ভূমিকম্প: কারণ অজানা, পূর্বাভাস সম্ভব হচ্ছে না
বাংলাদেশ আর্থকোয়েক সোসাইটি ৯ এপ্রিল ঢাকায় ভূমিকম্প বিষয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করে। তাতে ভূমিকম্পপূর্ব প্রস্তুতি এবং ভূমিকম্প-পরবর্তী করণীয় বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়। জাপানে সর্বসাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগেও একটি সিম্পোজিয়াম হয়েছিল, সেখানেও মূলত অবকাঠামো নির্মাণ, সচেতনতা বৃদ্ধি, ক্ষয়ক্ষতি কমালো এসব বিষয় প্রাধান্য পায়। ভূমিকম্পের কারণ নিয়ে এসব সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে আলোচনা হয় না। গবেষক-বিজ্ঞানীদের বড় অংশ ধরেই নিয়েছেন, তাঁরা কারণটি জানেন।
ভূমিকম্প প্রাকৃতিক ঘটনা। প্রতিদিন পৃথিবীর কোথাও না কোথাও ভূমিকম্প হচ্ছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে এর মাত্রা ও উৎপত্তিস্থল নির্ণয় করা যাচ্ছে। শুধু কখন কোথায় ভূমিকম্প হবে এটাই গবেষক-বিজ্ঞানীরা বলতে পারছেন না। ইলাস্টিক রিবাউন্ড থিওরিতে বিশ্বাসী এসব গবেষক-বিজ্ঞানী মনে করেন, টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষই ভূমিকম্পের কারণ। এঁরা বলেন, টেকটনিক প্লেটগুলোর সংযোগস্থল বা ফল্ট লাইনের ওপর ভূমিকম্পের কেন্দ্র বা ইপিআই-হাইপো সেন্টার। কিন্তু বহু ভূমিকম্পের কেন্দ্র ফল্ট লাইনের ওপর নয়। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে পারছেন না রিবাউন্ড থিওরিতে বিশ্বাসী গবেষক-বিজ্ঞানীরা। একটা সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, টেকটনিক প্লেটের গতি এবং এর ফলে সৃষ্ট চাপ ভূমিকম্পের কারণ নয়।
ফল্ট লাইনে বিশ্বাসীরা বলেন, পৃথিবীর কোন এলাকায় ফল্ট লাইন অবস্থান করছে; বাংলাদেশের উত্তরে, পূর্বে কোন কোন ফল্ট লাইন আছে এ হিসাব তাঁদের কাছে আছে। তাঁরা বলেন, অমুক সালে হওয়া ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল তমুক ফল্ট লাইনের ওপর। এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পরে আবারও ভূমিকম্পের আশঙ্কার কথা তাঁরা মনে ঢুকিয়ে দেন।
ইতালিতে একদল বিজ্ঞানী দাবি করছেন, দুই থেকে ২২ দিন আগে ভূমিকম্পের আগাম বার্তা দিতে পারবেন। ভূ-অভ্যন্তরে কন্ডাক্টর রড ঢুকিয়ে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড বিশ্লেষণ করে তারা এই বার্তা দেওয়ার কথা বলছেন। আরও একদল বিজ্ঞানী বলছেন, ভূমিকম্পের আগে আগে কিছু প্রাণীর মধ্যে অন্য রকম চাঞ্চল্য দেখা দেয়। এটার কারণও তাঁরা বলছেন ইলেট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড। এই দুই দল বিজ্ঞানীও আর এগোতে পারছেন না, কারণ তাঁরাও রিবাউন্ড তত্ত্বে বিশ্বাসী। আমার বক্তব্য, শক্তির রূপান্তর ভূমিকম্পের কারণ। এটা ব্যাখ্যা করাই আমার মূল উদ্দেশ্য। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের অবকাশ আছে।
