IELTS-বৃত্তান্ত
ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পরীক্ষা IELTS। এর পূর্ণ রূপ International English Language Testing System. যাঁরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পড়াশোনা বা কাজ করতে যেতে চান, ইংরেজি ভাষার ওপর তাঁদের দক্ষতা প্রমাণের জন্য IELTS পরীক্ষা দিতে পারেন। এতে সেখানে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ডসহ পৃথিবীর আরও অনেক দেশে পড়াশোনা বা কর্মসংস্থানের জন্য যেতে চাইলে আপনার প্রয়োজন হবে IELTS স্কোরের। আগে শুধু ইউরোপের দেশগুলোতে IELTS স্কোর গ্রহণ করা হতো। তবে এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় তিন হাজার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ এবং কানাডার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় IELTS স্কোর গ্রহণ করে থাকে। যে কেউ এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এর জন্য বয়সের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, শিক্ষাগত যোগ্যতারও কোনো প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশে IELTS পরীক্ষা পরিচালনাকারী অন্যতম প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ কাউন্সিল।
পরীক্ষা
IELTS পরীক্ষা দেওয়া যায় Academic ও General Training মডিউলে। Academic মডিউলে পরীক্ষা দিতে পারবেন স্নাতক, স্নাতকোত্তর অথবা পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। যদি কোনো শিক্ষার্থী কারিগরি বিষয় বা প্রশিক্ষণে ভর্তি হতে চান, তবে তাঁকে General Training মডিউলে পরীক্ষা দিতে হবে। এ ছাড়া যাঁরা ইমিগ্রেশনের জন্য যেতে চান, তাঁদের General Training মডিউলে পরীক্ষা দিতে হবে। IELTS পরীক্ষা দেওয়ার আগে শিক্ষার্থীদের জেনে নেওয়া উচিত কোনো মডিউলে পরীক্ষা দিতে হবে। IELTS পরীক্ষায় দুই ধরনের মডিউলেই Listening, Reading, Writing & Speaking—এই চারটি অংশ থাকে। এগুলোর বিবরণ নিম্নে দেওয়া হলো।
Listening
শুনে বোঝার ক্ষমতা যাচাই করা হয় এই অংশে। সিডি থেকে কথোপকথন শুনে এ অংশে প্রশ্নের উত্তর করতে হবে পরীক্ষার্থীদের। এখানে চারটি বিভাগে ৪০টির মতো প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। পরীক্ষার সময় যেকোনো বিষয়ে বক্তৃতা, কথোপকথন বা অন্য কোনো বিষয় অডিও সিডি শোনানো হয়। এখান থেকে শুনেই পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর নির্ধারিত উত্তরপত্রে লিখতে হবে। ৩০ মিনিটের মতো পরীক্ষা হয় এবং শেষে অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময় দেওয়া হয় সব উত্তর প্রশ্নপত্র থেকে উত্তরপত্রে লেখার জন্য। একটি বিষয় কেবল একবারই বাজিয়ে শোনানো হয়। এখানে সঠিক উত্তর বেছে নেওয়া, সংক্ষিপ্ত উত্তর, বাক্যপূরণ ইত্যাদি নানা ধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে।
Reading
এক ঘণ্টায় তিনটি বিভাগে ৪০টির মতো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে পরীক্ষার্থীদের। এখানে বিভিন্ন জার্নাল, বই, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন থেকে কিছু অংশ তুলে দেওয়া হয়ে থাকে। এখান থেকে পড়েই উত্তর করতে হবে। এখানেও বাক্যপূরণ, সংক্ষিপ্ত উত্তর, সঠিক উত্তর খুঁজে বের করা ইত্যাদি প্রশ্ন থাকবে। পরীক্ষার্থী যখন প্রশ্নপত্র পড়বেন, তখন সুবিধার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো দাগ দিয়ে রাখলে উত্তর করতে সুবিধা হবে।
