সৌভাগ্যের খাবারটি খেও না: মাইকেল লুইস
যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় নন-ফিকশন লেখক এবং সাংবাদিক মাইকেল লুইস। তার লেখা বহু বই পৃথিবী বিখ্যাত। জনপ্রিয় ও ধনী লেখক লুইস ২০১২ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ পান।,
অসাধারণ বক্তৃতায় মুগ্ধ হয়ে যায় প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। মাইকেল লুইসের সমাবর্তন বক্তৃতাটি সংক্ষিপ্ত আকারে অনুবাদ করে দেওয়া হলো। যেখানে তোমরা বসে আছো, সেখানে ৩০ বছর আগে আমিও ছিলাম। সে সময়টিতে কোনো এক বুড়ো আমার মতই বক্তৃতা দিতে এসেছিল। কি বলেছিল তার কিছুই মনে নেই। এমনকি সেই ব্যক্তিটি কে ছিলেন তাও মনে নেই। আমার শুধু সমাবর্তন সময়টির কথাই মনে পড়ে। অত্যন্ত চাঞ্চলকর অনুভব করছিলাম। এমনকি অন্যরকম স্বস্তিও পাচ্ছিলাম। তোমাদেরও নিশ্চয় এমন অনুভূতি হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বাস করো- আমার মোটেও এ মুহূর্ত ভালো লাগছিল না। আমার জীবনের মূল্যবান সেরা চারবছর তারা আমাকে দিয়েছে। আমিও তো ৪ বছর সময় দিলাম। অথচ তারা আমাকে বের করে দিয়ে ধন্যবাদ জানাচ্ছে!
এখন আমার অনেক কিছুই মনে পড়ছে। পড়াশোনা শেষ করার পর আমার তেমন কোনো মূল্যই ছিল না। আমার বিষয় ছিল ‘আর্ট হিস্টরি’। চাকরির বাজারের জন্য আমি মোটেও চাকরির বাজারের জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। কি করবো কিছুই মাথায় ঢুকছিল না। কিন্তু তারপরও কোনোভাবে জীবনের যুদ্ধে এখন আমি ধনী এবং জনপ্রিয়। আমি সে বিষয়েই কথা বলতে চাই। তোমরা এখান থেকে বের হওয়ার আগে জেনে যাও জীবনের বাঁক কিভাবে বদলে যায়। জীবন একটি রহস্যজনক অধ্যায়। এটা তোমাদের বুঝতে হবে। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি পাশ করেছি। কিন্তু কখনও এ সম্পর্কে একটা বাক্যও লেখা হয়নি। এমনকি যখন আমি পড়তাম তখনও কিছুই লিখতাম না। লেখার বিষয়ে কখনও ভেবেও দেখিনি। অনেকেই মনে করেন, আর্ট হিস্টরি পড়েছি বলে লেখার হাতেখড়ি হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই। আসলে এটা ভুল ধারণা।
তবে থিসিসের কাজ করতে গিয়ে লেখার বিষয়টি মাথায় আসে। আমার থিসিস তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন অধ্যাপক উইলিয়াম চাইল্ড। তিনি আমার থিসিস বিষয় নির্ধারণ করে দেন, গ্রিক ও রোমান নিদর্শনের উপর। ঈশ্বর আমাকে অধ্যাপক উইলিয়ামকে হয়ত উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। থিসিসের কাজ করতে গিয়েই প্রাচিন কৃষ্টির উপর ব্যাপক আগ্রহ অনুভব করতে থাকি। থিসিসের রিপোর্ট লেখার সময় এতো মনোমুগ্ধ হয়ে পড়ি যে- আমি তখনই সিদ্ধান্ত নেই, বাকিটা জীবন লেখালিখি করেই পার করে দিব।
যেদিন থিসিসের ডিফেন্স হলো তখন আমি অপেক্ষা করছিলাম অধ্যাপক উইলিয়ামের মন্তব্য পাওয়ার। এতো যত্ন করে লেখা রিপোর্ট সম্পর্কে তিনি কি বলবেন সেটাই জানতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু তিনি কিছুই বলছিলেন না। বাধ্য হয়ে প্রশ্ন করলাম, আমার লেখা সম্পর্কে তোমার মন্তব্য কি? অধ্যাপক উইলিয়াম গম্ভীর হয়ে বললেন, ভুলেও এর সঙ্গে থাকার কথা চিন্তা করো না।
আমি তার কথা শুনিনি। আমি তাই করেছি যা অন্য সবাই করে। কিছু না ভেবেই কাজ শুরু করে দেওয়া। সে রাতেই আমি লিখেছি। কোনো কিছু চিন্তা করা ছাড়াই লেখা শুরু করেছি।
২.