পৃথিবীপৃষ্ঠে সূর্যের আলো পড়ছে। আলোকশক্তি তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। তাপশক্তি আবার বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। ফলে ভূ-উপাদান চার্জড বা বিদ্যুতায়িত হয়। আর এই চার্জ যখন চার্জহীন অথবা নিম্ন চার্জসম্পন্ন উপাদানের দিকে যায় তখন পথে বাধাগ্রস্ত হয়, পথে সেমিকন্ডাক্টর বা ননকন্ডাক্টর উপাদান অথবা একই ধরনের উপাদানের পরিবর্তে অন্য ধরনের উপাদান পায়, তখন সেখানে ইলেকট্রিক ফায়ার হয়। এটাকে আকাশের বজ্রপাতের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। আর এই বজ্রপাতের সময় পৃথিবী কেঁপে ওঠে যা আমরা ভূমিকম্প হিসেবে অনুভব করি।
আকাশের বজ্রপাতের ঘটনা আমরা জানি। কিন্তু বজ্রপাত শুধু জলীয়বাষ্পের মেঘে হয় না। হয় ধূলিঝড়ের মধ্যে, ভলকানিক গ্যাসের মধ্যে। অর্থাৎ ভূমির উপাদান, বালু, পানি, গ্যাসে বজ্রপাত হয়। এর অর্থ এসব উপাদান চার্জ সৃষ্টি ও পরিবহনের উপযোগী। এসব উপাদান যখন পৃথিবীপৃষ্ঠে থাকে তখনো একইভাবে চার্জ সৃষ্টি ও বহন করে থাকে এবং বিদ্যুতের অবস্থান ও সঞ্চালনের নিয়ম অনুযায়ী সে তার ধর্ম প্রদর্শন করে। তাই আকাশের বজ্রপাত ও ভূ-অভ্যন্তরের বজ্রপাতের কারণ ও চরিত্র একই। আকাশে বজ্রপাতের কারণে তাপমাত্রা ৩০ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছায় বলে বিজ্ঞানীরা বলছেন। আমার ধারণা, ভূ-অভ্যন্তরে বজ্রপাতের তাপমাত্রার পরিমাণ আরও অনেক বেশি।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল বা কেন্দ্রের অবস্থান বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখব সেগুলো বিশাল জলরাশি ও স্থলভাগের মিলিত স্থানে। জলরাশি সমসত্ত্ব দ্রবণ আর স্থলভাগ অসমসত্ব পদার্থ। জলরাশি লবণ মিশ্রিত। লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইডের দ্রবণের কারণে জলরাশি চার্জ সমৃদ্ধ। এই জলরাশি ইলেকট্রিক কন্ডাক্টর হিসেবে কাজ করে। সূর্যের আলো জলরাশিতে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে উপকূল বরাবর আসার পর মাধ্যম পরিবর্তনের সময় বজ্রপাত হয়। তাই উপকূলে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বেশি।
আমি মনে করি, পৃথিবীর অভ্যন্তরের সব উপাদান এই ইলেকট্রিক ফায়ারের সময় প্রচণ্ড তাপে রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ তেল, গ্যাস, পানি, লবণ, সোনা, রুপা, তামা, ইউরেনিয়াম সবই। এ ক্ষেত্রে আমি প্রথমে খনিজ তেলের বিষয়ে আলোচনা করতে চাই।
পেট্রোলিয়াম অনুসন্ধানের আগে সিসমিক সার্ভের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের গঠন-প্রাণালির আকার-আকৃতি খোঁজা হয়। নির্দিষ্ট পদার্থের অবস্থান একটা গোলকের অংশ নির্দেশ করে। এর উঁচু দিকটা ভূপৃষ্ঠের দিকে থাকে। এর পরেই খোঁজা হয় তেল-গ্যাস। আমরা জানি, কোনো কেন্দ্র থেকে শক্তি উৎসারিত হলে তা রেডিয়ালি ধাবমান হয়। যত দূরে যেতে থাকে তত প্রভাব কমতে থাকে। তার একটা গণিতও আছে।
আর এই পেট্রোলিয়াম অনুসন্ধানে যেহেতু একটা জ্যামিতি গোলকের অংশকে বেছে নেওয়া হয়েছে, তাই এর কেন্দ্রর ভূমিকা পর্যালোচনা করা দরকার।