Writing
এখানে এক ঘণ্টায় দুটি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। দ্বিতীয় প্রশ্নটিতে প্রথম প্রশ্নের চেয়ে বেশি নম্বর থাকে। প্রথম প্রশ্নটিতে মোটামুটি ২০ মিনিট সময় দিতে পারেন। অন্তত ১৫০ শব্দের উত্তর লিখতে হবে। আর দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর দিতে ৪০ মিনিট সময় নিতে পারেন। অন্তত ২৫০টি শব্দ লিখতে হবে। এই শব্দসংখ্যার কম লেখা উচিত হবে না। প্রথম প্রশ্নে সাধারণত কোনো চার্ট, ডায়াগ্রাম থাকে। এ থেকে নিজের কথায় বিশ্লেষণধর্মী উত্তর লিখতে হয়। আর দ্বিতীয় প্রশ্নটিতে সাধারণত কোনো বিষয়ের পক্ষে মত বা যুক্তি উপস্থাপন করতে হয়।
Speaking
এখানে তিনটি অংশে পরীক্ষার্থীদের মোটামুটি ১১ থেকে ১৪ মিনিটের পরীক্ষা দিতে হয়। এখানে প্রথমত পরীক্ষার্থীকে কিছু সাধারণ প্রশ্ন করা হয়। যেমন: পরিবার, পড়াশোনা, কাজ, বন্ধু ইত্যাদি। দ্বিতীয় অংশে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে এবং দুই মিনিট কথা বলতে হয়। এর আগে প্রস্তুতির জন্য সময় দেওয়া হয় এক মিনিট। তৃতীয় অংশে রয়েছে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে পরীক্ষকের সঙ্গে চার-পাঁচ মিনিটের কথোপকথন।
স্কোরিং
১ থেকে ৯-এর স্কেলে IELTS-এর স্কোরিং করা হয়ে থাকে। চারটি অংশে আলাদাভাবে ব্যান্ড স্কোর দেওয়া হয়। এগুলোর গড় করে সম্পূর্ণ একটি স্কোরও দেওয়া হয়। এ পরীক্ষায় পাস বা ফেল হওয়ার কোনো বিষয় নেই। আপনার প্রয়োজনীয় স্কোর করতে পারলেই পরীক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্য সফল হবে। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে সাধারণত ৬.৫ থেকে ৭.৫ পেতে হয়। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যান্ড স্কোরে পৃথকভাবে (Writing, Speaking, Listening, Reading) ভালো করতে হয়। সম্পূর্ণ স্কোর যত ভালোই হোক না কেন, একটি বিভাগে স্কোর কমে গেলে ভর্তির সুযোগ নাও পেতে পারেন শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা দেওয়ার আগেই জেনে নিন আপনার ন্যূনতম কত স্কোর প্রয়োজন।
IELTS- প্রস্তুতি
IELTS পরীক্ষা নিয়ে উত্কণ্ঠার কিছু নেই। নিয়মিত প্রস্তুতি নিয়ে যথেষ্ট ভালো স্কোর করা সম্ভব। শুরুতেই আপনাকে লক্ষ্য ঠিক করে নিতে হবে। তবে ইংরেজিতে আপনার এত দিনকার যা দক্ষতা, সে অনুযায়ীই লক্ষ্য ঠিক করবেন। রাতারাতি ভালো স্কোর সম্ভব নাও হতে পারে। আবার ইংরেজিতে আপনি যথেষ্ট দক্ষ হলেই যে কোনো প্রস্তুতি ছাড়া পরীক্ষা দিয়ে আশানুরূপ ফল পাবেন, এমনটা নাও হতে পারে। রোজকার কাজের মধ্যেই অন্তত এক ঘণ্টা সময় বরাদ্দ রাখুন IELTS প্রস্তুতির জন্য। কত দিন ধরে প্রস্তুতি নেবেন, এটা আপনার দক্ষতার ওপর নির্ভর করবে। অন্তত তিন মাস সময় হাতে রাখা ভালো। প্রশ্নপত্র সমাধান করাটা প্রস্তুতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ঘড়ি ধরে প্রশ্নপত্র সমাধান করুন। পরীক্ষার পরিবেশ পেলে একসঙ্গে সব অংশের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করুন। বাজারে অসংখ্য বই পাওয়া যায়। তবে সব