সময়ের সেরা প্রযুক্তির কথা
প্রযুক্তির অগ্রগতি ক্রমেই ঈর্ষণীয় অবস্থানে পৌঁছে যাচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব জীবনকে আরও বেশি সহজ ও গতিশীল করে তুলছে। তারপরেও দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রতিনিয়ত যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকি তা দূর করতে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়া যাচ্ছেন বিজ্ঞানী/গবেষকরা। ফলে প্রতিদিনই আমরা নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব দেখতে পাচ্ছি বিশ্বজুড়ে।
নতুন নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটলেও সবগুলো সমান প্রভাব রাখতে পারে না বিশ্বব্যাপী। সব ধরনের দিক বিবেচনা করে বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠান ম্যাসাচুসেট ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) প্রতি বছরেই সেরা প্রযুক্তিগুলোর তালিকা প্রকাশ করে থাকে তাদের টেকনোলজি রিভিউ ম্যাগাজিনে। একে তারা বলে থাকে 'ব্রেকথ্রু টেকনোলজি'। প্রযুক্তিকে মানুষ আরও কত সহজে ব্যবহার করতে পারে, সে বিষয়টিই বিবেচনা করা হয় এই তালিকা প্রণয়ণে। এই তালিকায় তাই কোনো ডিভাইসে সহজে ব্যবহারযোগ্য ইন্টারফেসও যেমন স্থান পেয়ে থাকে, তেমনি স্থান পেয়ে থাকে সম্ভাবনাময় পরীক্ষামূলক কোনো প্রযুক্তি। পারষ্পরিক যোগাযোগকে প্রভাবিত করে তেমন বিষয়ও স্থান পায় এই তালিকায়। গত এক বছর সময়ে এমআইটির বিবেচনায় যে ১০টি প্রযুক্তি সেরা হসেবে বিবেচিত হয়েছে, সেগুলোর কথা তুলে ধরা হলো এখানে।
ডিপ লার্নিং
সায়েন্স ফিকশন বয়সের দিক থেকে শতবর্ষ পেরিয়ে গেছে। সায়েন্স ফিকশনগুলোর শুরুর দিক থেকেই আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রের দেখা পেয়ে আসছি। বাস্তবে এখনও বুদ্ধিমত্তার সেই স্তরে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি মানুষের পক্ষে। তবে সেই পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে মানুষ। কম্পিউটিংয়ের গতিশীল ধারায় এমন প্রযুক্তি মানুষ উদ্ভাবন করতে সমর্থ হয়েছে, যাতে করে এখন যন্ত্রমানবেরা সনাক্ত করতে সক্ষম হচ্ছে বস্তুকে। এখন যন্ত্রের মাধ্যমে রিয়েল-টাইমে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ পাওয়া যাচ্ছে। যন্ত্রের এই শিক্ষণ-পদ্ধতিকেই বলা হচ্ছে 'ডিপ লার্নিং'। এমন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে গুগলও। গত বছরের জুনে তাদের ডিপ-লার্নিং সিস্টেম ইউটিউব থেকে প্রায় ১০ মিলিয়ন ছবি বাছাই করে প্রদর্শন করে, যেসব ছবিতে সুনির্দিষ্ট কোনো বস্তুর অবস্থান রয়েছে। আবার গত অক্টোবরেই মাইক্রোসফট রিয়েল টাইমে ভাষান্তরের সফটওয়্যার প্রদর্শন করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান। প্রকৃতপক্ষে 'ডিপ লার্নিং' ক্রত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ভিন্ন একটি স্তরে পৌঁছে দিচ্ছে। যা সায়েন্স ফিকশনকে বাস্তবে পরিণত করতে সহায়তা করছে।