কয়েকদিন পর রাতের খাবারের দাওয়াত পেলাম। শুনে অবাক হবে, বিশ্বখ্যাত সালোমন ব্রাদারস্ প্রতিষ্ঠানের মালিকের স্ত্রী আমাকে দাওয়াত দিলেন। গেলাম সেখানে। আমার সামনেই তিনি তার স্বামীকে অনুরোধ করলেন, আমাকে চাকরি দেওয়ার। বিষয়টি আমার কাছে বিস্ময় লাগার মতো ছিল। আমি এ প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে খুব একটা জানতাম না। তবুও এটা জানা ছিল যে এ প্রতিষ্ঠানটি ওয়াল স্ট্রিটের সবচেয়ে নামিদামি প্রতিষ্ঠান।
শেষ পর্যন্ত চাকরি হলো। দেড় বছর চাকরির পর হুট করেই মালিক আমাকে ডাকলেন। আমার হাতে হাজার ডলারের চেক তুলে দিলেন। বললেন, প্রফেশনাল ইনভেস্টারদের ব্যবসা সম্পর্কে জানানোর জন্য এবং প্রতিষ্ঠানকে জনপ্রিয় করার জন্য কিছু লিখতে হবে। এই প্রথমবার লেখার মতো বিষয় পেলাম। বিষয়- সালোমান ব্রাদারস্। এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করা সৌভাগ্যের। আমি পরবর্তী থিসিসের কাজ পেলাম মনে হলো। ঘরে এসে বাবাকে বললাম, আমি চাকরি ছেড়ে দিচ্ছি। লেখার জন্য তো হাজার ডলার পাওয়া যায়, তবে তো নিজে কিছু লিখলেই মিলিয়ন ডলার কামানো সম্ভব। বাবা চুপ করে শুনলেন। তারপর বললেন, এই প্রতিষ্ঠানে আগে ১০ বছর চাকরি করো। জীবনটাকে গুছিয়ে নাও। তারপর বই লেখ। আমি এমনটা ভাবিনি। তখন আমার বয়স ২৬ বছর। আমি যদি আরও ১০ বছর অপেক্ষা করি তবে বয়স হবে ৩৬। সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই না। এছাড়া মনেসময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই না। এছাড়া মনে হলো- কখনও লেখাও হবে না। আমি বই লিখে ফেললাম। বইয়ের নাম ‘লায়ারস পোকার’। এ বইটিএ বইটি মিলিয়নএ বইটি মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছিল। তখন আমার বয়স ছিল কপি বিক্রি হয়েছিল। তখন আমার এ বইটি মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছিল। তখন আমার বয়স ছিল ২৮। আমার অন্যরকম ক্যারিয়ার হলো। কিছুটা পরিচিতিও পেলাম। হুট করেই সমালোচকরা বলা শুরু করলো,আমার অন্যরকম ক্যারিয়ার হলো। কিছুটা পরিচিতিও পেলাম। হুট করেই সমালোচকরা বলা শুরু করলো, আমি নাকি জন্মেছি লেখক হওয়ার জন্য। হাস্যকর।
৩.
