অপারেশন শাপলা : অনুসন্ধানে আল-জাজিরা

গত ৫ মে গভীর রাতে মতিঝিলের নিষ্প্রদীপ শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির ১০ হাজার সদস্যের যৌথ অভিযানে কত লোক নিহত হয়েছিল তা এখনো অজ্ঞাত। সরকারি শ্বেতপত্রে নিহতের সংখ্যা ১১ জন দাবি করে বলা হয়, রাতে অভিযানের সময় নয়, ৫ মে দিনের বেলায় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় এসব লোক নিহত হয়। শ্বেতপত্রে আরো বলা হয়, তাদের কয়েকজনের লাশ হেফাজতে ইসলামের সমাবেশস্থলে পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যম আল-জাজিরা অনুসন্ধান চালাচ্ছে। তাদের অনুসন্ধানের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্যের ভিন্নতা ফুটে উঠেছে। আল-জাজিরা হত্যাযজ্ঞের একটি স্পর্শকাতর ভিডিও চিত্র পেয়েছে।
ভিডিও চিত্রে ঢাকার একটি সরকারি গোরস্তান দেখানো হয়েছে। আল-জাজিরার প্রতিনিধি গোরখোদক আবদুল জলিলের সঙ্গে দেখা করেন। তার বয়স ২০-২২ বছর। আবদুল জলিল বধির ও বোবা। চেক শার্ট পরিহিত জলিল ইশারা ইঙ্গিতে আল-জাজিরার প্রতিনিধির কাছে ঘটনার বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করে। একটি গোরস্তানে দাঁড়িয়ে আলাপকালে জলিল জানিয়েছে, সে রাতে এ গোরস্তানে ১৪ টি লাশ কবর দিয়েছে। নিহতরা ছিল শশ্রুধারী ও গুলিবিদ্ধ।
ভিডিও চিত্রে হাজার হাজার মানুষকে আর্তনাদ করতে এবং বহু লোককে উঁচু দেয়াল টপকে পালাতে দেখা গেছে। আলিকো ভবনের সামনে পুলিশ টুপি দাড়িওয়ালাদের বন্দুক দিয়ে পেটাচ্ছে। রক্তাক্ত রাজপথে শ্বেত শুভ্র বহু লাশ লুটোপুটি খাচ্ছে। গুলিবিদ্ধ অনেককে মাটিতে ঢলে পড়তে দেখা যাচ্ছে। অনেকের শরীর রক্তাক্ত। পুলিশের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অ্যাম্বুলেন্সে লাশ তুলতে দেখা যাচ্ছে।
মানবাধিকার গ্রুপগুলো এ ঘৃণ্য ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছে। নিহতদের সংখ্যা অধিক বলে প্রতীয়মান হওয়ায় আল-জাজিরার প্রতিনিধি জেমস বেইস পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির মুখোমুখি হন। সাক্ষাৎকারে দীপু মনি হতাহতদের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের প্রদত্ত সংখ্যা সঠিক বলে দাবি করেছেন।
হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহতদের সঠিক সংখ্যা প্রকাশে বিভিন্ন সংস্থা নিরপেক্ষ ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছে। এ ব্যাপারে জেমস বেইস পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবসময় অনুসন্ধান করা যেতে পারে। যে কোনো ঘটনার তদন্ত হতে পারে। সরকার অথবা এ দেশের অধিকাংশ লোক মনে না করে যে, এ ব্যাপারে কোনো বিতর্ক আছে।
সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, ৫ মে ঢাকা অবরোধের দিন পুলিশ ও হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে ১১ জন নিহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, বিক্ষোভে নিহতদের সঠিক সংখ্যা অস্পষ্ট। শনিবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে বলেছে, নিরপেক্ষ সংবাদ মাধ্যমের খবরে নিহতদের সংখ্যা আনুমানিক ৫০ জন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কারো হিসাবেই নিহতের সংখ্যা ৫০ জনের বেশি উল্লেখ করা হয়নি। হেফাজতে ইসলাম দাবি করেছে যে, তাদের সমাবেশে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ব্যাপক সংখ্যক লোক হতাহত হয়েছে এবং অচিরেই নিহতদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
- THESUNRISETODAY.COM

0 comments:

Thanks for Comment

Copyright © 2013 MEDIA INFO