স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী হওয়াটাই অপরাধের কারণ : আবদুল জব্বার

‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ এই গানটি শোনামাত্রই যার মুখচ্ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠে তিনি আবদুল জব্বার। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সেই দরাজকণ্ঠের শিল্পী। এদেশের চলচ্চিত্রের প্লে-ব্যাক, দেশাত্মবোধক আর আধুনিক গানে যার রয়েছে উজ্জ্বল অবদান। সম্প্রতি তিনি পেয়েছেন সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসের আজীবন সম্মাননা । বাংলানিউজকে তিনি বললেন পুরস্কার প্রাপ্তির অনুভূতিসহ সঙ্গীত প্রসঙ্গে নানা কথা।

সত্তর ও আশির দশকের জনপ্রিয় গায়ক আবদুল জব্বারের বেশিরভাগ সময় কাটে বাসায়। আগের মতো গান নিয়ে তার ব্যস্ততা নেই। তবুও শারীরিক অসুস্থতাকে পাশ কাটিয়ে তাকে মাঝে মধ্যে মঞ্চে দাঁড়াতে দেখা যায়। তাকে দেখেই শ্রোতাদের মধ্যে তৈরি হয় উত্তেজনা। ‘ওরে নীল দরিয়া’ বা ‘আমি তো বন্ধু মাতাল নই’-এর মতো তার গাওয়া জনপ্রিয় গান শুনতে সবাই উদগ্রিব হয়ে উঠেন। 

স্বাধীনতার পর থেকে দরাজ কণ্ঠের গানের জন্য আবদুল জব্বার পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। যার মধ্যে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক, ১৯৮০ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। সঙ্গীতজীবনের শেষপ্রান্তে পৌছে তিনি পেলেন সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস-এর আজীবন সম্মাননা। এই সম্মাননা পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতির কথা জানতে চাইলে আবদুল জব্বার বলেন, এ বয়সে এসে এ ধরণের সম্মান পাওয়ায় ভালো লাগছে। আমাকে মুক্তিযুদ্ধের অবদানের জন্য দেরিতে হলেও এরকম একটি সম্মান দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের শব্দসৈনিক হিসেবে আমি সবসময় গৌরব অনুভব করি। এবার এই গৌরবের স্বীকৃতি দেওয়া হলো। দিনটি আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় হলো ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের দিনটি। সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিকের পুরস্কার প্রদানের দিনটিও আমার মনে থাকবে।

আবদুল জব্বার আক্ষেপ জানিয়ে বলেন, সারা বছর খবর না থাকলেও বিজয় দিবস-একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমার কদর বেড়ে যায় জাতির কাছে। বছর জুড়ে চুপচাপ বসে থাকলেও ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত গান করার জন্য ডাক পাই। এটাই এখন আমার কাছে একধরণের সান্তনা। এবার বিজয় দিবসে বঙ্গভবনসহ বিভিন্ন জাতীয় প্রোগ্রামে গান করার জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছি। যদি সুস্থ থাকি, সবগুলো অনুষ্ঠানে অংশ নিতে চাই।

আগামী দিনের কয়েকটি পরিকল্পনার কথা জানিয়ে আবদুল জব্বার বললেন, স্বীকৃতি মানুষকে অনুপ্রেরণা দেয়। আজীবন সম্মাননার স্বীকৃতি পাওয়ার পর মনে হচ্ছে আমার আরো অনেক কিছু করার বাকি। নতুন করে অনেক কিছুই করার স্বপ্ন দেখছি। বিশেষ করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ঐতিহাসিক গানগুলো সংগ্রহ করার খুব ইচ্ছে। এই গানগুলো যদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করা হয় তাহলে এই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এই অমূল্য সম্পদ হারিয়ে যাবে। গানগুলোর স্বরলিপি তৈরি করা খুব জরুরী। কিন্তু আমার একার পক্ষে তো সম্ভব নয়। আমি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সহকর্মীদের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করছি। আশা করছি এই কাজ শিগগিরই শুরু করতে পারবো।

বর্তমানে আবদুল জব্বারের তত্বাবধানে বিটিভিতে ‘তারা ভরা রাতে’ নামে একটি গানের অনুষ্ঠান নিয়মিত প্রচার হচ্ছে।

কিন্তু এই অনুষ্ঠানটির ভবিষ্যত নিয়ে শংকা প্রকাশ করে আবদুল জব্বার বলেন, কখনো কখনো স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী হওয়াটা অপরাধের কারণ হয়ে উঠে। সরকার পরিবর্তনের কারণে একাধিকবার কালো তালিকাভুক্ত করে বেতার ও টেলিভিশন থেকে আমাকে বিতাড়িত করা হয়েছে। আগামীতে সরকার পরিবর্তন হলে এমনটি যে আর হবে না, তার নিশ্চয়তা নেই। একজন শিল্পীর জন্য বিষয়টি লজ্জাজনক।

0 comments:

Thanks for Comment

Copyright © 2013 MEDIA INFO