَرَ مَشُورَةً لأَصْحَابِهِ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.


‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে অন্য কাউকে আপন সাথীদের সঙ্গে বেশি পরামর্শ করতে দেখি নি।’
হাসান বসরী রহ. বলেন,


ثلاثة فرجل رجل ورجل نصف رجل ورجل لا رجل فأما الرجل الرجل فذو الرأي والمشورة وأما الرجل الذي هو نصف رجل فالذي له رأي ولا يشاور وأما الرجل الذي ليس برجل فالذي ليس له رأي ولا يشاور


‘মানুষের মধ্যে তিন ধরনের ব্যক্তিত্ব রয়েছে : কিছু ব্যক্তি পূর্ণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, কিছু ব্যক্তি অর্ধেক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং কিছু ব্যক্তি একেবারে ব্যক্তিত্বহীন। পূর্ণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তি সেই, যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং পরামর্শও করেন। অর্ধেক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সেই, যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তবে পরামর্শ করেন না। আর ব্যক্তিত্বহীন ব্যক্তি তিনিই, যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না আবার কারো সঙ্গে পরামর্শও করেন না।’
এদিকে পরামর্শদাতার কর্তব্য বিশ্বস্ততা রক্ষা করা। তিনি যেমন তার জানা কোনো দোষ লুকাবেন না, তেমনি অসদুদ্দেশে আদতে নেই এমন কোনো দোষের কথা বানিয়েও বলবেন না। আর অবশ্যই এ পরামর্শের কথা কাউকে বলবেন না।


৪. পাত্রী দেখা :


জাবের ইবন আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ الْمَرْأَةَ فَقَدَرَ عَلَى أَنْ يَرَى مِنْهَا مَا يُعْجِبُهُ وَيَدْعُوهُ إِلَيْهَا فَلْيَفْعَلْ. قَالَ جَابِرٌ : فَلَقَدْ خَطَبْتُ امْرَأَةً مِنْ بَنِى سَلِمَةَ فَكُنْتُ أَتَخَبَّأُ فِى أُصُولِ النَّخْلِ حَتَّى رَأَيْتُ مِنْهَا بَعْضَ مَا أَعْجَبَنِى فَتَزَوَّجْتُهَا.


‘তোমাদের কেউ যখন নারীকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, অতপর তার পক্ষে যদি ওই নারীর এতটুকু সৌন্দর্য দেখা সম্ভব হয়, যা তাকে মুগ্ধ করে এবং মেয়েটিকে (বিবাহ করতে) উদ্বুদ্ধ করে, সে যেন তা দেখে নেয়।’
অপর এক হাদীসে রয়েছে, আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,


كُنْتُ عِنْدَ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فَأَتَاهُ رَجُلٌ فَأَخْبَرَهُ أَنَّهُ تَزَوَّجَ امْرَأَةً مِنَ الأَنْصَارِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « أَنَظَرْتَ إِلَيْهَا ». قَالَ لاَ. قَالَ « فَاذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا فَإِنَّفِى أَعْيُنِ الأَنْصَارِ شَيْئًا ».


‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ছিলাম। এমতাবস্থায় তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে জানাল যে সে একজন আনসারী মেয়েকে বিয়ে করেছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি তাকে দেখেছো?’ সে বললো, না। তিনি বললেন, যাও, তুমি গিয়ে তাকে দেখে নাও। কারণ আনসারীদের চোখে (সমস্যা) কিছু একটা রয়েছে’।’
ইমাম নববী রহ. বলেন, ‘এ হাদীস থেকে জানা যায়, যাকে বিবাহ করতে ইচ্ছুক তাকে দেখে নেয়া মুস্তাহাব।’


৫. ছবি বা ফটো বিনিময় :


নারী-পুরুষ কারো জন্য কোনোভাবে কোনো ছবি বা ফটো বিনিময় বৈধ নয়। কারণ, প্রথমত. এ ছবি অন্যরাও দেখার সম্ভাবনা রয়েছে, যাদের জন্য তা দেখার অনুমতি নেই। দ্বিতীয়ত. ছবি কখনো পূর্ণ সত্য তুলে ধরে না। প্রায়শই এমন দেখা যায়, কাউকে ছবিতে দেখে বাস্তবে দেখলে মনে হয় তিনি একেবারে ভিন্ন কেউ। তৃতীয়ত. কখনো এমন হতে পারে যে প্রস্তাব ফিরিয়ে নেয়া হয় বা প্রত্যাখ্যাত হয় অথচ ছবি সেখানে রয়েই যায়। ছবিটিকে তারা যাচ্ছে তাই করতে পারে।


৬. বিবাহের আগে প্রস্তাবদানকারীর সঙ্গে বাইরে বের হওয়া বা নির্জনে অবস্থান করা :


বিয়ের আগে প্রস্তাব দেয়া নারীর সঙ্গে নির্জন অবস্থান বা তার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া বৈধ নয়। কেননা, এখনো সে বেগানা নারীই রয়েছে। পরিতাপের বিষয়, আজ অনেক মুসলমানই তার মেয়েকে লাগামহীন ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে তারা প্রস্তাবদানকারী পুরুষের সঙ্গে ঘরের বাইরে যায়! উপরন্তু তার সঙ্গে সফরও করে! ভাবখানা এমন যে মেয়েটি যেন তার স্ত্রী হয়ে গেছে।


৭. বর-কনের পারস্পরিক যোগাযোগ করা :


প্রস্তাব দেয়া নারীর সঙ্গে ফোন বা মোবাইলে এবং চিঠি ও মেইলের মাধ্যমে শুধু বিবাহের চুক্তি ও শর্তাদি বোঝাপড়ার জন্য যোগাযোগের অনুমতি রয়েছে। তবে এ যোগাযোগ হতে হবে ভাব ও আবেগবিবর্জিত ভাষায়, যা একজন বেগানা নারী-পুরুষের জন্য বৈধ ভাবা হয় না। আর বলাবাহুল্য, বিবাহের প্রস্তাব প্রেরণকারী কনের কেউ নন, যাবৎ না তারা বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। উল্লেখ্য, এ যোগাযোগ উভয়ের পিতার সম্মতিতে হওয়া শ্রেয়।


৮. একজনের প্রস্তাবের ওপর অন্যজনের প্রস্তাব না দেয়া :


যে নারীর কোথাও বিয়ের কথাবার্তা চলছে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া বৈধ নয়। আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,


لاَ يَخْطُبُ الرَّجُلُ عَلَى خِطْبَةِ أَخِيهِ حَتَّى يَنْكِحَ ، أَوْ يَتْرُكَ.


‘কেউ তার ভাইয়ের প্রস্তাবের ওপর যেন প্রস্তাব না দেয়, যাবৎ না সে তাকে বিবাহ করে অথবা প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয়।’
হ্যা, দ্বিতীয় প্রস্তাবদাতা যদি প্রথম প্রস্তাবদাতার কথা না জানেন তবে তা বৈধ। এ ক্ষেত্রে ওই নারী যদি প্রথমজনকে কথা না দিয়ে থাকেন তবে দু’জনের মধ্যে যে কাউকে গ্রহণ করতে পারবেন।


৯. ইদ্দতে থাকা নারীকে প্রস্তাব দেয়া :


বায়ান তালাক বা স্বামীর মৃত্যুতে ইদ্দত পালনকারী নারীকে সুস্পষ্ট প্রস্তাব দেয়া হারাম। ইঙ্গিতে প্রস্তাব দেয়া বৈধ। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,


وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا عَرَّضْتُمْ بِهِ مِنْ خِطْبَةِ النِّسَاءِ


‘আর এতে তোমাদের কোন পাপ নেই যে, তোমরা নারীদেরকে ইশারায় যে প্রস্তাব করবে।’
তবে ‘রজঈ’ তালাকপ্রাপ্তা নারীকে সুস্পষ্টভাবে তো দূরের কথা আকার-ইঙ্গিতে প্রস্তাব দেয়াও হারাম। তেমনি এ নারীর পক্ষে তালাকদাতা ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও প্রস্তাবে সাড়া দেয়াও হারাম। কেননা এখনো সে তার স্ত্রী হিসেবেই রয়েছে।
(সুস্পষ্ট প্রস্তাব : যেমন এ কথা বলা, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। অস্পষ্ট প্রস্তাব : যেমন এ কথা বলা, আমি তোমার মতো মেয়েই খুঁজছি ইত্যাদি বাক্য।)


১০. এ্যাংগেজমেন্ট করা :


ইদানীং পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুকরণে বিয়েতে এ্যাংগেজমেন্ট করার রেওয়াজ ব্যাপকতা পেয়েছে। এই আংটি পরানোতে যদি এমন ধরে নেওয়া হয় যে এর মাধ্যমে বিবাহের কথা পাকাপোক্ত হয়ে গেল তবে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম। কেননা, মুসলিম সমাজ বা শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। আরও নিন্দনীয় ব্যাপার হলো, এ আংটি প্রস্তাবদানকারী পুরুষ নিজ হাতে কনেকে পরিয়ে দেয়। কারণ, এ পুরুষ এখনো তার জন্য বেগানা। এখনো সে মেয়েটির স্বামী হয়নি। কেননা, কেবল বিবাহ চুক্তি সম্পাদিত হবার পরেই তারা স্বামী-স্ত্রী বলে গণ্য হবেন।


১১. উপযুক্ত পাত্রের প্রস্তাব প্রত্যাখান করা :


উপযুক্ত পাত্র পেলে তার প্রস্তাব নাকচ করা উচিত নয়। আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


إِذَا خَطَبَ إِلَيْكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوهُ إِلاَّ تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِى الأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ.