টেম্পোরারি সোশ্যাল মিডিয়া
সময়ের সাথে সাথে মানুষ যেমন সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে অনেক বেশি সম্পৃক্ত হয়ে উঠছে, তেমনি সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজেদের তথ্যের নিরাপত্তা নিয়েও অনেক বেশি শংকিত হয়ে পড়েছি। আর সমযের সাথে সাথে ডিজিটাল অনলাইন বিশ্বে মানুষের অতীত ইতিহাস যেভাবে সংরক্ষিত হয়ে থাকছে, তাতে করে এগুলো যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মুছে যায়, তাও প্রত্যাশা করছেন অনেকেই। তাদের জন্যই এক ধরনের সমাধান হতে পারে 'স্ন্যাপচ্যাট'। স্মার্টফোনের জন্য তৈরি এই অ্যাপ্লিকেশনটির মাধ্যমে চ্যাট করা যায়। এর মাধ্যমে রিয়েল টাইমে ছবি এবং ভিডিও ধারণের সুবিধাও রয়েছে। তবে এই কথোপকথন, ভিডিও বা ছবি কতক্ষণ সংরক্ষিত থাকবে অন্যদের প্রদর্শনের জন্য, সেটা নির্ধারণ করে দেওয়া যায়। ফলে ওই নির্ধারিত সময়ের পরে এসব তথ্য আর থাকবে না অনলাইনে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী তৈরি করে এটি।
প্যারেন্টাল ডিএনএ সিকোয়েন্সিং
বলা হয়ে থাকে, মানব জীবনের সকল রহস্য যার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে, তার নাম ডিএনএ। ডিএনএ'তে কী লেখা রয়েছে, সেটা জানতে পারলে একজন মানুষের গোটা জীবনটাই জানা হয়ে যায়। গর্ভস্থ কোনো ভ্রুনের ডিএনএ'র বিশ্লেষণ যদি সম্ভব হয়, তাহলে সেই জন্ম নিতে যাওয়া শিশুটির পুরো জীবনটাই জানা যাবে। এটি নৈতিকভাবে কতটা সমর্থনযোগ্য, সেই প্রশ্ন থাকলেও এই সুযোগটি তৈরি হয়েছে প্যারেন্টাল রক্তের নমুনা থেকেই গর্ভস্থ শিশুর ডিএনএ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। গর্ভাবস্থা এবং প্রসব সংক্রান্ত অনেক তথ্যই জানা যাচ্ছে এ থেকে। তবে এর বাইরেও কিছু প্রতিষ্ঠান মায়ের রক্তের নমুনা থেকেই অনাগত সন্তানের জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে সক্ষম বলে জানিয়েছে। মানবজাতির জন্য এটি বড় ধরনের এক বৈপ্লবিক উদ্ভাবন।
অ্যাডিকটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং
প্রিন্টিং বললেই যে প্রযুক্তি ও ধারণার কথা আমাদের মাথায় আসে, তা অনেকটাই বদলে গেছে গত এক বছরে। এই সময়টায় প্রিন্টিংযের জায়গাটা পূর্ণ হয়েছে 'থ্রিডি প্রিন্টিং' শব্দগুচ্ছের দ্বারা। প্রিন্টিং আর এখন কাগজ-কালির ত্রিমাত্রিক তলে গণ্ডিবদ্ধ নেই, ত্রিমাত্রিকতায় উত্তীর্ণ হয়েছে প্রিন্টিংয়ের ধারণা। এখন প্রিন্টিং মানে বস্তুর প্রতিকৃতি ছাপা নয়, বস্তু নির্মাণ। বিশ্বখ্যাত ইলেকট্রনিক কোম্পানি জেনারেল ইলেকট্রিক সম্প্রতি উড়োজাহাজের জন্য ফুয়েল নজল তৈরি শুরু করেছে ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারের সাহায্যে। 'অ্যাডিডিভ ম্যানুফ্যাকচারিং' নামের এই প্রযুক্তিতে একের পর এক স্তর তৈরির মাধ্যমে বস্তুকে নির্মাণ করে থাকে। ফুয়েল নজল-ই কেবল নয়, প্রায় সব ধরনের বস্তু এবং এমনকি মানুষের প্রতিরূপ মডেলও তৈরি করা হচ্ছে নতুন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