বই নির্ভরযোগ্য নয়। এ পরীক্ষার জন্য কোচিং করবেন কি না এটা সম্পূর্ণ আপনার সিদ্ধান্ত। তবে যাই করুন বাড়িতে নিজে পড়াশোনা করতে হবে। ব্যাকরণের অনেক খুঁটিনাটি জানতে পারলে ভালো। আবার এমন অনেক বিষয়, যা স্কুল-কলেজে পড়েছেন কিন্তু এখন মনে নেই, তা প্রস্তুতির একপর্যায়ে ঝালিয়ে নিতে পারবেন। এ পরীক্ষা নিয়ে অনেকের কাছ থেকে অনেক রকম কথা শুনতে পাবেন। এতে দ্বিধা বা উত্কণ্ঠায় ভুগবেন না। IELTS সম্পর্কে যেকোনো তথ্য পেতে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হলো ব্রিটিশ কাউন্সিল, বাংলাদেশ। ব্রিটিশ কাউন্সিলের রিসোর্স সেন্টারে প্রস্তুতির জন্য প্রচুর ভালো বই পাবেন। তবে এগুলো ব্যবহারের জন্য রিসোর্স সেন্টারের সদস্য হতে হবে। যেকোনো বইয়ের দোকান থেকে যেনতেন বই কিনে অর্থ ও সময় নষ্ট না করাই ভালো। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের সরাসরি তত্ত্বাবধানেই IELTS পরীক্ষা হয়।
শুরুতেই নিজেই নিজের একটি মডেল ঘণ্টায় দিয়ে নিন। এতে নিজের দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা পাবেন। কত নম্বর পেলে স্কোর কেমন হবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে ব্রিটিশ কাউন্সিল বা IELTS-এর ওয়েবসাইট থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। যে কয় শব্দে উত্তর দিতে বলা হয়, সে কয় শব্দই লিখতে হবে। ভুল উত্তরের জন্য কোনো নম্বর কাটা হয় না IELTS পরীক্ষায়। কাজেই পরীক্ষার্থীদের উচিত সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। Speaking বিষয়ে ভালো করতে হলে বন্ধুবান্ধব, পরিচিতদের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলার অভ্যাস করুন। এ পরীক্ষার জন্যই নিয়মিত প্রস্তুতি নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্নপত্র সমাধান করে আপনি নিজেই অনেকখানি মূল্যায়ন করতে পারবেন। তবে আরও নির্ভরযোগ্যতার জন্য মক টেস্ট (Mock Test) দিতে পারেন। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সময়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলে মক টেস্টের আয়োজন করা হয়ে থাকে। আসনসংখ্যা সীমিত। সে জন্য আগ্রহীদের দ্রুত ব্রিটিশ কাউন্সিলে যোগাযোগ করতে হবে।
এক দিনের কর্মশালা
এই কর্মশালা IELTS পরীক্ষার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ছয় ঘণ্টাব্যাপী পরিচিতিমূলক আলোচনা করা হয়। আলোচনার অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হলো পরীক্ষা পদ্ধতি, পরীক্ষার ধরন, পরীক্ষাসম্পর্কিত সহজ কৌশল, পরীক্ষার অনুশীলন। এই কর্মশালায় শুধু যাঁরা পরীক্ষার জন্য নিববন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) করেছেন, তাঁরা একটি নির্দিষ্ট ফি দিয়ে অংশ নিতে পারবেন।
প্রস্তুতিমূলক ক্লাস
পরীক্ষার্থীদের জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রস্তুতিমূলক কোর্সের ব্যবস্থা রয়েছে। IELTS পরীক্ষায় ভালো স্কোর অর্জনে ব্রিটিশ কাউন্সিল টিচিং সেন্টার এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। এই কোর্সের মেয়াদ আট সপ্তাহ, যা মোট ৩২ ঘণ্টায় সমাপ্ত হয় এবং প্রতি সপ্তাহে দুটি করে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়।
কোথায়, কীভাবে দেবেন পরীক্ষা?
বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের আয়োজনে IELTS পরীক্ষা দেওয়া যায়। প্রতি মাসেই নির্দিষ্ট তারিখে দুই-তিনবার পরীক্ষা দেওয়া যায়। ওয়েবসাইট থেকে অথবা ফোন করে পরীক্ষার তারিখ জেনে নিতে পারেন। পরীক্ষার আসন সংখ্যা সীমিত। যে তারিখে পরীক্ষা দেবেন, তার অন্তত দেড় মাস আগে নিবন্ধনের জন্য যোগাযোগ করতে হবে। দুই সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। পরীক্ষার ফি ১০ হাজার ৩০০ টাকা। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পাসপোর্ট এবং দুই কপি পাসপোর্ট আকারের রঙিন ছবি লাগবে। ছবি ছয় মাসের বেশি পুরোনো হলে তা গ্রহণ করা হবে না। চশমা পরা ছবিও গ্রহণযোগ্য নয়। IELTS স্কোরের মেয়াদ দুই বছর। এরপর প্রয়োজনে আবার পরীক্ষা দিতে হবে। স্কোর আশানুরূপ না হলে পরীক্ষার্থীরা আবার যেকোনো সময় পরীক্ষা দিতে পারবেন। ব্রিটিশ কাউন্সিলের আয়োজনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী এবং সিলেটে পরীক্ষা দেওয়া যায়।
ফোন: ঢাকা-৮৬১৮৯০৫, চট্টগ্রাম-০৩১৬৫৭৮৮৪, সিলেট-৮২১৮১৪৯২৫। ওয়েবসাইট: www.britishcouncil.org/bangladesh; IELTS-এর ওয়েবসাইট: www.ielts.org
এসএমএস সার্ভিস
পরীক্ষায় রেজিস্ট্রেশনের পর এবং পরীক্ষার তিন-চার দিন আগে আপনার মোবাইল নম্বরে ব্রিটিশ কাউন্সিল এসএমএস করে আপনার পরীক্ষা বিষয়ক সব তথ্য পাঠিয়ে দেবে। যদি এই এসএমএস কোনো প্রার্থী না পেয়ে থাকেন, তবে তাঁকে অবশ্যই ব্রিটিশ কাউন্সিলে যোগাযোগ করতে হবে। আর পরীক্ষার্থীরা যদি এসএমএসের মাধ্যমে পরীক্ষায় প্রাপ্ত স্কোর জানতে চান তাহলে এসএমএস করতে হবে। IELTSCANDIDATE NUMBERPASSPORT NUMBER লিখে পাঠাতে হবে ৭৪৬৪ নম্বরে।
স্টেশনারি প্যাক
IELTS পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করলে পরীক্ষার্থীদের ফ্রি একটি স্টেশনারি প্যাক উপহার দেওয়া হয়।
কোথায় করবেন রেজিস্ট্রেশন
IELTS পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিলের ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। অথবা আপনি যদি সরাসরি করতে চান, সে ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন পয়েন্টগুলো থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করে তা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা যেতে পারে। তা ছাড়া সাইফুরস ও মেনটরসের দুটি শাখায় রেজিস্ট্রেশন পয়েন্ট রয়েছে, সেখানে পরীক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।
ফি
পরীক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রেশনের পর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ধানমন্ডি, গুলশান, উত্তরা ও শেরাটন হোটেল শাখায় পরীক্ষা ফি জমা দিতে পারবেন।
তথ্যসূত্র: ব্রিটিশ কাউন্সিল
পরীক্ষা
IELTS পরীক্ষা দেওয়া যায় Academic ও General Training মডিউলে। Academic মডিউলে পরীক্ষা দিতে পারবেন স্নাতক, স্নাতকোত্তর অথবা পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। যদি কোনো শিক্ষার্থী কারিগরি বিষয় বা প্রশিক্ষণে ভর্তি হতে চান, তবে তাঁকে General Training মডিউলে পরীক্ষা দিতে হবে। এ ছাড়া যাঁরা ইমিগ্রেশনের জন্য যেতে চান, তাঁদের General Training মডিউলে পরীক্ষা দিতে হবে। IELTS পরীক্ষা দেওয়ার আগে শিক্ষার্থীদের জেনে নেওয়া উচিত কোনো মডিউলে পরীক্ষা দিতে হবে। IELTS পরীক্ষায় দুই ধরনের মডিউলেই Listening, Reading, Writing & Speaking—এই চারটি অংশ থাকে। এগুলোর বিবরণ নিম্নে দেওয়া হলো।
Listening