‘যদি এমন কেউ তোমাদের বিয়ের প্রস্তাব দেয় যার ধার্মিকতা ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট তবে তোমরা তার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেবে। যদি তা না করো তবে পৃথিবীতে ব্যাপক অরাজতা সৃষ্টি হবে।’


প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, আজ আমাদের ভেবে দেখা দরকার, ইসলামের আদর্শ কোথায় আর আমরা কোথায়। ইসলাম কী বলে আর আমরা কী করি। আমরা কি অস্বীকার করতে পারি যে, এসব আদর্শ আজ আমাদের আমলের বাইরে চলে গেছে। আমাদের যাপিত জীবনে ইসলামের বিমল রঙ ফিকে হয়ে এসেছে। সত্যি কথা বলতে গেলে, আমরা বরং বর্জনীয় কাজগুলো করি আর করণীয়গুলো ভুলে থাকি। আল্লাহ মাফ করুন। এ কারণেই আমাদের বিয়ে-শাদীতে বরকত নেই। বিবাহিত জীবনে সুখ নেই। দাম্পত্য জীবনের সুখ আজ সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। প্রকৃত সুখের পরশ পেতে হলে, সুখ পাখির আগুন ডানা ছুঁতে হলে আজ আমাদের তাই ইসলামের কাছেই ফিরে আসতে হবে। ইসলামের আদর্শকেই আকড়ে ধরতে হবে। শুধু কনে দেখা আর বিয়ে-শাদীতেই নয়; জীবনের প্রতিটি কর্মে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। মুখে নয়; কাজে পরিণত করতে হবে তাঁর উম্মত দাবী। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে তাঁর যাবতীয় আদেশ এবং তাঁর রাসূলের সকল আদর্শ মেনে চলার তাওফীক দিন। আমীন।

0 comments:

Thanks for Comment

তলপেটে ঘন মেদ যেসব খাদ্যের কারণে

তলপেটে মেদবর্ধক খাদ্য
ডোনাট : চকচকে ডোনাট। বৃত্তাকার এই স্বাদুখাদ্য একটিতে আছে ২৬০ ক্যালোরি। একটু চেখে দেখলেন, স্বাদ নিলেন মাত্র, তাতে ক্ষতি নেই, কিন্তু অনেকে এক বাক্স খেয়ে ফেলেন, একডজন ডোনাট: ৩১২০ ক্যালোরি।
একজন ২০০ পাউন্ড ওজনওলা লোককে সে পরিমাণ ক্যালরি পুড়াতে দৌড়াতে হবে একনাগাড়ে ২৫ মাইল।
আইসক্রিম : একটি ফিটনেস ম্যাগাজিন সমীক্ষায় পুরুষদের জিজ্ঞাসা করা হলো, জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলো মাত্র একটি স্ন্যাক খেতে বললে কোন্টি পছন্দ করবেন? পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল আইসক্রিম। সামান্য প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম, পছন্দ মন্দ নয়। কিন্তু কেন? কিন্তু অর্ধেক কাপ ভ্যানিলা আইসক্রিম থেকে আসে ২৩০ ক্যালরি। আরও কম ক্যালোরি ‘ঝষড়ি ঈযঁৎহবফ াধৎরবঃু’ আছে, তা থেকে ১০০ ক্যালরি বা খাওয়া যাবে কদাচিৎ, ভাল লাগার জন্য।
চিপস্্ : ফিটন্যাস সমীক্ষায় পুরুষদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে চিপস্। চিপস্ ছাড়তে কেউ রাজি না। ১৫টি চিপস্ খেলে পাওয়া যাবে ১৬০ ক্যালোরি এবং চিপস্ একটি বড় ব্যাগে আনমনে খেয়ে ফেলা অসম্ভব নয় মোটেও। দুই টেবিল চামচ ফ্রেঞ্চ ওনিয়ন ডিপ্ যোগ করলে আরও ৬০ ক্যালোরি এবং ৫ গ্রাম চর্বি আসবে। এর চেয়ে বরং মেদমুক্ত পপকর্ন খান। ছয় কাপ পপকর্নে রয়েছে মাত্র ১০০ ক্যালরি।
মদ্যপান : এতেও তলপেটে মেদ জমে। মদ্যপান বর্জন করা ভাল। লঘুপান বলে কথা নেই, বর্জন করা উচিত মদ্য। অনেকে বিয়ার পান করেন লঘুমদ হিসেবে। গড়ে ১২ আউন্স বিয়ার থেকে আসে ১৫০ ক্যালরি। তলপেটে মেদ জমবে ক্রমশ ক্রমে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সারের ঝুঁকি। তাই মদ্যপান করে থাকলে বর্জন।
হটডগস্ : অবসরে, খেলার মাঠে অনেকে খান হটডগস্। একটি চিজ্ডনে আছে ৩০০ ক্যালোরি এবং ৮ গ্রাম সম্পৃক্ত চর্বি। এর বদলে পীনাট। প্রোটিন, আঁশ ও হিতকর চর্বিতে ভরপুর এই মজাদার স্ন্যাকস্্।
চর্বিবহুল রেড মিট : অনেকে রেডমিট বেশ ভালবাসেন। যারা রেজালা, বিরিয়ানির ভক্ত তাদের তলপেটে মেদ জমবেই। ১৬ আউন্স পাঁজরের গোস্তে আছে ১০০০ ক্যালোরি ও ৩৭ গ্রাম সম্পৃক্ত চর্বি এবং এর পরিবর্তে মোরগের কচি মাংস খেলে হয়। মোরগের ঝোল।
পিৎজা হলো চর্বিতে ভরপুর ক্যালোরিতে, না খেলে হয় না? খেলেও কালেভদ্রে?
বিশাল বার্গার : ফাস্টফুড চেনশপগুলো বিশাল বিশাল বার্গার তৈরিতে যেন মনোনিবেশ করেছে। ওয়েন্ডির সর্বশেষ হলো বেকোনেটার ডবল-৮৩০ ক্যালরি ও ৬৮ গ্রাম চর্বি। ম্যাকডোনাল্ডের এনগাস ব্যাকন ও চিজ্্ প্যাকস্্ ৭৮০ ক্যালোরি ও ৩৯ গ্রাম চর্বি। বার্ণার কিং ট্রিপল হুপার- ১১৪০ ক্যালোরি এবং ৭৫ গ্রাম চর্বি। খেতেই যদি হয় তাহলে সিংগল গ্রিলড্্ বার্গার, কচি মাংস দ্বারা প্রস্তুত। তাও খেতে হবে কদাচিৎ, নিয়মিত নয়।
সুপার সাইজ ফ্রাই : একটি বড় ফ্রাই প্যাকেটে প্রচুর ক্যালোরি, বার্গারের চেয়ে কম নয়। দুর্ভাগ্যবশত অন্যান্য সব্জি ভাজার চেয়ে ফ্রাইপটেটোতে ক্যালোরি বেশি কিন্তু পুষ্টি বেশ কম। পরিবর্তে নিন/সাইড স্যালাড বা ফ্রুট কাপ।
ক্যাফিনযুক্ত সোডা : অস্বীকার অবশ্য করা যাবে না সোডা ক্যাফিন মিশ্রিত হলে একটি নিরানন্দ মিটিং বা বিরক্তিকর লেকচারের আগে বড় একটি উত্তোলক বা চরপশঁঢ় হতে পারে তা। তবে মাঝে মাঝে এরকম পান করলে ক্যালোরি গ্রহণ হবে বিস্তর, ২০ আউন্স বোতলে আছে ২৫০ ক্যালোরি। পরিবর্তে এক কাপ ব্ল্যাক কফি। ২০ আউন্স কাপ বেশ উত্তোলক, ক্যালরিহীন। দুধ যোগ করলে, চর্বিহীন দুধ- ১০০ ক্যালোরি।
বার্বিকিউ মাংস স্যান্ডউইচ, ৬১০ ক্যালোরি পর্যন্ত হতে পারে। কচি মাংস স্যান্ডউইচের বদলে।
ফ্রোজেন ডিনারেও প্রচুর ক্যালোরি : যে বুফেতে ইচ্ছেমতো খাওয়া যায় সেখানেও আহরণ করা যায় প্রচুর ক্যালোরি ও চর্বি।
দধি খেলে তলপেটে মেদ কমে : কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে।
আরেকটি হলো ব্লুবেরি : অবশ্য সব ধরনের ফলাহারেও মেদ কমে।
আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেলে তলপেটে মেদ কমে : দ্রবণীয় আঁশ কেন সুফল দেয়। অন্তত ১০ গ্রাম দিনে। দুটো ছোট আপেল, এক কাপ মটরশুঁটি, আধা কাপ গ্রীনস্।
আর ব্যায়াম : তলপেটের মেদ ঝরাবার জন্য।

0 comments:

Thanks for Comment

নিজের যত্ন নিন সুস্থ থাকুন

জীবনকে নয়, নিয়ন্ত্রণ করুন জীবন যাপনকে। জীবনের আনন্দকে নয়, বাঁচাতে শিখুন জীবনের ছন্দ-হীনতা বা বিশৃঙ্খলাকে। করোনারি হূদরোগ মহামারীর মুখোমুখি দাড়িয়ে স্বাস্থ্য সচেতন জীবন যাপন ছাড়া অন্য কোনভাবেই জোরদার লড়াই শুরু করা যাবে না হূদরোগ মহামারীর শক্তিমান দানবের সঙ্গে। লড়াইটা শুরু হোক করোনারি হূদরোগ নিয়ে বিজ্ঞান সম্মত চেতনার আলোয়, জীবনযাপনের শৃঙ্খলার অস্ত্রে। জীবনে অসুখ বিসুখ আছে এবং থাকবেই, একে মোকাবেলা করার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত, ধর্মীয় অনুভূতির ভিত্তিতে নিস্কলুষ জীবন যাপন করা উচিত।


সুস্থভাবে বেশিদিন বাঁচর জন্য কিছু পরামর্শ হল:


০০ অধিক রাত জাগবেন না। রাত জাগলে অনেক সময় আমাদের ক্ষুধা পায় এবং এই অধিক রাতের বাড়তি খাবারই আমাদের মুটিয়ে দিতে পারে। এমনকি তার পরিমাণ সামান্য হলেও।


০০ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠুন। নামাজ বা ধর্মীয় আচার আচরণ শেষ করে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন বা শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী বা ডাক্তারের নির্দেশ মোতাবেক অন্য কোন ব্যায়াম করুন। সকালে নির্মল বায়ুতে প্রচুর অক্সিজেন থাকে যা আপনাকে সজীব রাখতে সাহায্য করবে সারাদিন।


০০ বয়স ৪০ এর বেশি হলে কোন সমস্যা না থাকলেও একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন। সম্ভব হলে ডায়াবেটিশিয়ানের পরামর্শ মোতাবেক সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন। ওজন স্বাভাবিক রাখুন, যদি আপনার ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে তবে ওজন কমালে রক্তচাপ, রক্তের কোলেস্টেরল ও ট্রাইগিস্নসারাইড এর মাত্রা কমে। সপ্তাহে অন্তত একদিন দৈহিক ওজন মেপে দেখা উচিত।


০০ চর্বি ও কোলেস্টেল জাতীয় খাবার এড়িয়ে প্রচুর পরিমাণ শাক সবজি, অাঁশযুক্ত ফলমূল খাবেন। এতে চর্বি কমে আসবে। রান্নায় কম তেল ব্যবহার করবেন।


০০ কাঁচা রসুন বা রান্না রসুনের ব্যবহার বাড়িযে দিন। প্রতিদিন খাদ্যে রসুন থাকলে রক্তের কোলেস্টেরল ও এলডিএল কোলেস্টেরল (ক্ষতিকর কোলেস্টেরল) এর পরিমাণ হ্রাস করে। সম্প্রতি গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, রসুন খাদ্যের বিষক্রিয়া প্রতিরোধ করে।


০০ তেঁতুল খেলে রক্তের কোলেস্টেরল কমে। প্রতি কেজি শরীরের ওজনের জন্য ৫ গ্রাম হিসাব করে প্রতিদিন তেঁতুলের শরবত খেলে ২ সপ্তাহের মধ্যে রক্তে চর্বির পরিমাণ হ্রাস পাবে, সাথে সাথে হূদরোগের ঝুঁকিও অনেকটা কমবে। খাবার সময় আলাদা (টেবিল সল্ট) লবণ খাবেন না। এর সঙ্গে উচ্চরক্তচাপ, ওজন বৃদ্ধি ও হূদরোগের সম্পর্ক রয়েছে। শুধু লবণ নয় বাজারে প্রচলিত নোনতা খাবার, নোনতা বিস্কুট, চিপস, পাপড়, ক্যান বা টিনে সংরক্ষিত খাবার, বেকিং পাউডার, স্বাদ লবণ (টেস্টিং সল্প), বোতলজাত, সালাদ, ট্রেসিং ইত্যাদি নোনতা খাবার এড়িয়ে চললে কিডনি ভাল থাকবে। এছাড়াও কার্বনেটেড বেভারেজ অর্থাৎ কোকোকোলা, পেপসি, ফান্টা ইত্যাদি গ্রহণ না করাই ভাল।


০০ প্রতিদিন যে কোন ধরনের মৌসুমি ফল খাবেন। বেশি দামে বিদেশী ফলের প্রয়োজন নেই। বিভিন্ন প্রকার দেশী ফল খনিজ ও ভিটামিনের চাহিদা পূরণে যথেষ্ট। খাদ্য ক্যালসিয়ামযুক্ত হওয়া প্রয়োজন। চাপের সময় এই খনিজ ক্ষয় হয়, ক্ষয় হয় গর্ভাবস্থায়-ও। বার্ধক্যেই এর অভাবে কষ্ট পেতে হয় বেশি। এজন্য ননী তোলা দুধ খাওয়ার অভ্যাস করুন।


০০ ভিটামিন সি যুক্ত খাবার প্রতিদিন খাবেন এটি শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন খেতে হবে কারণ এই ভিটামিন দেহে সঞ্চিত থাকেনা। টাটকা টক জাতীয় ফলে এই ভিটামিন পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় আমলকিতে, এছাড়া পেঁয়ারা, আমড়া, লেবু, টমেটো, কাঁচামরিচ ইত্যাদিও ভাল উৎস। ভিটামিন সি আপনার যৌবন ধরে রাখবে, বার্ধক্য দূরে ঠেলে দিবে। আপনার শরীরের ফ্যাট ভাঙ্গবে। মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করবে। সর্দি কাশি নিরাময় করবে। সর্বপরি দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করবে। যথেষ্ট পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করবেন। তবে খাওয়ার সময় নয়। পানি পান করবেন খাওয়ার ঠিক এক ঘন্টা পরে। বাইরে বের হলে ব্যাগে সম্ভব হলে ফুটানো বা টিউবওয়েলের পানি রাখাই ভাল। বিশুদ্ধ পানি পাওয়া না গেলে ডাবের পানি খাওয়া, চা কফি কম খাবেন। দুটোতেই ক্যাফেইন আছে। পানিতে চা পাতা ছেড়ে বেশিক্ষণ ফুটাবেন না। টি ব্যাগ বা চা পাতা যাই হোক স্বল্প সময় গরম করে চা বানিয়ে ফেলতে হবে। অধিক্ষণ ফুটন্ত তা ক্ষতিকর। অম্বলের দোষ থাকলে এড়িয়ে চলাই ভাল।


০০ সিগারেট, বিড়ি, তামাক পাতা, জর্দ্দা, গুল এসব থেকে বিরত থাকতে হবে। এসবে ক্যান্সারের ভয় থাকে। হার্টের জন্যও ক্ষতিকর। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুমান। সম্ভব হলে দুপুরের কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া উচিত।


এছাড়াও: ০০ সবার সঙ্গে মিশতে শিখুন। সামাজিক হোন। ভাল থাকুন।


০০ জীবনটা দেঁৗড় নয়। অহেতুক প্রতিযো-গিতায় নামবেন না।


০০ রসবোধকে কাজে লাগান। আড্ডা দিন মন খুলে, প্রাণ খুলে হাসতে ভূলবেন না।


০০ যতটা শরীর মন নিতে পারে ততটাই কাজ করুন।


০০ বন্ধুদের সময় দিন। সপ্তাহে, দু-সপ্তাহে বা অন্তত মাসে একদিন কাছে কোথাও বেড়িয়ে আসুন। মন যেমন চায়।


০০ স্বাস্থ্যকর খাবার খান। একবারে বেশি নয়। বার বার অল্প অল্প খান। খাবার সময় বেশি তাড়াহুড়া করবেন না।


০০ নেশা তৈরি হতে দেবেন না। নেশা থাকলে তা থেকে বেরিয়ে আসুন।


০০ চলিস্নশ বছর এর পর থেকে নিয়মিত চিকিৎসক দিয়ে শরীর চেকআপ করান। পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খান।


০০ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাবেন। এর ওর কথায় ভুলেও নয়। একটানা খেতে হবে এমন ওষুধ মাঝপথে বন্ধ করে দেবেন না।


০০ সঠিক খাদ্যভ্যাস এবং সুষ্ঠ জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করুন। উচ্চ রক্তচাপ, ষ্ট্রোক এবং হূদরোগেদর ঝুঁকি কমান।

0 comments:

Thanks for Comment

ওজন কমাতে লেবু-মধু পানীয়

ওজন কমাতে অনেকে অনেক কিছু পান করেন বা খান। যেমন : ওজন কমানোর চা, সোনাপাতা, ওজন কমানোর ওষুধ ইত্যাদি। এগুলোর কোনো কার্যকারিতা আছে কিনা তা সন্দেহ আছে। থাকলেও এগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। কিন্তু প্রাকৃতিক উপাদান মধু ও লেবু আসলেই যে কার্যকরী, তা পরীক্ষিত এবং সারা বিশ্বে সমাদৃত ও স্বীকৃত । ওজন কমাতে দুটি প্রাকৃতিক উপাদান লেবু ও মধুর পানীয় সম্পর্কে অনেকেই জানেন । ওজন কমানো ছাড়াও লেবু ও মধুর অনেক গুণাগুণ আছে।
কেন ওজন কমায়?
মধুতে যদিও চিনি থাকে, কিন্তু এতে ভিটামিন ও মিনারেল থাকার কারণে এটি সাধারণ চিনির মতো ওজন না বাড়িয়ে কমায়। কারণ সাধারণ চিনি হজম করতে আমাদের শরীর নিজের থেকে ভিটামিন ও মিনারেল খরচ করে, ফলে এসব পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হয়। এসব উপাদান ফ্যাট ও কোলেস্টেরল কমাতে বা ভাঙতে সাহায্য করে। ফলে যখন আমরা বেশি চিনি খাই, তখন অধিক ক্যালরি শরীরে জমা ছাড়াও এসব পুষ্টি উপাদানের চিনি হজম করতে অতিরিক্ত খরচ হওয়ায় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হয়। তাই ওজন বাড়াতে পারে। কিন্তু মধুতে এসব উপাদান থাকার ফলে এগুলো হজমে সহায়ক এবং ফ্যাট ও কোলেস্টেরল কমায়। তাই এই পানীয় ওজন কমায়। তাছাড়া সকালে উঠেই শরীর যদি পানি জাতীয় কিছু পায়, তবে তা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে একই রকম শারীরিক পরিশ্রম করেও আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধির কারণে ওজন কমতে পারে।


লেবু-মধু পানীয় বানানোর প্রণালী
এক গ্লাস হালকা বা কুসুম গরম পানি, আধা চা চামচ লেবুর রস, এক চা চামচ মধু। গরম পানিতে লেবু ও মধু মিশিয়ে পান করুন লেবু-মধু পানীয়। আপনি চাইলে এর সঙ্গে সবুজ চা মেশাতে পারেন।


যা লক্ষ্য রাখবেন
—আগে পানি হালকা গরম করে তারপর লেবু ও মধু মেশাবেন। মধু কখনোই গরম করতে যাবেন না।
—যদি ঠাণ্ডা পানিতে এটি পান করেন, তবে বিপরীত ফল হবে, মানে আপনার ওজন বাড়বে।


লেবু-মধু পানীয়ের উপকারিতা
এই পানীয় শরীর থেকে টক্সিন বের করে। শরীরের ভেতরের নালীগুলোর সব ময়লা বের করে দেয়।
—মেটাবলিজম/হজম শক্তি বাড়ায়, ফলে ওজন কমে। ঠাণ্ডা লাগলে এই পানীয় কফ বের করতে সাহায্য করে এবং ঠাণ্ডা লাগলে গলাব্যথা করলেও এটি উপকারী ।
—এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
—শরীরে শক্তি বাড়ায়, অলসতা কমায়।
—কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।


মধুর উপকারিতা
মধুতে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ আলাদাভাবে থাকে, কিন্তু চিনিতে তা একসঙ্গে থাকে। ফ্রুকটোজ তাড়াতাড়ি গ্লুকোজের মতো শরীরে ক্যালরি হিসেবে জমা হয় না। তাই চিনির মতো মধু সহজে ক্যালরি জমা করে না। ফলে অল্প মধু খেলেও ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কম।
মধু শরীরকে রিলাক্স করে, মনকে প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে এবং সহজে ঘুম আনতে সাহায্য করে।
মধু একটি প্রাকৃতিক এন্টি বায়োটিক, যা শরীরের সব ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে ইনফেকশন দূর করে। ফলে শরীরের কাজ করার প্রণালী উন্নত হয় এবং হেলদি থাকে।
মধু হজমে সহায়ক। তাই বেশি খাবার খাওয়ার পরে অল্প মধু খেতে পারেন
—মধু ফ্যাট কমায়, ফলে ওজন কমে।
—মধু প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি। তাই মধু সহজে হজম হয়।
—চোখের জন্য ভালো।
—গলার স্বর সুন্দর করে।
—শরীরের ক্ষত দ্রুত সারায়।
—আলসার সারাতে সাহায্য করে।
—নালীগুলো পরিষ্কার করে।
—ঠাণ্ডা লাগলে জ্বর, গলাব্যথায় ভালো ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
—মধু এন্টি অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের রং ও ত্বক সুন্দর করে। ত্বকের ভাঁজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে।
—বুদ্ধিবৃত্তি বাড়ায়।
—শরীরের সামগ্রিক শক্তি বাড়ায় ও তারুণ্য বাড়ায়।


লেবুর উপকারিতা
লেবুতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা এন্টিসেপটিক ও ঠাণ্ডা লাগা প্রতিরোধ করে
এছাড়া লেবুতে থাকে ঈধষপরঁস, চড়ঃধংংরঁস, চযড়ংঢ়যড়ত্ঁং, গধমহবংরঁস, যার কারণে হাড় ও দাঁত শক্ত হয়।
—লেবুর এই উপাদানগুলো টনসিল ও ঁত্রহব রহভবপঃরড়হ প্রতিরোধ করে
—এছাড়া লেবুর ভিটামিন সি ক্যান্সারের সেল গঠন প্রতিরোধ করে।
—লেবু বুক জ্বালা প্রতিরোধ করতে ও আলসার সারাতে সাহায্য করে।
—লেবু আর্থাইটিসের রোগীদের জন্য ভালো । কারণ লেবু ফরঁত্বঃরপ ।
—লেবু শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করে।
—লেবু এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ধহঃর-ধমরহম
তাই ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ত্বক পরিষ্কার রাখে, অপহব দূর করে। ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। কালোদাগ ও ত্বকের ভাঁজ পড়া কমায়।
—লেবু ওজন কমাতে সাহায্য করে।
—লেবু হজমে সহায়ক ও হজমের সমস্যা দূর করে।
—কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
—শরীরের ভেতরের টক্সিন দূর করে, অন্ত্রনালী, লিভার ও পুরো শরীরকে পরিষ্কার রাখে।
—পেট ফোলাজনিত সমস্যা কমায়।
—রক্ত পরিশোধন করে।
—ঠাণ্ডা লাগলে জ্বর, গলাব্যথায় ভালো ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
—শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি হলে ভালো কাজ করে।
—শ্বাসনালীর ও গলার ইনফেকশন সারাতে সাহায্য করে।




কখন খাবেন?
সাধারণত সকালে উঠেই প্রথম পানীয় হিসেবে খালি পেটে এটি খাওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরে সকালের নাস্তা খেতে পারেন।


সাবধানতা
যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তারা অবশ্যই এটি খালি পেটে খাবেন না। কারণ লেবু এসিডিক। তাই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে এটি খাবেন।
তাছাড়া লেবুর এসিড দাঁতের এনামেলের জন্য ক্ষতিকর, তাই এই পানীয় খাবার সঙ্গে সঙ্গে কুলি করবেন, অথবা পানি খাবেন।
একটা কথা মনে রাখবেন, ওজন কমানোর জন্য এই পানীয় শুধুই সহায়কমাত্র। সম্পূর্ণ ওজন কমানোর প্রক্রিয়াতে অবশ্যই থাকতে হবে স্বাস্থ্যকর/ব্যালেন্সড ডায়েট, নিয়মিত শরীর চর্চা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা।
সূত্র:http://islamhouse00bd.wordpress.com/page/5/

0 comments:

Thanks for Comment

আল্লাহর তরফ থেকে নামাজের উনত্রিশটি পুরস্কার

যোমরা ইবনে হাবীব বল্লেন, আমি নামাজ সম্পর্কে নবীপাক (সাঃ) এর নিকটে প্রশ্ন করলে উনি বলেলন। যে ব্যক্তি নামাজ পড়ে, আল্লাহর তরফ থেকে উনত্রিশটি পুরুস্কার তাকে দেওয়া হয়।


১। নামাজ দিনের মধ্যেফরজ একটি কাজ।
২। নামাজ আল্লাহকে খুশি করার একটি পথ।
৩। নামাজ নবীগনদের পথ।
৪। নামাজ ফেরেস্তাদের সাথে ভালবাসাকে আকর্ষন করে।
৫। হেদায়াত এবং ঈমানের পথ এটাই।
৬। আল্লাহর চেনার একটি আলো।
৭। রুজিতে বরকত হওয়ার একটি পথ।
৮। নামাজ পড়লে শরীরে আরাম বোধ করে।
৯। নামাজ পড়লে শয়তান অসন্তুষ্ট হয়।
১০। নামাজ আদায় করলে কাফেরদের সাথে বড় ধরনের যুদ্ধকরার ন্যায়।
১১। নামাজ পড়লে মানুষের আমল কবুল হয়।
১২। নামাজ মোমিনদের আখেরাতের পুঁজিপাটা।
১৩। মালিকুল মওয়ুতের নিকটে শাফয়াত।
১৪। নামাজ কবরের বন্ধু।
১৫। নামাজ কবরের নিচের পাটি।
১৬। নামাজ মুনকির ও নাকিরের উত্তর।
১৭। নামাজ কেয়ামতের দিন বান্দাদের তাজ স্বরুপ।
১৮। নামাজ মানুষের চেহরাকে উজ্জল করার একটি পথ।
১৯। নামাজ মানুষের শরীরে লেবাস হিসেবে পরিধান করে।
২০। নামাজ জাহান্নামের আগুন হতে পর্দা স্বরুপ।
২১। নামাজ জাহান্নামের আগুন হতে এক ধরনের হুজ্জত ও দলিল স্বরুপ।
২২। নামাজ জাহান্নাম থেকে পরিত্রান পাওয়ার একটি পথ।
২৩। নামাজ পুলে সেরাত হতে পার হওয়ার একটি উপায়।
২৪। নামাজ জান্নাতের চাবি কাঠি।
২৫। নামাজ এমন একটি আমল তার দ্বারা বেহেস্ত দান করা হয়।
২৬। নামাজ এমন একটি আমল, তার দ্বারা মানুষকে উচ্চ পদমর্যাদা, মাকাম ও দারাজাত দান করা হয়।
২৭। নামাজ চোখের মণি স্বরুপ।
২৮। নামাজ সমস্ত ইবাদাতের মধ্যে গন্য হয়, যেমন তাসবিহ, তাহলিল, তাকদিস, তাকবির ও আল্লাহ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করার একটি পথ।
২৯। আল্লাহর দরবারে যার নামাজ কবুল হবে প্রত্যেকটি আমল কবুল হবে আর যার নামাজ কবুল হবেনা কোন আমলই গ্রহন যোগ্য হবে না।