ব্যাক্সটার
রোবট বলতে আমরা যা বুঝে থাকি, সেই ধারণায় নতুন অনেক কিছুই যুক্ত করেছে ব্যাক্সটার। শিল্প-কারখানাগুলোর জন্য তৈরি এই নতুন ধরনের রোবট মানুষের সাথে অনেক বেশি সহজে যোগাযোগ করতে সক্ষম। এদের কাজের দক্ষতাও অনেক বেশি। ফলে রোবটগুলো শিল্প-কারখানায় কাজের গতি বৃদ্ধিতে সহায়ক। ওপেন-সোর্স রোবট অপারেটিং সিস্টেমে চালিত এই রোবটগুলো সরিসরি মানুষের কাছ থেকে নির্দেশনা গ্রহণ করতে সক্ষম।
মেমোরি ইমপ্ল্যান্ট
মানুষের মস্তিষ্কও বিজ্ঞানীদের জন্য এক রহস্য। কী করে মস্তিষ্কে স্মৃতি জমা হয় এবং দীর্ঘদিন পরেও স্মৃতি তরতাজা থাকে মানসপটে, সেটা নিয়ে গবেষণা কম হয়নি। তবে সম্প্রতি লস অ্যাঞ্জেলস-এর ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও নিউরোসায়েন্টিস্ট থিওডোর বার্জার সম্প্রতি জানিয়েছেন, মস্তিষ্কের এই স্মৃতিধারণ প্রক্রিয়ার রহস্যভেদ করেছেন তিনি। যেসব মানুষ স্মৃতি হারিয়েছেন, তাদের জন্য তিনি মেমোরি ইমপ্ল্যান্ট প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ঘোষণা দেন। বিভিন্ন দুর্ঘটনা কিংবা রোগে যারা স্মৃতি হারিয়েছেন, তাদের জন্য তিনি সিলিকন চিপের ইলেকট্রিক্যাল মেমোরি মডিউল তৈরি করেছেন। এর ব্যবহারে দীর্ঘদিনের হারানো স্মৃতি ফেরত পাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্মার্ট ঘড়ি
গত এক বছরে প্রযুক্তি বিশ্বের অন্যতম আলোচিত গ্যাজেটের নাম স্মার্টঘড়ি। হাতে একটি স্মার্টঘড়ি থাকলে পকেটের মোবাইল ফোনটিকেও আর পকেট থেকে বের করার প্রয়োজন নেই। হাতের ঘড়িটি ওই স্মার্টফোনের সাথে সিনক্রোনাইজ করে নিলে কল রিসিভ করা, এসএমএস পড়া, কল করা, এমএমএস পাঠানো থেকে শুরু ক রে ফেসবুক টুইটারের নোটিফিকেশন দেখার মতো সব কাজই করতে সক্ষম এসব ঘড়ি। প্রথম স্মার্টঘড়ি হিসেবে বাজারে আসে 'পেবল ওয়াচ'। এরপর অবশ্য স্যামসাং, অ্যাপল, গুগল সকলেই স্মার্টঘড়ি তৈরিতে ঝুঁকে পড়েছে।
আল্ট্রা-এফিশিয়েন্ট সোলার পাওয়ার
সারা বিশ্বই যখন শক্তি সংকটে ভুগছে, এখন নবায়নযোগ্য শক্তি হিসেবে সোলার পাওয়ার নিয়ে চলছে নিরন্তর গবেষণা। প্রচলিত সোলার ডিভাইসগুলো যে পরিমাণে শক্তি ব্যবহার করে, তার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানো গেলে তা বড় ধরনের অর্জন হবে এবং বিশ্বব্যাপী শক্তি সমস্যায় তা যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে। আর সেদিকেই এক ধাপ এগিয়েছেন ক্যালটেকের ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স বিভাগের অধ্যাপক হ্যারি অ্যটওয়াটার। প্রচলিত সোলার প্যানেলগুলোতেই আর উদ্ভাবিত প্রযুক্তি দ্বিগুণ শক্তি উত্পাদন সক্ষম। সোলার প্যানেলগুলোতে শক্তির বড় একটি অংশ তাপ হিসেবে অপচয় হয়। তা রোধ করেই হ্যারি ও তার সহকর্মীরা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কর্মদক্ষতায় উন্নীত করেছেন সোলার প্যানেলকে।
মোবাইল ফোন ও ডাটা
মোবাইল ফোন নামের ডিভাইসটি আকারে ছোট হলেও কাজের দক্ষতায় এটি ছাড়িয়ে গেছে বড় বড় কম্পিউটারকেও। শুধু তাই নয়, মোবাইল ফোনকে মানুষ কীভাবে ব্যবহার করে, তার তথ্য বিশ্লেষণ করেই ওই ব্যবহারকারী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে। মোবাইল ফোনের তথ্য দিয়েই এমন 'প্রোডাক্টিভ মডেল' তৈরি করেছেন বোস্টনের একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা। শুধু তাই নয়, এই মডেল ব্যবহার করে কোনো একটি কমিউনিটির মানুষেরা আচরণও বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে।
সুপারগ্রিড
বৈদ্যুতিক সংযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের একটি পরিবর্তন নিয়ে আসতেই সুইজারল্যান্ডের এবিবি উদ্ভাবন করেছে সুপারগ্রিড। হাই-ভোল্টেজ ডিসি লাইন ব্রবহার করে অনেক বেশি দক্ষতার সাথে বিদ্যুত্ পরিবহনের কাজটি করা যায়। সেই কাজটিই করেছে এবিবি। তারা এমন একটি হাই-ভোল্টেজ ডিসি সার্কিট ব্রেকার তৈরি করেছে যা কোনো গ্রিডার সমস্যাযুক্ত যন্ত্রাংশগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং কেবল ভালোগুলোকেই সংযুক্ত রাখে। ফলে এই গ্রিডের কর্মদক্ষতার দিক থেকে এগিয়ে যায় কয়েকগুণ।
(মূল লেখা)
নতুন নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটলেও সবগুলো সমান প্রভাব রাখতে পারে না বিশ্বব্যাপী। সব ধরনের দিক বিবেচনা করে বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠান ম্যাসাচুসেট ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) প্রতি বছরেই সেরা প্রযুক্তিগুলোর তালিকা প্রকাশ করে থাকে তাদের টেকনোলজি রিভিউ ম্যাগাজিনে। একে তারা বলে থাকে 'ব্রেকথ্রু টেকনোলজি'। প্রযুক্তিকে মানুষ আরও কত সহজে ব্যবহার করতে পারে, সে বিষয়টিই বিবেচনা করা হয় এই তালিকা প্রণয়ণে। এই তালিকায় তাই কোনো ডিভাইসে সহজে ব্যবহারযোগ্য ইন্টারফেসও যেমন স্থান পেয়ে থাকে, তেমনি স্থান পেয়ে থাকে সম্ভাবনাময় পরীক্ষামূলক কোনো প্রযুক্তি। পারষ্পরিক যোগাযোগকে প্রভাবিত করে তেমন বিষয়ও স্থান পায় এই তালিকায়। গত এক বছর সময়ে এমআইটির বিবেচনায় যে ১০টি প্রযুক্তি সেরা হসেবে বিবেচিত হয়েছে, সেগুলোর কথা তুলে ধরা হলো এখানে।
ডিপ লার্নিং