১৯৫০ সালের দিকে পেট্রোলিয়াম তৈরি হওয়ার মত দিয়েছিলেন কিছু রুশ ও ফরাসি বিজ্ঞানী। তাঁদের মতে, পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে মেন্টেল নামক উত্তপ্ত স্তর রয়েছে। ওই স্তর থেকে নিরন্তর ইথেন তৈরি হচ্ছে এবং এই পদার্থ পৃষ্ঠের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই ইথেন আকস্মিক কোনো তাপে ও চাপের ফলে পেট্রোলিয়ামে রূপান্তরিত হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা ব্যাখ্যা করতে পারেননি ওই চাপ ও তাপ কোথা থেকে আসছে। তাঁদের ওই তত্ত্ব জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি।
আমি বলছি, এই তাপ ও চাপ ভূ-অভ্যন্তরে বজ্রপাতের ফলে সৃষ্টি হচ্ছে এবং তখনই পেট্রোলিয়াম তৈরি হচ্ছে। যেহেতু বজ্রপাতের তাপ ও চাপশক্তি রেডিয়ালে যাচ্ছে, এই যাত্রাপথের একপর্যায়ে ইথেন পেট্রোলিয়ামে রূপান্তরিত হওয়ার উপযুক্ত পর্যায়ে উপনীত হচ্ছে। সেই স্তরেই তেল-গ্যাস সৃষ্টি হচ্ছে।
ভূ-অভ্যন্তরে বজ্রপাতের সম্ভাবনা ও তা থেকে সৃষ্ট তাপমাত্রার পরিমাণের কথা আগেই বলেছি।
অন্য আর একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন। ইউরেনিয়ামের মতো উচ্চ পারমাণবিক সংখ্যা সমৃদ্ধ মৌলিক উপাদান ভূমিকম্পের কেন্দ্রের কাছাকাছি সৃষ্টি হয় বলে আমি ধারণা করছি। কারণ শক্তির সর্বোচ্চ গুরুত্ব অনুভূত হবে বৈদ্যুতিক প্রজ্বলন যেখানে হয় সেখানে, আর সেই প্রচণ্ড শক্তিধর অবস্থানে শক্তিধর উপাদান সৃষ্টি হবে। ইউরেনিয়াম একটি শক্তিধর উপাদান এবং তার অস্তিত্ব সেখানে থাকবে। এ ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হাজির করা সম্ভব। গবেষকেরা লক্ষ করেছেন, ফল্টলাইনে বেশির ভাগ ভূমিকম্পের কেন্দ্র। গবেষকেরা এও লক্ষ করেছেন, ফল্টলাইন যেসব জায়গায় দৃশ্যমান সেখানে র্যাডন গ্যাসের অস্তিত্ব মেলে। ফল্টলাইনদৃশ্যমান নয়, সেখানেও র্যাডন গ্যাসের অস্তিত্ব মেলাকে ধরে নেন, এটা ফল্ট লাইনের অংশ। আর র্যাডন গ্যাস উৎপন্ন হয় থাকে ইউরেনিয়ামের ফিশন থেকে। ধারণা করা যায়, বজ্রপাতের মধ্য দিয়ে ইউরেনিয়াম সৃষ্টি হচ্ছে এবং সেখান থেকে র্যডন গ্যাস বেরিয়ে আসছে।
ভূমিকম্প প্রাকৃতিক ঘটনা। প্রতিদিন পৃথিবীর কোথাও না কোথাও ভূমিকম্প হচ্ছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে এর মাত্রা ও উৎপত্তিস্থল নির্ণয় করা যাচ্ছে। শুধু কখন কোথায় ভূমিকম্প হবে এটাই গবেষক-বিজ্ঞানীরা বলতে পারছেন না। ইলাস্টিক রিবাউন্ড থিওরিতে বিশ্বাসী এসব গবেষক-বিজ্ঞানী মনে করেন, টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষই ভূমিকম্পের কারণ। এঁরা বলেন, টেকটনিক প্লেটগুলোর সংযোগস্থল বা ফল্ট লাইনের ওপর ভূমিকম্পের কেন্দ্র বা ইপিআই-হাইপো সেন্টার। কিন্তু বহু ভূমিকম্পের কেন্দ্র ফল্ট লাইনের ওপর নয়। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে পারছেন না রিবাউন্ড থিওরিতে বিশ্বাসী গবেষক-বিজ্ঞানীরা। একটা সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, টেকটনিক প্লেটের গতি এবং এর ফলে সৃষ্ট চাপ ভূমিকম্পের কারণ নয়।
ফল্ট লাইনে বিশ্বাসীরা বলেন, পৃথিবীর কোন এলাকায় ফল্ট লাইন অবস্থান করছে; বাংলাদেশের উত্তরে, পূর্বে কোন কোন ফল্ট লাইন আছে এ হিসাব তাঁদের কাছে আছে। তাঁরা বলেন, অমুক সালে হওয়া ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল তমুক ফল্ট লাইনের ওপর। এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পরে আবারও ভূমিকম্পের আশঙ্কার কথা তাঁরা মনে ঢুকিয়ে দেন।