শুনে বোঝার ক্ষমতা যাচাই করা হয় এই অংশে। সিডি থেকে কথোপকথন শুনে এ অংশে প্রশ্নের উত্তর করতে হবে পরীক্ষার্থীদের। এখানে চারটি বিভাগে ৪০টির মতো প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। পরীক্ষার সময় যেকোনো বিষয়ে বক্তৃতা, কথোপকথন বা অন্য কোনো বিষয় অডিও সিডি শোনানো হয়। এখান থেকে শুনেই পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর নির্ধারিত উত্তরপত্রে লিখতে হবে। ৩০ মিনিটের মতো পরীক্ষা হয় এবং শেষে অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময় দেওয়া হয় সব উত্তর প্রশ্নপত্র থেকে উত্তরপত্রে লেখার জন্য। একটি বিষয় কেবল একবারই বাজিয়ে শোনানো হয়। এখানে সঠিক উত্তর বেছে নেওয়া, সংক্ষিপ্ত উত্তর, বাক্যপূরণ ইত্যাদি নানা ধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে।
Reading
এক ঘণ্টায় তিনটি বিভাগে ৪০টির মতো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে পরীক্ষার্থীদের। এখানে বিভিন্ন জার্নাল, বই, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন থেকে কিছু অংশ তুলে দেওয়া হয়ে থাকে। এখান থেকে পড়েই উত্তর করতে হবে। এখানেও বাক্যপূরণ, সংক্ষিপ্ত উত্তর, সঠিক উত্তর খুঁজে বের করা ইত্যাদি প্রশ্ন থাকবে। পরীক্ষার্থী যখন প্রশ্নপত্র পড়বেন, তখন সুবিধার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো দাগ দিয়ে রাখলে উত্তর করতে সুবিধা হবে।
Writing
এখানে এক ঘণ্টায় দুটি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। দ্বিতীয় প্রশ্নটিতে প্রথম প্রশ্নের চেয়ে বেশি নম্বর থাকে। প্রথম প্রশ্নটিতে মোটামুটি ২০ মিনিট সময় দিতে পারেন। অন্তত ১৫০ শব্দের উত্তর লিখতে হবে। আর দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর দিতে ৪০ মিনিট সময় নিতে পারেন। অন্তত ২৫০টি শব্দ লিখতে হবে। এই শব্দসংখ্যার কম লেখা উচিত হবে না। প্রথম প্রশ্নে সাধারণত কোনো চার্ট, ডায়াগ্রাম থাকে। এ থেকে নিজের কথায় বিশ্লেষণধর্মী উত্তর লিখতে হয়। আর দ্বিতীয় প্রশ্নটিতে সাধারণত কোনো বিষয়ের পক্ষে মত বা যুক্তি উপস্থাপন করতে হয়।
Speaking
এখানে তিনটি অংশে পরীক্ষার্থীদের মোটামুটি ১১ থেকে ১৪ মিনিটের পরীক্ষা দিতে হয়। এখানে প্রথমত পরীক্ষার্থীকে কিছু সাধারণ প্রশ্ন করা হয়। যেমন: পরিবার, পড়াশোনা, কাজ, বন্ধু ইত্যাদি। দ্বিতীয় অংশে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে এবং দুই মিনিট কথা বলতে হয়। এর আগে প্রস্তুতির জন্য সময় দেওয়া হয় এক মিনিট। তৃতীয় অংশে রয়েছে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে পরীক্ষকের সঙ্গে চার-পাঁচ মিনিটের কথোপকথন।
স্কোরিং
১ থেকে ৯-এর স্কেলে IELTS-এর স্কোরিং করা হয়ে থাকে। চারটি অংশে আলাদাভাবে ব্যান্ড স্কোর দেওয়া হয়। এগুলোর গড় করে সম্পূর্ণ একটি স্কোরও দেওয়া হয়। এ পরীক্ষায় পাস বা ফেল হওয়ার কোনো বিষয় নেই। আপনার প্রয়োজনীয় স্কোর করতে পারলেই পরীক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্য সফল হবে। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে সাধারণত ৬.৫ থেকে ৭.৫ পেতে হয়। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যান্ড স্কোরে পৃথকভাবে (Writing, Speaking, Listening, Reading) ভালো করতে হয়। সম্পূর্ণ স্কোর যত ভালোই হোক না কেন, একটি বিভাগে স্কোর কমে গেলে ভর্তির সুযোগ নাও পেতে পারেন শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা দেওয়ার আগেই জেনে নিন আপনার ন্যূনতম কত স্কোর প্রয়োজন।
IELTS- প্রস্তুতি