আমি এখন ক্যালিফোর্নিয়া শহরে থাকি। কয়েকবছর আগে আমার বাড়ির কাছেই মনোবিজ্ঞানের কয়েকজন গবেষক একটি গবেষণা করছিলেন। এ জন্যই শিক্ষার্থী পেলেই তারা পরীক্ষাগারে নিয়ে যেতেন। শিক্ষার্থী পেয়ে দুটি দল করা হলো। তিনজন ছেলে, তিনজন মেয়ে। দুটি দলকে আলাদা আলাদা কক্ষে থাকতে দেওয়া হলো এবং একজনকে নেতা নির্বাচিত করে দেওয়া হলো। তারপর থেকে নেতার কথা সবাই মানতেও থাকলো। কয়েক ঘণ্টা পার হওয়ার পর তাদেরকে চার প্লেট খাবার দেওয়া হলো।
বিষয়টি কেমন যেন। তাই না? মানুষ তিনজন কিন্তু খাবার চার প্লেট। গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছিলেন, চার নম্বর প্লেটটি কে খায়। তাদের ধারণা ছিল, খাবারটি মিলেমিশে খাবে। কিন্তু ধারণাটি ভুল ছিল। চার নম্বর প্লেটটি খেল তাদের নেতা।
এই নেতা কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেনি। তার মধ্যে নেতার কোনো যোগ্যতাই ছিল না। সে নেতা হয়েছে ভাগ্যের জোরে। গবেষকরা মন মতই তাকে নেতা বানিয়ে দিয়েছিল। এজন্য নেতার কোনো মহত্ত্ব তার মধ্যে দেখা যায়নি।
তোমরা পাশ করে চলে যাচ্ছো। তোমাদের সামনেও এমন নেতা হওয়ার সৌভাগ্য দেখা দিতে পারে। এটাকে যদি সৌভাগ্য হিসেবে ধরে নাও তবে তো সবই ভাগ্যের উপর। তুমি ভাগ্যবান কারণ তোমার মা-বাবা আছে। তুমি সৌভাগ্যবান কারণ তুমি পৃথিবীর ধনী একটি দেশে জন্ম নিয়েছ। তুমি সৌভাগ্যবান কারণ তুমি প্রিন্সটনের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে পড়তে পেরেছ। সুতরাং এতো সৌভাগ্যের ভেতর হয়ত তুমি উৎসর্গ বা বিসর্জন দেওয়া ভুলে গেছ। কিংবা কোনো কিছু উৎসর্গ করার বিষয়টিও তোমাদের মাথায় নেই।
তোমাদের সবার সামনে এক প্লেট বেশি খাবারের সুযোগ আসবে। সবাই এমন সুযোগ জীবনে বহুবার পাবে।
তোমরা দেখবে- খুব সহজেই অতিরিক্ত প্লেটের খাবার তুমি খেতে পারবে। কিন্তু এই অতিরিক্ত খাবারের প্লেটটি না খাওয়ার মধ্যে অন্যরকম আনন্দ আছে। নেতা হওয়ার অন্যরকম আদর্শ লুকিয়ে আছে।
ভুলে যেও না- নিজের দেশের জন্য কাজ করা মানে, পৃথিবীর সব দেশের জন্য কাজ করা।
-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’
অসাধারণ বক্তৃতায় মুগ্ধ হয়ে যায় প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। মাইকেল লুইসের সমাবর্তন বক্তৃতাটি সংক্ষিপ্ত আকারে অনুবাদ করে দেওয়া হলো। যেখানে তোমরা বসে আছো, সেখানে ৩০ বছর আগে আমিও ছিলাম। সে সময়টিতে কোনো এক বুড়ো আমার মতই বক্তৃতা দিতে এসেছিল। কি বলেছিল তার কিছুই মনে নেই। এমনকি সেই ব্যক্তিটি কে ছিলেন তাও মনে নেই। আমার শুধু সমাবর্তন সময়টির কথাই মনে পড়ে। অত্যন্ত চাঞ্চলকর অনুভব করছিলাম। এমনকি অন্যরকম স্বস্তিও পাচ্ছিলাম। তোমাদেরও নিশ্চয় এমন অনুভূতি হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বাস করো- আমার মোটেও এ মুহূর্ত ভালো লাগছিল না। আমার জীবনের মূল্যবান সেরা চারবছর তারা আমাকে দিয়েছে। আমিও তো ৪ বছর সময় দিলাম। অথচ তারা আমাকে বের করে দিয়ে ধন্যবাদ জানাচ্ছে!
