জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবানা এখন ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসারী

ঢালিউডের বিউটি কুইনখ্যাত জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবানা এখন ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসারী। বড় পর্দার শাবানার সাথে বাস্তবের শাবানার এখন কোনো মিল নেই। ফুলহাতা কামিজ ও হিজাব সেই শাবানাকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে। এখন তার দেখা পাওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে তো বটেই, কোনো সাংবাদিকের পক্ষেও প্রায় অসম্ভব। স্বামী ওয়াহিদ সাদিক, দুই মেয়ে সুমী ও উর্মি এবং একমাত্র পুত্র নাহিনকে নিয়ে তিনি এখন বসবাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে। গুণী এই অভিনেত্রী এখন অনেকটাই লোকচুক্ষুর আড়ালে। এখন তিনি আত্মীয়স্বজন ছাড়া কারো সাথে দেখা দেন না, কথাও বলেন না।
কোটি দর্শকের স্বপ্নের নায়িকা হিজাবপরা শাবানাকে এখন দেশে-বিদেশে দেখলে তার পরিচিতরা অবাক হন। একজন শীর্ষস্থানীয় নায়িকা হঠাৎ পর্দার অন্তরালে নিজেকে এভাবে লুকিয়ে রাখবেন এটা তারা ভাবতেও পারেন না।
শাবানা তার ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন, হজ করার পর তিনি আর ছবি না করে পর্দা করার সিদ্ধান্ত নেন। তাছাড়া এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে সাধারণ জীবন-যাপন তার খুব ভালো লাগছে। এই দূর প্রবাসে সংসার, সন্তান, নাতি-নাতনি নিয়েই একান্ত সময় কেটে যায় শাবানার। তিনি এখন প্রবাসে একটা বুটিক হাউস দেয়ার চিন্তা করছেন।
শাবানার আসল নাম রত্না। মাত্র ৯ বছর বয়সে ১৯৬২ সালে ‘নতুন সুর’ ছবিতে ছোট্ট মেয়ের চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে শাবানার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু। তার পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে। তার বাবা ফয়েজ চৌধুরী একসময় চিত্র পরিচালক ছিলেন। এরও আগে তার আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় মেয়েকে ফিল্মে দিয়ে এবং নিজে চলচ্চিত্রে জড়িয়ে ভাগ্য গড়ার চেষ্টা চালাতে থাকেন। একদিন তার সে আশা পূরণ হয়েছিল। শাবানা তখন রত্না নামে ‘নতুন সুর’ ছবিতে অভিনয়ের পরে তালাশ, সাগর, ভাইয়াসহ আরও কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করলেন।
১৯৬৬ সাল থেকে তার উত্থান ঘটতে শুরু হয়। সে বছরই ‘আবার বনবাসে রূপবান’-এ সুলতানা জামানের কন্যা সোনাভানের চরিত্রে অভিনয় করে নায়িকা হিসেবে রত্না প্রথম দর্শকের মন কাড়লেন। এরপর ‘জংলি মেয়ে’ এবং ‘চকোরি’ ছবি দুটিতে প্রধান নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করার পর শাবানাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
শাবানা তার অভিনয়ের প্রথম দিককার সম্পর্কে একবার বলেছিলেন, ১৯৬৭ সালে ‘চকোরি’ রিলিজের পর থেকে আমার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল ঢাকার বাইরে লাহোর ও করাচিতে। ১৯৬৮ সালে নায়িকা হিসেচে চাঁদ আওর চাঁদনি, ভাগ্যচক্র এবং কুলিতে; ১৯৬৯ সালে-দাগ, মুক্তি; ১৯৭০ সালে ‘পায়েল, সমাপ্তি, ছদ্মবেশী, বাবুল, মধু মিলন ও একই অঙ্গে এত রূপ’-এ অভিনয় করলাম। রাজ্জাক-সুচন্দা জুটির অসম্ভব জনপ্রিয়তার সময় কাজী জহিরের ‘মধুমিলন’-এ অভিনয় দেখে দর্শক প্রশংসা শুরু করল আমাকে নিয়ে। দ্বৈত অনুরাগের সংঘাত ও পরিণতির ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এ ছবি দর্শকের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। আমার তো মনে হয়, ‘মধু মিলন’ ছবিতে সম্ভবত প্রথম হৃদয়স্পর্শী অভিনয় দেখাতে সক্ষম হয়েছিলাম।
স্বাধীনতার পর আবার ছবি নির্মাণ শুরু। শাবানা আগের জনপ্রিয়তা নিয়ে ১৯৭২ সালেই ৮টি ছবির নায়িকা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘ওরা এগারো জন’ আর কাজী জহিরের ‘অবুঝ মন’ করে সারা বাংলাদেশে জানান দিলেন ঢাকার ফিল্মে শাবানার তুলনা হয় না। অন্যান্য ছবি যেমন- সমাধান, ছন্দ হারিয়ে গেল, এরাও মানুষ, মুন্না আওর বিজলি, চৌধুরী বাড়ি আর স্বীকৃতিও সফল হয়েছিল।
শাবানা মোট ১০ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি প্রথম এই পুরস্কার পান ‘জননী’ সিনেমার জন্য। এরপর ১৯৮০, ১৯৮২, ১৯৮৩, ১৯৮৪, ১৯৮৭, ১৯৯০, ১৯৯১, ১৯৯৩ এবং ১৯৯৪ সালেও তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। তার অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে আছে ১৯৯১ সালে প্রযোজক সমিতি পুরস্কার, ১৯৮২ ও ১৯৮৭ সালে বাচসাস পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে আর্ট ফোরাম পুরস্কার, ১৯৮৮ সালে আর্ট ফোরাম পুরস্কার, ১৯৮৮ সালে নাট্যসভা পুরস্কার, ১৯৮৭ সালে কামরুল হাসান পুরস্কার, ১৯৮২ সালে নাট্য নিকেতন পুরস্কার, ১৯৮৫ সালে ললিতকলা একাডেমী পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে সায়েন্স ক্লাব পুরস্কার, ১৯৮৯ সালে কথক একাডেমী পুরস্কার এবং জাতীয় যুব সংগঠন পুরস্কার।
শাবানা ১৯৭৩ সালে ওয়াহিদ সাদিককে বিয়ে করেন। তখন সাদিক ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। শাবানার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এস এস প্রোডাকশনের দেখাশোনার ভার তার স্বামীর ওপর পড়ে। ১৯৯৭ সালে শাবানা দীর্ঘ ৩৪ বছর কাজ শেষে হঠাৎ চলচ্চিত্র-অঙ্গন থেকে বিদায় নেয়ার ঘোষণা দেন। এরপর তিনি আর নতুন কোনো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি। ২০০০ সালে তিনি সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।

0 comments:

Thanks for Comment

Copyright © 2013 MEDIA INFO