সায়েন্স ফিকশন বয়সের দিক থেকে শতবর্ষ পেরিয়ে গেছে। সায়েন্স ফিকশনগুলোর শুরুর দিক থেকেই আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রের দেখা পেয়ে আসছি। বাস্তবে এখনও বুদ্ধিমত্তার সেই স্তরে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি মানুষের পক্ষে। তবে সেই পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে মানুষ। কম্পিউটিংয়ের গতিশীল ধারায় এমন প্রযুক্তি মানুষ উদ্ভাবন করতে সমর্থ হয়েছে, যাতে করে এখন যন্ত্রমানবেরা সনাক্ত করতে সক্ষম হচ্ছে বস্তুকে। এখন যন্ত্রের মাধ্যমে রিয়েল-টাইমে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ পাওয়া যাচ্ছে। যন্ত্রের এই শিক্ষণ-পদ্ধতিকেই বলা হচ্ছে 'ডিপ লার্নিং'। এমন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে গুগলও। গত বছরের জুনে তাদের ডিপ-লার্নিং সিস্টেম ইউটিউব থেকে প্রায় ১০ মিলিয়ন ছবি বাছাই করে প্রদর্শন করে, যেসব ছবিতে সুনির্দিষ্ট কোনো বস্তুর অবস্থান রয়েছে। আবার গত অক্টোবরেই মাইক্রোসফট রিয়েল টাইমে ভাষান্তরের সফটওয়্যার প্রদর্শন করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান। প্রকৃতপক্ষে 'ডিপ লার্নিং' ক্রত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ভিন্ন একটি স্তরে পৌঁছে দিচ্ছে। যা সায়েন্স ফিকশনকে বাস্তবে পরিণত করতে সহায়তা করছে।
টেম্পোরারি সোশ্যাল মিডিয়া
সময়ের সাথে সাথে মানুষ যেমন সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে অনেক বেশি সম্পৃক্ত হয়ে উঠছে, তেমনি সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজেদের তথ্যের নিরাপত্তা নিয়েও অনেক বেশি শংকিত হয়ে পড়েছি। আর সমযের সাথে সাথে ডিজিটাল অনলাইন বিশ্বে মানুষের অতীত ইতিহাস যেভাবে সংরক্ষিত হয়ে থাকছে, তাতে করে এগুলো যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মুছে যায়, তাও প্রত্যাশা করছেন অনেকেই। তাদের জন্যই এক ধরনের সমাধান হতে পারে 'স্ন্যাপচ্যাট'। স্মার্টফোনের জন্য তৈরি এই অ্যাপ্লিকেশনটির মাধ্যমে চ্যাট করা যায়। এর মাধ্যমে রিয়েল টাইমে ছবি এবং ভিডিও ধারণের সুবিধাও রয়েছে। তবে এই কথোপকথন, ভিডিও বা ছবি কতক্ষণ সংরক্ষিত থাকবে অন্যদের প্রদর্শনের জন্য, সেটা নির্ধারণ করে দেওয়া যায়। ফলে ওই নির্ধারিত সময়ের পরে এসব তথ্য আর থাকবে না অনলাইনে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী তৈরি করে এটি।
প্যারেন্টাল ডিএনএ সিকোয়েন্সিং
বলা হয়ে থাকে, মানব জীবনের সকল রহস্য যার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে, তার নাম ডিএনএ। ডিএনএ'তে কী লেখা রয়েছে, সেটা জানতে পারলে একজন মানুষের গোটা জীবনটাই জানা হয়ে যায়। গর্ভস্থ কোনো ভ্রুনের ডিএনএ'র বিশ্লেষণ যদি সম্ভব হয়, তাহলে সেই জন্ম নিতে যাওয়া শিশুটির পুরো জীবনটাই জানা যাবে। এটি নৈতিকভাবে কতটা সমর্থনযোগ্য, সেই প্রশ্ন থাকলেও এই সুযোগটি তৈরি