ইতালিতে একদল বিজ্ঞানী দাবি করছেন, দুই থেকে ২২ দিন আগে ভূমিকম্পের আগাম বার্তা দিতে পারবেন। ভূ-অভ্যন্তরে কন্ডাক্টর রড ঢুকিয়ে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড বিশ্লেষণ করে তারা এই বার্তা দেওয়ার কথা বলছেন। আরও একদল বিজ্ঞানী বলছেন, ভূমিকম্পের আগে আগে কিছু প্রাণীর মধ্যে অন্য রকম চাঞ্চল্য দেখা দেয়। এটার কারণও তাঁরা বলছেন ইলেট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড। এই দুই দল বিজ্ঞানীও আর এগোতে পারছেন না, কারণ তাঁরাও রিবাউন্ড তত্ত্বে বিশ্বাসী। আমার বক্তব্য, শক্তির রূপান্তর ভূমিকম্পের কারণ। এটা ব্যাখ্যা করাই আমার মূল উদ্দেশ্য। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের অবকাশ আছে।
পৃথিবীপৃষ্ঠে সূর্যের আলো পড়ছে। আলোকশক্তি তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। তাপশক্তি আবার বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। ফলে ভূ-উপাদান চার্জড বা বিদ্যুতায়িত হয়। আর এই চার্জ যখন চার্জহীন অথবা নিম্ন চার্জসম্পন্ন উপাদানের দিকে যায় তখন পথে বাধাগ্রস্ত হয়, পথে সেমিকন্ডাক্টর বা ননকন্ডাক্টর উপাদান অথবা একই ধরনের উপাদানের পরিবর্তে অন্য ধরনের উপাদান পায়, তখন সেখানে ইলেকট্রিক ফায়ার হয়। এটাকে আকাশের বজ্রপাতের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। আর এই বজ্রপাতের সময় পৃথিবী কেঁপে ওঠে যা আমরা ভূমিকম্প হিসেবে অনুভব করি।
আকাশের বজ্রপাতের ঘটনা আমরা জানি। কিন্তু বজ্রপাত শুধু জলীয়বাষ্পের মেঘে হয় না। হয় ধূলিঝড়ের মধ্যে, ভলকানিক গ্যাসের মধ্যে। অর্থাৎ ভূমির উপাদান, বালু, পানি, গ্যাসে বজ্রপাত হয়। এর অর্থ এসব উপাদান চার্জ সৃষ্টি ও পরিবহনের উপযোগী। এসব উপাদান যখন পৃথিবীপৃষ্ঠে থাকে তখনো একইভাবে চার্জ সৃষ্টি ও বহন করে থাকে এবং বিদ্যুতের অবস্থান ও সঞ্চালনের নিয়ম অনুযায়ী সে তার ধর্ম প্রদর্শন করে। তাই আকাশের বজ্রপাত ও ভূ-অভ্যন্তরের বজ্রপাতের কারণ ও চরিত্র একই। আকাশে বজ্রপাতের কারণে তাপমাত্রা ৩০ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছায় বলে বিজ্ঞানীরা বলছেন। আমার ধারণা, ভূ-অভ্যন্তরে বজ্রপাতের তাপমাত্রার পরিমাণ আরও অনেক বেশি।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল বা কেন্দ্রের অবস্থান বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখব সেগুলো বিশাল জলরাশি ও স্থলভাগের মিলিত স্থানে। জলরাশি সমসত্ত্ব দ্রবণ আর স্থলভাগ অসমসত্ব পদার্থ। জলরাশি লবণ মিশ্রিত। লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইডের দ্রবণের কারণে জলরাশি চার্জ সমৃদ্ধ। এই জলরাশি ইলেকট্রিক কন্ডাক্টর হিসেবে কাজ করে। সূর্যের আলো জলরাশিতে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে উপকূল বরাবর আসার পর মাধ্যম পরিবর্তনের সময় বজ্রপাত হয়। তাই উপকূলে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বেশি।