নামাজের প্রতি খেয়াল রাখা আবশ্যক, আসেন আমরা নামাজের প্রতি দৃঢ় নজর রাখি, আল্লাহ পাক যেন আমাদের সবাইকে নামাজ পড়ার তোফিক দান করুন আমীন ।
সূত্র: http://www.somewhereinblog.net/blog/Shakh007/29082399

0 comments:

Thanks for Comment

নামাজ জান্নাতের চাবি

নামাজ দ্বীন ইসলামের মূল স্তম্ভ, বান্দার জন্য আল্লাহ পাকের দেয়া শ্রেষ্ঠ উপহার, বিশ্বাসের দলিল, পুণ্য কাজের মূল, সর্বোত্তম ইবাদত, বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের মাঝে পার্থক্য নির্ণয়কারী, মুক্তি ও নাজাতের পূর্বশর্ত এবং ঈমানের অতন্দ্র প্রহরী। নামাজে আল্লাহ তায়ালা ও বান্দার মাঝে এক অতি মহিমান্বিত, অতুলনীয় ও বিস্ময়কর মধুর সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে।


সৃষ্টি জগতে মানুষের চেয়ে বেশি মর্যাদাবান আর কেউ নেই। মানুষের চেয়ে বেশি সম্মানী হলেন একমাত্র মহান স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা। তিনি জ্ঞান, শক্তি-ক্ষমতা, অর্থ-সম্পদ ইত্যাদি সব দিক থেকে মানুষের ওপরে। তাই মানুষকে অবশ্যই আল্লাহর সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। আল্লাহকে বাদ দিয়ে মানুষ আর যার সাথেই যোগাযোগ করুক, সবাই মানুষের চেয়ে জ্ঞান, শক্তি ও সম্পদে নিুমানের। এদের সাহচর্য মানুষের মানগত দিক বিনষ্ট করবে। মানুষ নিচে নামতে থাকবে। এক পর্যায়ে সে পশুর চেয়েও অধম হয়ে যাবে। আল্লাহর সান্নিধ্যই মানুষকে সীমাহীন উন্নতি ও উৎকর্ষের পথে চলতে সাহায্য করে। আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের পরই মানুষ কেবল শতভাগ পরিতৃপ্ত হয়, শান্ত ও আশ্বস্ত হয়।


পার্থিব জীবনে নানা প্রয়োজনে অসংখ্য জিনিস ও বিষয়ের সাথে আমরা জড়িয়ে পড়ি। কত মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়তে হয়! এসব সম্পর্ক ও সংশ্লিষ্টতার মধ্যে প্রচণ্ড আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। একটু-আধটু করে মানুষ এ আকর্ষণের মধ্যে ডুবে যায়। এক সময় তার অজান্তেই তার মহান প্রভুর আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। দুনিয়ার মোহে মানুষ যেন প্রভুহীন হয়ে না যায়, সে জন্য নামাজ এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শত ব্যস্ততা, হাজারো সংশ্লিষ্টতা, নানা ধরনের কাজকর্ম ও সম্পর্ক-সম্বন্ধের বন্ধন বিচ্ছিন্ন করে মহান রবের সান্নিধ্য লাভের এক অনুপম সুযোগ করে দেয় এ নামাজ। আল্লাহপ্রিয় মানুষদের জন্য নামাজ তাই সবচেয়ে বড় নেয়ামত। নামাজই তাদের আল্লাহর কথা ভুলে যেতে দেয় না।


মুসলমানদের জীবনে নামাজের আশাপ্রদ ফল অর্জন না হওয়ার চারটি কারণ হলোঃ


১। নামাজের সূরা, দোয়া তাসবিহর সঠিক উচ্চারণ বা কেরাত বিশুদ্ধ না হওয়া।


২। নামাজের গুরুত্বপূর্ণ নিময়কানুন বা মাসলা-মাসায়েল সম্পর্কে অজ্ঞতা।


৩। নামাজে পাঠকৃত সূরা, দোয়া তাসবিহর অর্থ ও তাৎপর্য না জানা।


৪। নামাজের শিক্ষাকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ না করা।


- নামাজ আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়।


- নামাজ দ্বীন ইসলামের অন্যতম মৌলিক স্তম্ভ।


- নামাজ মুসলিম ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য।


- নামাজ বিচার দিবসে প্রথম জিজ্ঞাসার বিষয়।


- নামাজ পুরুষ-মহিলা, ধনী-গরিব, সুস্থ-অসুস্থ সবার জন্য প্রযোজ্য।


- নামাজ সর্বাধিকবার ও আজীবনের জন্য প্রযোজ্য।


- নামাজ অতীব সাধারণ, সহজ, প্রাকৃতিক ও চমৎকার বিষয়।


- নামাজ কাজের একঘেয়েমি, বিরক্তি ও ক্লান্তি দূর করে।


- দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এমনভাবে সাজানো আছে যে মানুষের কর্মসাধ্যের পরিমাণ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর সে কর্মবিরতির সুযোগ পায়।


- সফল মুমিনের বৈশিষ্ট্য­ তারা নামাজের হেফাজত করে।


- নামাজ জান্নাতের চাবি।


- নামাজ চক্ষুর শীতলতা ও প্রাণের শান্তি।


- সঠিকভাবে নামাজ আদায় জাহান্নাম হারাম করে।


- নামাজ কিয়ামতের দিনের নূর, ঈমানের দলিল, বাঁচার উছিলা।


- নামাজ আল্লাহর জিম্মাদারিতে চলে যাওয়ার সুযোগ।


- মানুষের জীবন বাধাহীন নয়। আমাদের জীবন বিবিধ সমস্যায় জর্জরিত। এসব সমস্যা কেবল আল্লাহই সমাধান করতে পারেন।


- নামাজি ব্যক্তি তার দৈনন্দিন কার্যকলাপ পাঁচ ওয়াক্তের মধ্যে সম্পাদন করে এবং সব কাজের দায়-দায়িত্ব আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে।


- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এভাবে আমাদের জীবনকে আল্লাহর হেফাজতে কাটানোর বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়।


আরবি হরফ মাত্র ২৯টি, জীবন-জীবিকার তাগিদে কত কিছু শিখলাম, পড়লাম, জানলাম, আমি যে নামাজ পড়ি বা আল্লাহর নিকট কবুল হওয়ার জন্য এবং জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচার জন্য সর্বোপরি দুনিয়ার সুখ-শান্তি ও পরকালীন মুক্তির জন্য হলেও আমাকে কুরআন শিখতে হবে। কুরআন শেখার ব্যাপারে ইচ্ছে, সঙ্কল্প ও প্রচেষ্টা না চালালে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে কি না তাও ভেবে দেখতে হবে।