হয়েছে প্যারেন্টাল রক্তের নমুনা থেকেই গর্ভস্থ শিশুর ডিএনএ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। গর্ভাবস্থা এবং প্রসব সংক্রান্ত অনেক তথ্যই জানা যাচ্ছে এ থেকে। তবে এর বাইরেও কিছু প্রতিষ্ঠান মায়ের রক্তের নমুনা থেকেই অনাগত সন্তানের জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে সক্ষম বলে জানিয়েছে। মানবজাতির জন্য এটি বড় ধরনের এক বৈপ্লবিক উদ্ভাবন।
অ্যাডিকটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং
প্রিন্টিং বললেই যে প্রযুক্তি ও ধারণার কথা আমাদের মাথায় আসে, তা অনেকটাই বদলে গেছে গত এক বছরে। এই সময়টায় প্রিন্টিংযের জায়গাটা পূর্ণ হয়েছে 'থ্রিডি প্রিন্টিং' শব্দগুচ্ছের দ্বারা। প্রিন্টিং আর এখন কাগজ-কালির ত্রিমাত্রিক তলে গণ্ডিবদ্ধ নেই, ত্রিমাত্রিকতায় উত্তীর্ণ হয়েছে প্রিন্টিংয়ের ধারণা। এখন প্রিন্টিং মানে বস্তুর প্রতিকৃতি ছাপা নয়, বস্তু নির্মাণ। বিশ্বখ্যাত ইলেকট্রনিক কোম্পানি জেনারেল ইলেকট্রিক সম্প্রতি উড়োজাহাজের জন্য ফুয়েল নজল তৈরি শুরু করেছে ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারের সাহায্যে। 'অ্যাডিডিভ ম্যানুফ্যাকচারিং' নামের এই প্রযুক্তিতে একের পর এক স্তর তৈরির মাধ্যমে বস্তুকে নির্মাণ করে থাকে। ফুয়েল নজল-ই কেবল নয়, প্রায় সব ধরনের বস্তু এবং এমনকি মানুষের প্রতিরূপ মডেলও তৈরি করা হচ্ছে নতুন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
ব্যাক্সটার
রোবট বলতে আমরা যা বুঝে থাকি, সেই ধারণায় নতুন অনেক কিছুই যুক্ত করেছে ব্যাক্সটার। শিল্প-কারখানাগুলোর জন্য তৈরি এই নতুন ধরনের রোবট মানুষের সাথে অনেক বেশি সহজে যোগাযোগ করতে সক্ষম। এদের কাজের দক্ষতাও অনেক বেশি। ফলে রোবটগুলো শিল্প-কারখানায় কাজের গতি বৃদ্ধিতে সহায়ক। ওপেন-সোর্স রোবট অপারেটিং সিস্টেমে চালিত এই রোবটগুলো সরিসরি মানুষের কাছ থেকে নির্দেশনা গ্রহণ করতে সক্ষম।
মেমোরি ইমপ্ল্যান্ট
মানুষের মস্তিষ্কও বিজ্ঞানীদের জন্য এক রহস্য। কী করে মস্তিষ্কে স্মৃতি জমা হয় এবং দীর্ঘদিন পরেও স্মৃতি তরতাজা থাকে মানসপটে, সেটা নিয়ে গবেষণা কম হয়নি। তবে সম্প্রতি লস অ্যাঞ্জেলস-এর ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও নিউরোসায়েন্টিস্ট থিওডোর বার্জার সম্প্রতি জানিয়েছেন, মস্তিষ্কের এই স্মৃতিধারণ প্রক্রিয়ার রহস্যভেদ করেছেন তিনি। যেসব মানুষ স্মৃতি হারিয়েছেন, তাদের জন্য তিনি মেমোরি ইমপ্ল্যান্ট প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ঘোষণা দেন। বিভিন্ন দুর্ঘটনা কিংবা রোগে যারা স্মৃতি হারিয়েছেন, তাদের জন্য তিনি সিলিকন চিপের ইলেকট্রিক্যাল মেমোরি মডিউল তৈরি করেছেন। এর ব্যবহারে দীর্ঘদিনের হারানো স্মৃতি ফেরত পাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্মার্ট ঘড়ি