এখন আমার অনেক কিছুই মনে পড়ছে। পড়াশোনা শেষ করার পর আমার তেমন কোনো মূল্যই ছিল না। আমার বিষয় ছিল ‘আর্ট হিস্টরি’। চাকরির বাজারের জন্য আমি মোটেও চাকরির বাজারের জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। কি করবো কিছুই মাথায় ঢুকছিল না। কিন্তু তারপরও কোনোভাবে জীবনের যুদ্ধে এখন আমি ধনী এবং জনপ্রিয়। আমি সে বিষয়েই কথা বলতে চাই। তোমরা এখান থেকে বের হওয়ার আগে জেনে যাও জীবনের বাঁক কিভাবে বদলে যায়। জীবন একটি রহস্যজনক অধ্যায়। এটা তোমাদের বুঝতে হবে। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি পাশ করেছি। কিন্তু কখনও এ সম্পর্কে একটা বাক্যও লেখা হয়নি। এমনকি যখন আমি পড়তাম তখনও কিছুই লিখতাম না। লেখার বিষয়ে কখনও ভেবেও দেখিনি। অনেকেই মনে করেন, আর্ট হিস্টরি পড়েছি বলে লেখার হাতেখড়ি হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই। আসলে এটা ভুল ধারণা।
তবে থিসিসের কাজ করতে গিয়ে লেখার বিষয়টি মাথায় আসে। আমার থিসিস তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন অধ্যাপক উইলিয়াম চাইল্ড। তিনি আমার থিসিস বিষয় নির্ধারণ করে দেন, গ্রিক ও রোমান নিদর্শনের উপর। ঈশ্বর আমাকে অধ্যাপক উইলিয়ামকে হয়ত উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। থিসিসের কাজ করতে গিয়েই প্রাচিন কৃষ্টির উপর ব্যাপক আগ্রহ অনুভব করতে থাকি। থিসিসের রিপোর্ট লেখার সময় এতো মনোমুগ্ধ হয়ে পড়ি যে- আমি তখনই সিদ্ধান্ত নেই, বাকিটা জীবন লেখালিখি করেই পার করে দিব।
যেদিন থিসিসের ডিফেন্স হলো তখন আমি অপেক্ষা করছিলাম অধ্যাপক উইলিয়ামের মন্তব্য পাওয়ার। এতো যত্ন করে লেখা রিপোর্ট সম্পর্কে তিনি কি বলবেন সেটাই জানতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু তিনি কিছুই বলছিলেন না। বাধ্য হয়ে প্রশ্ন করলাম, আমার লেখা সম্পর্কে তোমার মন্তব্য কি? অধ্যাপক উইলিয়াম গম্ভীর হয়ে বললেন, ভুলেও এর সঙ্গে থাকার কথা চিন্তা করো না।
আমি তার কথা শুনিনি। আমি তাই করেছি যা অন্য সবাই করে। কিছু না ভেবেই কাজ শুরু করে দেওয়া। সে রাতেই আমি লিখেছি। কোনো কিছু চিন্তা করা ছাড়াই লেখা শুরু করেছি।
২.