মুসলমানদের জীবনে নামাজের আশাপ্রদ ফল অর্জন না হওয়ার চারটি কারণ হলোঃ
১। নামাজের সূরা, দোয়া তাসবিহর সঠিক উচ্চারণ বা কেরাত বিশুদ্ধ না হওয়া।
২। নামাজের গুরুত্বপূর্ণ নিময়কানুন বা মাসলা-মাসায়েল সম্পর্কে অজ্ঞতা।
৩। নামাজে পাঠকৃত সূরা, দোয়া তাসবিহর অর্থ ও তাৎপর্য না জানা।
৪। নামাজের শিক্ষাকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ না করা।
পাঁচ ওয়াক্ত নামায নিষ্ঠার সাথে আদায় না করলে মুসলমানের খাতায় নাম থাকে না। রাসূল (সাঃ) বলেছেন- "ঈমানদার এবং বেঈমানের মধ্যে পার্থক্য হলো নামায"। (মুসলিম,আবু দউদ,নাসায়ী)
পাঁচ ওয়াক্ত নামায প্রত্যেক মুমিনের উপর ফরজ করা হয়েছে।অতএব নামায ত্যাগকারী তো মুসলমানের অর্ন্তভুক্তই না। হযরত ওমর (রাঃ)বলেন- "নামায ত্যাগকারী ইসলাম প্রদত্ত কোনো সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাবে না"(কবীরা গুনাহ-পৃষ্ঠাঃ২৩)
নামাযে শিথিলতা প্রদর্শন কারীদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-"সেসব নামাজির জন্য ওয়াইল(আযাবের কঠোরতা) যারা নামাযে অবহেলা করেছে।"(সূরা মাঊন)
হযরত সা'দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন-"আমি রাসূল (সাঃ)কে জিগ্ঞাসা করেছিলাম 'এই অবহেলা মানে কি?"
তিনি বলেন- " নির্দিষ্ট সময় থেকে বিলম্বিত করা । "
মহান আল্লাহ পাক বলেন- "হে মুমিনগন তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি যেনো তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরন থেকে গাফেল না করে।যারা এ কারণে গাফেল হয় তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত"।(সূরা মুনাফিকুন:৯)
এই আয়াতে আল্লাহর স্মরণ বলতে নামাযকেই বুঝানো হয়েছে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন- "হাশরের দিন প্রথমেই বান্দার আমল সমূহের মধ্যে নামাযের হিসাব নেয়া হবে।যে নামাযের হিসাব সঠিক ভাবে দিতে পারবে সে পরিত্রান পাবে,নচেৎ ব্যর্থতা অবধারিত।"(তাবরানী)
রাসূল(সাঃ) আরো বলেছেন- "যে ইচ্ছাকৃত ভাবে নামায ছেড়ে দিল সে আল্লাহর যিম্মাদারী থেকে বের হয়ে গেল।"(বুখারী,মুসলিম)
যে ব্যক্তি পরিপূন ভাবে নামায আদায় করবে বিচার দিবসে তা তার জন্য নূর হবে,এবং মু্ক্তির উপায় হবে।আর যে ঠিক মতো নামায আদায় করবে না,তার জন্য নামায নূর ও নাজাতের অসিলা হবে না।হাশরের দিন ফেরাউন,হামান,কারুন,নমরুদ ও উবাই ইবনে খালফের সাথে হাশর হবে।(আহমাদ,তাবরানী)
এক লোক রাসূল (সাঃ)- এর নিকট হাজির হয়ে জিগ্ঞেস করলো, "ইয়া রাসূলাল্লাহ,ইসলামের কোন কাজ আল্লাহর নিকট বেশি পছন্দনীয়?
তিনি বলেন-সময় মতো নামায আদায় করা ।যে নামায পরিত্যাগ করলো তার কোনো দীন নাই।নামায ইসলামের স্তম্ভ।(বায়হাকী)
রাসূল (সাঃ) বলেছেন-"যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামায ঠিক মতো আদায় করবে ,আল্লাহ তাকে পাঁচটি পুরস্কারে সম্মানিত করবেন।


১.তার অভাব দূর করবেন।
২.কবরের আযাব থেকে মুক্তি দেবেন।
৩.ডান হতে আমল নামা দেবেন।
৪.বিজলীর ন্যায় পুলছিরাত পার করবেন।
৫.বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
আর যে ব্যক্তি নামাযে অবহেলা করবে ,আল্লাহ তাকে চৌদ্দটি শাস্তি দেবেন :
দুনিয়াতে পাঁচটি, মৃত্যুর সময় তিনটি , কবরে তিনটি, কবর থেকে উঠানোর সময় তিনটি।
দুনিয়াতে পাঁচটি:
১.তার হায়াত থেকে বরকত কমে যাবে।
২.চেহারা থেকে নেককারের নির্দশন লোপ পাবে।
৩.তার কোন নেক আমালের প্রতিদান দেয়া হবে না।
৪.তার কোনো দু'আ কবুল হবে না।
৫.নেককারের দু'আ থেকে সে বন্চ্ঞিত হবে।
মৃত্যুর সময় তিনটি:
১.সে অপমানিত হয়ে মারা যাবে
২.অনাহারে মারা যাবে
৩.এমন পিপাসার্ত হয়ে মারা যাবে যে,তাকে পৃথিবীর সব সমুদ্রের পানি পান করালেও তার পিপাসা যাবে না।
কবরে তিনটি:
১.কবর সংকীর্ণ হয়ে এতো জোরে চাপ দেবে যে তার পাজরের একদিকের হাড় অন্যদিকে ঢুকে যাবে।
২.কবরে আগুন ভর্তি করে রাখা হবে ।আগুনর জ্বলন্ত কয়লায় রাত দিন জ্বলতে থাকবে।
৩.তার কবরে এমন ভয়ংকর বিষধর সাপ রাখা হবে,যা তাকে কেয়ামতত পর্যন্ত দংশন করতে থাকবে।
পুনরুহ্থানের সময় তিনটি:
১.কঠোর ভাবে হিসাব নেয়া হবে।
২.আল্লাহ তার উপর রাগান্বি থাকবেন।
৩.তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
অপর বর্ণনায় আছে বিচার দিবনে তার কপালে তিনটি কথা লেখা থাকবে-
১.হে আল্লাহর হক নষ্টকারী।
২.হে আল্লাহর অভিশপ্ত।
৩.হে আল্লাহর রহমত থেকে বন্চ্ঞিত।(কবিরা গুনাহ-ইমাম আয যাহাবী)
সূত্র: http://sodeshbangla.wordpress.com

0 comments:

Thanks for Comment

ইউরোপের মাটিতে সবচেয়ে বড় মসজিদ কমপ্লেক্স

মুসলিম দেশে মসজিদ নির্মাণ যতটা সহজ খ্রিস্টান জন অধ্যুষিত কোন দেশে মসজিদ নির্মাণ ততটা কঠিন। গোটা পৃথিবীর ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের তীর্থভূমিতে মসজিদ চিন্তা করতেও গা শিউরে উঠে। রোম খ্রিষ্টান ধর্মাবলীদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান। রোমের মধ্যে ভ্যাটিকান সিটি হল মাত্র ১১০ একরের আলাদা একটা দেশ যা পোপ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাই রোম বলতে রোমান ক্যাথলিকদের তীর্থ স্থান, ভ্যাটিকান সিটি, পোপ, সেন্ট পিটার ও সান্তা মারিয়া গীর্জা, খ্রিষ্টানদের গৌরব ইত্যাদির কথা মনে করা হয়। সেই রোমেই তৈরি হয়েছে পশ্চিম ইউরোপের সবচেয়ে বড় মসজিদ। ইতালীয় ভাষায় এটা Moschea di Roma নামে সমধিক পরিচিতপ্রায় ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এই মসজিদের বাইরে-ভেতরে ২০ হাজার মুসল্লি একসাথে নামায আদায় করতে পারেন। ১৯৬৯ সালে ২৪ টি মুসলিম দেশ ইতালী সরকারের কাছে রোমে একটি ইসলামিক কালচারাল সেন্টার খোলার আহ্বান জানান, তখন অনুমতি পাওয়া যায়নি। সে সময় রোমে এত মুসলিম ছিল না। বর্তমানে ইতালীতে ১.৫ মিলিয়ন বা প্রায় ১৫ লক্ষ মুসলিম বসবাস করে তাই সময়ের কথা বিবেচনা করে ইতালী সরকার এই মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দেয় এবং ইউরোপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও বৃহত্তম মসজিদ এখন রোমে অবস্থিত।


রোম নগরীর উত্তরাঞ্চলের Acqua Acestosa নামক এলাকায় সারিবদ্ধ বৃক্ষের সবুজ বেষ্টনীতে অবস্থিত এ মসজিদ কমপ্লেক্সে রয়েছে প্রশস্ত নামাযের জায়গা, অযু খানা, শৌচাগার, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, মিলনায়তন, পাঠদান কক্ষ, উন্মুক্ত মাঠ, লাশ ধৌতকরণ ও জানাযার ব্যবস্থা। মসজিদ কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে ১০ বছর। রোমান সিটি কাউন্সিল ১৯৭৪ সালে কমপ্লেক্সের জন্য ভূমি দান করেন। ১৯৯৫ সালের ২১ জানুয়ারী ইতালীয় প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট Sandro Pertini এর উপস্থিতিতে মসজিদ উদ্বোধন করা হয়। কমপ্লেক্সটি নির্মাণের উল্লেখযোগ্য ব্যয়ভার বহন করেন সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সাল ইবন আবদুল আযিয, আফগানিস্তানের প্রিন্স মুহাম্মদ হাসান ও তদীয় স্ত্রী প্রিন্সেস রাযিয়া বেগম। একদা সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সাল ইবন আবদুল আযিয রাস্ট্রীয় সফরে রোম আসলে জামায়াতে নামায আদায়ের জন্য কোন মসজিদ পাননি। রোমে কোন মসজিদ নেই একথা জেনে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। তখন থেকে একটি মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে থাকেন।


ইরাকী স্থপতি সামী মুসাভী ও ইতালীয় স্থপতি Paolo Portoghesi কর্তৃক ডিজাইনকৃত নকশা অনুযায়ী মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ চুড়ান্ত হয়। খ্যাতনামা ৪০জন স্থপতির মধ্যে এ দু’জনের লে-আউট শ্রেষ্ঠতার বিচারে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাভ করে। মসজিদ স্থাপত্যের অন্যতম অনুষঙ্গ ১২৮ ফুট উঁচু মিনারটিও বেশ দৃষ্টিনন্দন। সেন্ট পিটার্স গীর্জার গম্ভুজের চাইতে এর উচচতা ২ ফুট কম। ইসলামী ঐতিহ্য ও আধুনিক ইউরোপীয় স্থাপত্য শৈলীর সমন্বয় সাধনের একটি আন্তরিক প্রয়াস লক্ষ্যণীয়। অভ্যন্তরীণ স্তম্ভগুলো উত্তর আফ্রিকার (মাগরিব) পাম বৃক্ষের আদলে তৈরী। মসজিদের বাইরে-ভেতরে এমনভাবে আলোক প্রক্ষেপণের ব্যবস্থ করা হয়েছে যে, রাতের বেলা মনে হয় যেন মসজিদের চার পাশে প্রস্রবণের ফল্গুধারা প্রবাহিত।