গত এক বছরে প্রযুক্তি বিশ্বের অন্যতম আলোচিত গ্যাজেটের নাম স্মার্টঘড়ি। হাতে একটি স্মার্টঘড়ি থাকলে পকেটের মোবাইল ফোনটিকেও আর পকেট থেকে বের করার প্রয়োজন নেই। হাতের ঘড়িটি ওই স্মার্টফোনের সাথে সিনক্রোনাইজ করে নিলে কল রিসিভ করা, এসএমএস পড়া, কল করা, এমএমএস পাঠানো থেকে শুরু ক রে ফেসবুক টুইটারের নোটিফিকেশন দেখার মতো সব কাজই করতে সক্ষম এসব ঘড়ি। প্রথম স্মার্টঘড়ি হিসেবে বাজারে আসে 'পেবল ওয়াচ'। এরপর অবশ্য স্যামসাং, অ্যাপল, গুগল সকলেই স্মার্টঘড়ি তৈরিতে ঝুঁকে পড়েছে।
আল্ট্রা-এফিশিয়েন্ট সোলার পাওয়ার
সারা বিশ্বই যখন শক্তি সংকটে ভুগছে, এখন নবায়নযোগ্য শক্তি হিসেবে সোলার পাওয়ার নিয়ে চলছে নিরন্তর গবেষণা। প্রচলিত সোলার ডিভাইসগুলো যে পরিমাণে শক্তি ব্যবহার করে, তার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানো গেলে তা বড় ধরনের অর্জন হবে এবং বিশ্বব্যাপী শক্তি সমস্যায় তা যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে। আর সেদিকেই এক ধাপ এগিয়েছেন ক্যালটেকের ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স বিভাগের অধ্যাপক হ্যারি অ্যটওয়াটার। প্রচলিত সোলার প্যানেলগুলোতেই আর উদ্ভাবিত প্রযুক্তি দ্বিগুণ শক্তি উত্পাদন সক্ষম। সোলার প্যানেলগুলোতে শক্তির বড় একটি অংশ তাপ হিসেবে অপচয় হয়। তা রোধ করেই হ্যারি ও তার সহকর্মীরা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কর্মদক্ষতায় উন্নীত করেছেন সোলার প্যানেলকে।
মোবাইল ফোন ও ডাটা
মোবাইল ফোন নামের ডিভাইসটি আকারে ছোট হলেও কাজের দক্ষতায় এটি ছাড়িয়ে গেছে বড় বড় কম্পিউটারকেও। শুধু তাই নয়, মোবাইল ফোনকে মানুষ কীভাবে ব্যবহার করে, তার তথ্য বিশ্লেষণ করেই ওই ব্যবহারকারী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে। মোবাইল ফোনের তথ্য দিয়েই এমন 'প্রোডাক্টিভ মডেল' তৈরি করেছেন বোস্টনের একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা। শুধু তাই নয়, এই মডেল ব্যবহার করে কোনো একটি কমিউনিটির মানুষেরা আচরণও বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে।
সুপারগ্রিড
বৈদ্যুতিক সংযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের একটি পরিবর্তন নিয়ে আসতেই সুইজারল্যান্ডের এবিবি উদ্ভাবন করেছে সুপারগ্রিড। হাই-ভোল্টেজ ডিসি লাইন ব্রবহার করে অনেক বেশি দক্ষতার সাথে বিদ্যুত্ পরিবহনের কাজটি করা যায়। সেই কাজটিই করেছে এবিবি। তারা এমন একটি হাই-ভোল্টেজ ডিসি সার্কিট ব্রেকার তৈরি করেছে যা কোনো গ্রিডার সমস্যাযুক্ত যন্ত্রাংশগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং কেবল ভালোগুলোকেই সংযুক্ত রাখে। ফলে এই গ্রিডের কর্মদক্ষতার দিক থেকে এগিয়ে যায় কয়েকগুণ।
(মূল লেখা)
0 comments:
Thanks for Comment