আমি মনে করি, পৃথিবীর অভ্যন্তরের সব উপাদান এই ইলেকট্রিক ফায়ারের সময় প্রচণ্ড তাপে রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ তেল, গ্যাস, পানি, লবণ, সোনা, রুপা, তামা, ইউরেনিয়াম সবই। এ ক্ষেত্রে আমি প্রথমে খনিজ তেলের বিষয়ে আলোচনা করতে চাই।
পেট্রোলিয়াম অনুসন্ধানের আগে সিসমিক সার্ভের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের গঠন-প্রাণালির আকার-আকৃতি খোঁজা হয়। নির্দিষ্ট পদার্থের অবস্থান একটা গোলকের অংশ নির্দেশ করে। এর উঁচু দিকটা ভূপৃষ্ঠের দিকে থাকে। এর পরেই খোঁজা হয় তেল-গ্যাস। আমরা জানি, কোনো কেন্দ্র থেকে শক্তি উৎসারিত হলে তা রেডিয়ালি ধাবমান হয়। যত দূরে যেতে থাকে তত প্রভাব কমতে থাকে। তার একটা গণিতও আছে।
আর এই পেট্রোলিয়াম অনুসন্ধানে যেহেতু একটা জ্যামিতি গোলকের অংশকে বেছে নেওয়া হয়েছে, তাই এর কেন্দ্রর ভূমিকা পর্যালোচনা করা দরকার।
১৯৫০ সালের দিকে পেট্রোলিয়াম তৈরি হওয়ার মত দিয়েছিলেন কিছু রুশ ও ফরাসি বিজ্ঞানী। তাঁদের মতে, পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে মেন্টেল নামক উত্তপ্ত স্তর রয়েছে। ওই স্তর থেকে নিরন্তর ইথেন তৈরি হচ্ছে এবং এই পদার্থ পৃষ্ঠের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই ইথেন আকস্মিক কোনো তাপে ও চাপের ফলে পেট্রোলিয়ামে রূপান্তরিত হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা ব্যাখ্যা করতে পারেননি ওই চাপ ও তাপ কোথা থেকে আসছে। তাঁদের ওই তত্ত্ব জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি।
আমি বলছি, এই তাপ ও চাপ ভূ-অভ্যন্তরে বজ্রপাতের ফলে সৃষ্টি হচ্ছে এবং তখনই পেট্রোলিয়াম তৈরি হচ্ছে। যেহেতু বজ্রপাতের তাপ ও চাপশক্তি রেডিয়ালে যাচ্ছে, এই যাত্রাপথের একপর্যায়ে ইথেন পেট্রোলিয়ামে রূপান্তরিত হওয়ার উপযুক্ত পর্যায়ে উপনীত হচ্ছে। সেই স্তরেই তেল-গ্যাস সৃষ্টি হচ্ছে।
ভূ-অভ্যন্তরে বজ্রপাতের সম্ভাবনা ও তা থেকে সৃষ্ট তাপমাত্রার পরিমাণের কথা আগেই বলেছি।
অন্য আর একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন। ইউরেনিয়ামের মতো উচ্চ পারমাণবিক সংখ্যা সমৃদ্ধ মৌলিক উপাদান ভূমিকম্পের কেন্দ্রের কাছাকাছি সৃষ্টি হয় বলে আমি ধারণা করছি। কারণ শক্তির সর্বোচ্চ গুরুত্ব অনুভূত হবে বৈদ্যুতিক প্রজ্বলন যেখানে হয় সেখানে, আর সেই প্রচণ্ড শক্তিধর অবস্থানে শক্তিধর উপাদান সৃষ্টি হবে। ইউরেনিয়াম একটি শক্তিধর উপাদান এবং তার অস্তিত্ব সেখানে থাকবে। এ ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হাজির করা সম্ভব। গবেষকেরা লক্ষ করেছেন, ফল্টলাইনে বেশির ভাগ ভূমিকম্পের কেন্দ্র। গবেষকেরা এও লক্ষ করেছেন, ফল্টলাইন যেসব জায়গায় দৃশ্যমান সেখানে র্যাডন গ্যাসের অস্তিত্ব মেলে। ফল্টলাইনদৃশ্যমান নয়, সেখানেও র্যাডন গ্যাসের অস্তিত্ব মেলাকে ধরে নেন, এটা ফল্ট লাইনের অংশ। আর র্যাডন গ্যাস উৎপন্ন হয় থাকে ইউরেনিয়ামের ফিশন থেকে। ধারণা করা যায়, বজ্রপাতের মধ্য দিয়ে ইউরেনিয়াম সৃষ্টি হচ্ছে এবং সেখান থেকে র্যডন গ্যাস বেরিয়ে আসছে।




0 comments:
Thanks for Comment