IELTS পরীক্ষা নিয়ে উত্কণ্ঠার কিছু নেই। নিয়মিত প্রস্তুতি নিয়ে যথেষ্ট ভালো স্কোর করা সম্ভব। শুরুতেই আপনাকে লক্ষ্য ঠিক করে নিতে হবে। তবে ইংরেজিতে আপনার এত দিনকার যা দক্ষতা, সে অনুযায়ীই লক্ষ্য ঠিক করবেন। রাতারাতি ভালো স্কোর সম্ভব নাও হতে পারে। আবার ইংরেজিতে আপনি যথেষ্ট দক্ষ হলেই যে কোনো প্রস্তুতি ছাড়া পরীক্ষা দিয়ে আশানুরূপ ফল পাবেন, এমনটা নাও হতে পারে। রোজকার কাজের মধ্যেই অন্তত এক ঘণ্টা সময় বরাদ্দ রাখুন IELTS প্রস্তুতির জন্য। কত দিন ধরে প্রস্তুতি নেবেন, এটা আপনার দক্ষতার ওপর নির্ভর করবে। অন্তত তিন মাস সময় হাতে রাখা ভালো। প্রশ্নপত্র সমাধান করাটা প্রস্তুতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ঘড়ি ধরে প্রশ্নপত্র সমাধান করুন। পরীক্ষার পরিবেশ পেলে একসঙ্গে সব অংশের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করুন। বাজারে অসংখ্য বই পাওয়া যায়। তবে সব বই নির্ভরযোগ্য নয়। এ পরীক্ষার জন্য কোচিং করবেন কি না এটা সম্পূর্ণ আপনার সিদ্ধান্ত। তবে যাই করুন বাড়িতে নিজে পড়াশোনা করতে হবে। ব্যাকরণের অনেক খুঁটিনাটি জানতে পারলে ভালো। আবার এমন অনেক বিষয়, যা স্কুল-কলেজে পড়েছেন কিন্তু এখন মনে নেই, তা প্রস্তুতির একপর্যায়ে ঝালিয়ে নিতে পারবেন। এ পরীক্ষা নিয়ে অনেকের কাছ থেকে অনেক রকম কথা শুনতে পাবেন। এতে দ্বিধা বা উত্কণ্ঠায় ভুগবেন না। IELTS সম্পর্কে যেকোনো তথ্য পেতে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হলো ব্রিটিশ কাউন্সিল, বাংলাদেশ। ব্রিটিশ কাউন্সিলের রিসোর্স সেন্টারে প্রস্তুতির জন্য প্রচুর ভালো বই পাবেন। তবে এগুলো ব্যবহারের জন্য রিসোর্স সেন্টারের সদস্য হতে হবে। যেকোনো বইয়ের দোকান থেকে যেনতেন বই কিনে অর্থ ও সময় নষ্ট না করাই ভালো। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের সরাসরি তত্ত্বাবধানেই IELTS পরীক্ষা হয়।
শুরুতেই নিজেই নিজের একটি মডেল ঘণ্টায় দিয়ে নিন। এতে নিজের দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা পাবেন। কত নম্বর পেলে স্কোর কেমন হবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে ব্রিটিশ কাউন্সিল বা IELTS-এর ওয়েবসাইট থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। যে কয় শব্দে উত্তর দিতে বলা হয়, সে কয় শব্দই লিখতে হবে। ভুল উত্তরের জন্য কোনো নম্বর কাটা হয় না IELTS পরীক্ষায়। কাজেই পরীক্ষার্থীদের উচিত সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। Speaking বিষয়ে ভালো করতে হলে বন্ধুবান্ধব, পরিচিতদের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলার অভ্যাস করুন। এ পরীক্ষার জন্যই নিয়মিত প্রস্তুতি নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্নপত্র সমাধান করে আপনি নিজেই অনেকখানি মূল্যায়ন করতে পারবেন। তবে আরও নির্ভরযোগ্যতার জন্য মক টেস্ট (Mock Test) দিতে পারেন। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সময়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলে মক টেস্টের আয়োজন করা হয়ে থাকে। আসনসংখ্যা সীমিত। সে জন্য আগ্রহীদের দ্রুত ব্রিটিশ কাউন্সিলে যোগাযোগ করতে হবে।
এক দিনের কর্মশালা
এই কর্মশালা IELTS পরীক্ষার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ছয় ঘণ্টাব্যাপী পরিচিতিমূলক আলোচনা করা হয়। আলোচনার অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হলো পরীক্ষা পদ্ধতি, পরীক্ষার ধরন, পরীক্ষাসম্পর্কিত সহজ কৌশল, পরীক্ষার অনুশীলন। এই কর্মশালায় শুধু যাঁরা পরীক্ষার জন্য নিববন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) করেছেন, তাঁরা একটি নির্দিষ্ট ফি দিয়ে অংশ নিতে পারবেন।
প্রস্তুতিমূলক ক্লাস
পরীক্ষার্থীদের জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রস্তুতিমূলক কোর্সের ব্যবস্থা রয়েছে। IELTS পরীক্ষায় ভালো স্কোর অর্জনে ব্রিটিশ কাউন্সিল টিচিং সেন্টার এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। এই কোর্সের মেয়াদ আট সপ্তাহ, যা মোট ৩২ ঘণ্টায় সমাপ্ত হয় এবং প্রতি সপ্তাহে দুটি করে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়।
কোথায়, কীভাবে দেবেন পরীক্ষা?
বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের আয়োজনে IELTS পরীক্ষা দেওয়া যায়। প্রতি মাসেই নির্দিষ্ট তারিখে দুই-তিনবার পরীক্ষা দেওয়া যায়। ওয়েবসাইট থেকে অথবা ফোন করে পরীক্ষার তারিখ জেনে নিতে পারেন। পরীক্ষার আসন সংখ্যা সীমিত। যে তারিখে পরীক্ষা দেবেন, তার অন্তত দেড় মাস আগে নিবন্ধনের জন্য যোগাযোগ করতে হবে। দুই সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। পরীক্ষার ফি ১০ হাজার ৩০০ টাকা। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পাসপোর্ট এবং দুই কপি পাসপোর্ট আকারের রঙিন ছবি লাগবে। ছবি ছয় মাসের বেশি পুরোনো হলে তা গ্রহণ করা হবে না। চশমা পরা ছবিও গ্রহণযোগ্য নয়। IELTS স্কোরের মেয়াদ দুই বছর। এরপর প্রয়োজনে আবার পরীক্ষা দিতে হবে। স্কোর আশানুরূপ না হলে পরীক্ষার্থীরা আবার যেকোনো সময় পরীক্ষা দিতে পারবেন। ব্রিটিশ কাউন্সিলের আয়োজনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী এবং সিলেটে পরীক্ষা দেওয়া যায়।
ফোন: ঢাকা-৮৬১৮৯০৫, চট্টগ্রাম-০৩১৬৫৭৮৮৪, সিলেট-৮২১৮১৪৯২৫। ওয়েবসাইট: www.britishcouncil.org/bangladesh; IELTS-এর ওয়েবসাইট: www.ielts.org
এসএমএস সার্ভিস
পরীক্ষায় রেজিস্ট্রেশনের পর এবং পরীক্ষার তিন-চার দিন আগে আপনার মোবাইল নম্বরে ব্রিটিশ কাউন্সিল এসএমএস করে আপনার পরীক্ষা বিষয়ক সব তথ্য পাঠিয়ে দেবে। যদি এই এসএমএস কোনো প্রার্থী না পেয়ে থাকেন, তবে তাঁকে অবশ্যই ব্রিটিশ কাউন্সিলে যোগাযোগ করতে হবে। আর পরীক্ষার্থীরা যদি এসএমএসের মাধ্যমে পরীক্ষায় প্রাপ্ত স্কোর জানতে চান তাহলে এসএমএস করতে হবে। IELTSCANDIDATE NUMBERPASSPORT NUMBER লিখে পাঠাতে হবে ৭৪৬৪ নম্বরে।
স্টেশনারি প্যাক
IELTS পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করলে পরীক্ষার্থীদের ফ্রি একটি স্টেশনারি প্যাক উপহার দেওয়া হয়।
কোথায় করবেন রেজিস্ট্রেশন
IELTS পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিলের ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। অথবা আপনি যদি সরাসরি করতে চান, সে ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন পয়েন্টগুলো থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করে তা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা যেতে পারে। তা ছাড়া সাইফুরস ও মেনটরসের দুটি শাখায় রেজিস্ট্রেশন পয়েন্ট রয়েছে, সেখানে পরীক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।
ফি
পরীক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রেশনের পর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ধানমন্ডি, গুলশান, উত্তরা ও শেরাটন হোটেল শাখায় পরীক্ষা ফি জমা দিতে পারবেন।
তথ্যসূত্র: ব্রিটিশ কাউন্সিল
0 comments:
Thanks for Comment