খ্রিস্টিয় নবম শতাব্দীতে ইসলামের আগমণ ইতালীতে। অস্টম শতাব্দীতে ইতালীর বিভিন্ন দ্বীপ বিশেষত পেন্টেলেরিয়া, সিসিলি, আপুলিয়া, সারদিনিয়ায় মুসলমানদের অভিযানের ফলে ইতালীতে ইসলাম প্রচার সহজতর হয়। ১৫ শতাব্দীতে ভূমধ্যসাগরীয় বিভিন্ন দ্বীপে উসমানীয় তুর্কীদের অভিযানের ফলে বহু মুসলিম পরিবার ইতালীতে বসতি স্থাপন করে। মূলত মরক্কো, তিউনিশিয়া ও মিশর হতে আগত মুসলমানরা রোমসহ ইতালীতে বসবাস করতে থাকে। রাস্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি না দিলেও ক্যাথলিসিজমের পর ইসলাম হচ্ছে ইতালীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম।


২০০১সালে সৌদি আরবে নিযুক্ত রোমের রাস্ট্রদূত Torquato Cardilli আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি দক্ষিণ ইতালীর নেপলস বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রাচ্য ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। ইসলাম বিষয়ে তাঁর অধ্যয়ন ছিল ব্যাপক। ৩৩ বছর ধরে আরব বিশ্বের ইরাক, সুদান, লিবিয়া, রিয়াদ, সিরিয়া, আলবেনিয়া ও তাঞ্জানিয়ায় রাস্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকালীণ ইসলামী শিক্ষা ও আদর্শের প্রতি তিনি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। এর পুর্বে ১৯৯৪-৯৫ সালে সৌদি আরবে নিযুক্ত Mario Scialoja নামক আরেকজন ইতালীয় রাস্ট্রদূত ইসলাম কবুল করে সরকারী চাকরী পরিত্যাগ করেন। দু’জন দায়িত্বশীল সরকারী কর্মকর্তার ইসলাম গ্রহণের কারণে ইতালীতে ইসলামের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ৫হাজার মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে কালিমা তাইয়্যেবার ছায়াতলে আসেন।
দ্রষ্টব্য: http://www.amardeshonline.com/pages/details/2011/10/14/111556

0 comments:

Thanks for Comment

ভারতবর্ষের প্রথম মসজিদ: চেরামন জামে মসজিদ

ভারতের কেরালা রাজ্যের কুদুংগালুর তালুকের মেথালা গ্রামে অবস্থিত চেরামন জামে মসজিদ হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম মসজিদ। মুহাম্মদ বিন কাসিম, মুহাম্মদ ঘুরী ও সুলতান মাহমূদ গজনভীর ভারত আগমনের বহু পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সা.)এর পরবর্তী যুগে এ মসজিদ নির্মিত হয়। ৭২৯ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত এ মসজিদে আরব ঐতিহ্য ও ভারতীয় স্থাপত্য শৈলীর সংমিশ্রণ লক্ষ্যণীয়।
সুপ্রাচীন কাল হতে কেরালার সাথে আরবের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। ভারত মহাসাগর ও আরব মহাসাগরের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা হচ্ছে কেরালা। আরবদের সাথে সম্পর্কের কারণে কেরালার সর্বশেষ রাজা চেরামন পেরুমলকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করে। তিনি মক্কানগরীতে গিয়ে ইসলাম কবুল করেন এবং তাজউদ্দিন নাম ধারণ করেন। তৎকালীন জেদ্দার শাসকের বোনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সেখানে পুনর্বাসিত হন। পরবর্তী জীবনে মৃত্যু অত্যাসন্ন বুঝতে পেরে চেরামন পেরুমল ইসলম প্রচারের জন্য কেরালায় তার আত্মীয় স্বজনের নিকট পত্র রচণা করেন। এর অব্যবহিত পরে তার মৃত্যু হলে বিশিষ্ট তাবঈ হযরত মালিক ইবন দীনার এবং চেরামন পেরুমলের সমসাময়িক একজন প্রতিনিধি পত্রটি কেরালা নিয়ে আসেন। কেরালার শাসকগণ প্রতিনিধিদ্বয়কে সম্মানের সাথে বরণ করেন এবং ধর্মপ্রচারের সুবিধার্তে মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দেন। কুংগালুয় প্রতিষ্ঠিত চেরামন মসজিদই হচ্ছে কেরালার প্রথম মসজিদ। হযরত মালিক ইবন দীনার হচ্ছেন এই মসজিদের প্রথম ইমাম ও তত্ত্বাবধায়ক। পরবর্তীতে হযরত মালিক ইবন দীনারের পুত্র হাবিব ইবন মালিক ইমাম ও তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত হন।
একাদশ শতাব্দীতে এই মসজিদ সংস্কার ও পুননির্মিত হয়। মুসল্লির ক্রমশ, বৃদ্ধির ফলে ১৯৭৪, ১৯৯৪ ও ২০০১ মসজিদের সামনের অংশ ভেঙ্গে আয়তন সম্প্রসারিত করা হয়। প্রাচীন মসজিদের অভ্যন্তরীণ অংশ এবং মিহরাব ও মিনার আজো অক্ষত রয়েছে। মসজিদের বহির্ভাগে নির্মিত হয় কংক্রীটের তৈরী। অজুকরার জন্য সে সময় নির্মিত পুকুর এখনো আগের মত আছে। মসজিদের সন্নিহিত এলাকায় ২টি কবর বিদ্যমাণ। মনে করা হয় একটি হাবিব ইবন মালিকের এবং অপরটি তাঁর স্ত্রী মুহতারামা হোমায়রার। রমযান মাসে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি ইবাদতের উদ্দেশ্যে মসজিদে আগমণ করে থাকেন।
বিংশ শতাব্দীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা মসজিদ দর্শন করতে আসেন এবং হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মালম্বীরা তাঁদের সন্তানদের পাঠদানের সূচনা করের এই মসজিদ থেকেই। মসজিদের অভ্যন্তরে মহিলাদের প্রবেশের অনুমতি নেই। উল্লেখ্য যে, কেরালার শাসকদের উপাধি ছিল চেরুমন পেরুমল পেরুমল। ভাষ্কর রবি বর্ম। মসজিদে রয়েছে পিতল নির্মিত একটি প্রদীপ, যা হাজার বছর ধরে প্রজ্জ্বলিত রয়েছে। সব ধর্মের জনগণ এ বাতিটি প্রজ্জ্বলনের জন্য স্বতঃস্ফুর্তভাবে তেল সরবরাহ করে থাকেন। অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি এ মসজিদটি পরিদর্শন করেছেন। জনাব এ এ পি জে আবুল কালামও ভারতের রাষ্ট্রপতি থাকাকালে মসজিদটি পরিদর্শন করেন।

0 comments:

Thanks for Comment

বিশ্ব মানবতার প্রতি মহানবীর ১০ অবদান

সকল প্রশংসা কেবল নিখিল জগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক নবী ও রাসূলগণের সর্বশেষ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি।


অব্যাহতভাবে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর স্বেচ্ছা বিকৃতির প্রভাবে অমুসলিমদের কেউ কেউ বিশেষত পশ্চিমারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবতার জন্য কী উপস্থাপন করেছেন, মানবতার প্রতি তাঁর অবদান কী তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিশ্ববাসীর সামনে নবীয়ে রহমত বা দয়ার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঠিক পরিচয় তুলে ধরার ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ ছাড়াও আমাদের নির্ধারিত কর্তব্যসমূহের একটি হলো বিস্তারিত ব্যাখ্যায় না গিয়ে এ প্রশ্নের জবাব দেয়া। নবীকুল শিরোমনি, নবী ও রাসূলগণের সর্বশেষ আমাদের মহানবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্বমানবতার জন্য কী উপহার নিয়ে এসেছেন তা সংক্ষেপে তুলে ধরা। নিচে দশটি পয়েন্টে ভাগ করে আমরা সে বিষয়টিই আলোচনার প্রয়াস পাব :


• আল্লাহর ওহী লাভের মাধ্যমে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্বমানবতাকে মানুষের দাসত্ব ও তাদের গোলামি থেকে একমাত্র শরিকবিহীন আল্লাহর ইবাদতের দিকে নিয়ে গেছেন। এতে করে মানুষ আল্লাহ ছাড়া আর সব কিছুর দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছে। বলাবাহুল্য এটিই মানুষের সবচে বড় সম্মান।


• আল্লাহর ওহী লাভের মাধ্যমে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্বমানবতাকে সকল কল্পকথা ও কুসংস্কার এবং সব রকমের মিথ্যা ও প্রতারণার সামনে শির না নোয়াবার শিক্ষা দিয়েছেন। অক্ষম প্রতিমা ও অলীক প্রভুদের বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করেছেন। মুক্ত করেছেন তিনি সুস্থ বিবেক পরিপন্থী চিন্তাধারার বিশ্বাস থেকে। যেমন : এ কথা বিশ্বাস করা যে মানুষের মধ্য থেকেই আল্লাহর কোনো সন্তান রয়েছেন। যিনি কোনো অপরাধ বা পাপ ছাড়াই মানবতার কল্যাণে উৎসর্গিত হয়ে তাদের প্রায়শ্চিত্ত করেছেন।


• মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ব মানবতার চেতনায় ক্ষমা ও উদারতার ভিতগুলোকে সুদৃঢ় করেছেন। পবিত্র কোরআনে খোদ আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রতি ‘ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই’ মর্মে ওহী প্রেরণ করেছেন। এদিকে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মুসলিমের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসকারী অমুসলিমদের সকল অধিকার নিশ্চিত করেছেন। তাদের জীবন, সন্তান, সম্পদ ও সম্মানের নিরাপত্তা ঘোষণা করেছেন। তাইতো আজ অবধি মুসলিম দেশগুলোতে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সসম্মানের জীবন যাপন করতে দেখা যায়। অথচ একই সময়ে মুসলিম অস্তিত্ব সংক্রান্ত স্পেনের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি পাশ্চাত্য সভ্যতা ও পশ্চিমাদের প্রকাশ্য মূল্যবোধ বিরোধী বংশধারা থেকে সে ভূমিকে পবিত্র করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে।


• মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধর্ম, বর্ণ ও বংশ নির্বিশেষে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত স্বরূপ প্রেরিত হয়েছিলেন। তাঁর শিক্ষার মধ্যে বরং এমন উপাদানেরও অভাব নেই যা পক্ষী ও প্রাণীকুলের প্রতি মায়া-মমতা ও কোমলতা দেখাতেও গুরুত্ব দেয়। নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এদের অকারণে কষ্ট প্রদান কিংবা এদের প্রতি বিরূপ আচরণকে।


• মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অগ্রবর্তী সকল নবীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের এক উজ্জ্বল চিত্র উপস্থাপন করেছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন নবী ইবরাহিম, মুসা ও ঈসা (আলাইহিমুস সালাম) প্রমুখ নবী-রাসূল। উপরন্তু তাঁর প্রতি আল্লাহ তায়ালা এ মর্মে বাণীই প্রেরণ করেছেন, যে কেউ তাঁদের (আল্লাহর প্রেরিত নবীদের) মধ্যে কাউকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে অথবা তাঁর সম্মানহানী ঘটাবে, সে মুসলিম নয়। কেননা সকল নবী ভাই-ভাই। তাঁরা সবাই মানুষকে লা-শরিক এক আল্লাহর প্রতি ডাকার কাজে সমান।
• নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছোট-বড় ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মানুষের অধিকার রক্ষা করেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি তার সামাজিক মর্যাদা বা জীবনযাত্রার মানের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেন নি। এ ব্যাপারে তিনি চমৎকার একগুচ্ছ নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এর অন্যতম হলো প্রস্থানের তিন মাস আগে বিদায় হজে প্রদত্ত তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণের কিছু বাণী। এতে তিনি মানুষের রক্ত, সম্পদ ও সম্মানে আঘাত হানাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। তিনি এ ভাষণ প্রদান করেন এমন সময় বিশ্ব যখন ১২১৫ সালে ম্যাগনাকার্টা লিবার্ট্যাটাম, ১৬৭৯ সালের হেবিয়াস কর্পাস অ্যাক্ট, ১৬৯৮ সালের ব্রিটিশ বিল অব রাটইস, ১৭৭৬ সালের আমেরিকান স্বাধীনতার ঘোষণা, ১৭৮৯ সালের ফরাসি ডিক্লারেশন অব হিউম্যান অ্যান্ড সিভিল রাইটস এবং ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার কথা পৃথিবীবাসী কল্পনাও করে নি।


• মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানব জীবনে আখলাক তথা সচ্চরিত্রের মান তুলে ধরেছেন অনেক উঁচুতে। মানুষকে তিনি উত্তম আখলাক তথা সচ্চরিত্র ও তার সহায়ক গুণগুলো বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। যেমন তিনি সততা, সত্যবাদিতা ও চারিত্রিক নিষ্কলুষতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সামাজিক সম্পর্ক সুদুঢ় করতে তিনি পিতামাতার সঙ্গে সদাচার এবং আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বহাল রাখতে বলেছেন। জীবনে তিনি এর সফল প্রয়োগও ঘটিয়েছেন। পক্ষান্তরে তিনি অসৎ চরিত্র অবলম্বন থেকে বারণ করেছেন। তিনি নিজে যেমন মন্দ স্বভাব থেকে দূরে থেকেছেন, তেমনি অন্যদেরও এ থেকে সতর্ক করেছেন। যেমন : মিথ্যা, ছলনা, হিংসা, যেনা-ব্যভিচার ও পিতামাতার অবাধ্যচরণ করা। শুধু তাই নয়, এসব থেকে সৃষ্ট সমস্যাবলির প্রতিকারও বলে দিয়েছেন তিনি।
• আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী প্রাপ্তির প্রেক্ষিতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুদ্ধি কাজে লাগাতে বলেন। সৃষ্টি জগত উদ্ঘাটন ও তার পরিচয় লাভে উৎসাহিত করেন। একে তিনি নেকী তথা পুণ্য কাজ বলে গণ্য করেন। অথচ একই সময়ে অপর সভ্যতাগুলোর জ্ঞানী ও চিন্তা নায়করা নির্যাতন ভোগ করছিলেন। ধর্ম অবমাননা ও ধর্ম বিদ্বেষকে তখন সর্বাধিক মূল্য দেয়া হচ্ছিল। ধর্ম প্রচারকদের শাস্তি ও কারাভোগ এমনকি মৃত্যুর হুমকি পর্যন্ত দেয়া হচ্ছিল।
• আল্লাহর ওহী লাভের মাধ্যমে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের প্রকৃতি ও স্বভাব বান্ধব এক দীন নিয়ে আবির্ভুত হন যা আত্মিক খোরাক ও দৈহিক চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রাখে। পার্থিব কাজ ও আখিরাতের আমলের মধ্যে ভারসাম্য বিধান করে। পরিশীলিত ও পরিামর্জিত করে মানুষের সহজাত বাসনা ও ঝোঁককে। অপরাপর জাতিগুলোর সভ্যতার মতো একে ধ্বংস বা অবদমিত করে না। অন্য জাতিগুলোর সভ্যতায় দেখা যায়, তারা মানুষের প্রকৃতির বিরুদ্ধ মূর্তিপূজোর মধ্যে ডুবে গিয়েছিল। ধর্ম অন্তপ্রাণ ও তপস্যানুরাগীদেরকে তাদের প্রাকৃতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল। যেমন : বিয়ে-শাদি। বঞ্চিত করেছিল অবিচারের বিরুদ্ধে তাদের স্বভাবসুলভ মানবিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশের অধিকার থেকে। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তাদেরকে একেবারে প্রতিক্রিয়াহীন বানিয়ে ছেড়েছিল। যা ওই সভ্যতার সিংহভাগ সন্তানেরই শিক্ষা ও সুরুচিকে করেছিল লুপ্তপ্রায়। পরন্তু তাদের ঠেলে দিয়েছিল নিছক জড় জগতের অন্ধকারে। যা কেবল দেহের চাহিদায় সাড়া দেয় আর আত্মাকে নিক্ষেপ করে বিশাল শুন্যতায়।
• মানবতার কল্যাণে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের আন্তঃসম্প্রদায়ে ভ্রাতৃত্বের পূর্ণাঙ্গ নমুনা পেশ করেছিলেন। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, কোনো মানব সম্প্রদায়ের ওপর অন্য কোনো মানব সম্প্রদায়ের ওপর কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। মূল সৃষ্টি, অধিকার ও কর্তব্যের ক্ষেত্রে তারা সবাই সমান। শ্রেষ্ঠত্ব বিবেচিত হবে কেবল ঈমান ও তাকওয়া তথা বিশ্বাস ও আল্লাহভীতির নিরিখে। তিনি তাঁর সকল সঙ্গী-সাহাবিকে দীনের খেদমত করার এবং তাতে সম্পৃক্ত হবার সমান সুযোগ দিয়েছেন। তাইতো তাঁদের মধ্যে আরবদের পাশাপাশি ছিলেন (রোম দেশের) সুহাইব রূমী, (হাবশার) বিলাল হাবশী এবং (পারস্যের) সালমান ফারসি রাজিআল্লাহু আনহুম।


পরিশেষে : এই দশটি পয়েন্টের প্রতিটিই সংক্ষিপ্ত প্রমাণাদি উল্লেখ পূর্বক বিস্তারিত আলোচনার দাবি রাখে। কিন্তু আল্লাহর ওহী প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবতার জন্য যা উপহার দিয়েছেন তা উল্লেখের এ জায়গা পর্যাপ্ত নয়। সবিস্তারে এসব পয়েন্ট জানার জন্য নবীয়ে রহমতের সঠিক পরিচয় তুলে ধরার আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামের নিজস্ব ওয়েবসাইট ব্রাউজ করুন : www.mercyprophet.com
আল্লাহ তায়ালা আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর সকল নবী ভাই এবং তাঁর সকল পরিবার-পরিজন ও সাহাবা-তাবেঈদের ওপর আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক।

সূত্র: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

0 comments:

Thanks for Comment

Copyright © 2013 MEDIA INFO