কয়েকদিন পর রাতের খাবারের দাওয়াত পেলাম। শুনে অবাক হবে, বিশ্বখ্যাত সালোমন ব্রাদারস্ প্রতিষ্ঠানের মালিকের স্ত্রী আমাকে দাওয়াত দিলেন। গেলাম সেখানে। আমার সামনেই তিনি তার স্বামীকে অনুরোধ করলেন, আমাকে চাকরি দেওয়ার। বিষয়টি আমার কাছে বিস্ময় লাগার মতো ছিল। আমি এ প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে খুব একটা জানতাম না। তবুও এটা জানা ছিল যে এ প্রতিষ্ঠানটি ওয়াল স্ট্রিটের সবচেয়ে নামিদামি প্রতিষ্ঠান।
শেষ পর্যন্ত চাকরি হলো। দেড় বছর চাকরির পর হুট করেই মালিক আমাকে ডাকলেন। আমার হাতে হাজার ডলারের চেক তুলে দিলেন। বললেন, প্রফেশনাল ইনভেস্টারদের ব্যবসা সম্পর্কে জানানোর জন্য এবং প্রতিষ্ঠানকে জনপ্রিয় করার জন্য কিছু লিখতে হবে। এই প্রথমবার লেখার মতো বিষয় পেলাম। বিষয়- সালোমান ব্রাদারস্। এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করা সৌভাগ্যের। আমি পরবর্তী থিসিসের কাজ পেলাম মনে হলো। ঘরে এসে বাবাকে বললাম, আমি চাকরি ছেড়ে দিচ্ছি। লেখার জন্য তো হাজার ডলার পাওয়া যায়, তবে তো নিজে কিছু লিখলেই মিলিয়ন ডলার কামানো সম্ভব। বাবা চুপ করে শুনলেন। তারপর বললেন, এই প্রতিষ্ঠানে আগে ১০ বছর চাকরি করো। জীবনটাকে গুছিয়ে নাও। তারপর বই লেখ। আমি এমনটা ভাবিনি। তখন আমার বয়স ২৬ বছর। আমি যদি আরও ১০ বছর অপেক্ষা করি তবে বয়স হবে ৩৬। সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই না। এছাড়া মনেসময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই না। এছাড়া মনে হলো- কখনও লেখাও হবে না। আমি বই লিখে ফেললাম। বইয়ের নাম ‘লায়ারস পোকার’। এ বইটিএ বইটি মিলিয়নএ বইটি মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছিল। তখন আমার বয়স ছিল কপি বিক্রি হয়েছিল। তখন আমার এ বইটি মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছিল। তখন আমার বয়স ছিল ২৮। আমার অন্যরকম ক্যারিয়ার হলো। কিছুটা পরিচিতিও পেলাম। হুট করেই সমালোচকরা বলা শুরু করলো,আমার অন্যরকম ক্যারিয়ার হলো। কিছুটা পরিচিতিও পেলাম। হুট করেই সমালোচকরা বলা শুরু করলো, আমি নাকি জন্মেছি লেখক হওয়ার জন্য। হাস্যকর।
৩.
আমি এখন ক্যালিফোর্নিয়া শহরে থাকি। কয়েকবছর আগে আমার বাড়ির কাছেই মনোবিজ্ঞানের কয়েকজন গবেষক একটি গবেষণা করছিলেন। এ জন্যই শিক্ষার্থী পেলেই তারা পরীক্ষাগারে নিয়ে যেতেন। শিক্ষার্থী পেয়ে দুটি দল করা হলো। তিনজন ছেলে, তিনজন মেয়ে। দুটি দলকে আলাদা আলাদা কক্ষে থাকতে দেওয়া হলো এবং একজনকে নেতা নির্বাচিত করে দেওয়া হলো। তারপর থেকে নেতার কথা সবাই মানতেও থাকলো। কয়েক ঘণ্টা পার হওয়ার পর তাদেরকে চার প্লেট খাবার দেওয়া হলো।
বিষয়টি কেমন যেন। তাই না? মানুষ তিনজন কিন্তু খাবার চার প্লেট। গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছিলেন, চার নম্বর প্লেটটি কে খায়। তাদের ধারণা ছিল, খাবারটি মিলেমিশে খাবে। কিন্তু ধারণাটি ভুল ছিল। চার নম্বর প্লেটটি খেল তাদের নেতা।
এই নেতা কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেনি। তার মধ্যে নেতার কোনো যোগ্যতাই ছিল না। সে নেতা হয়েছে ভাগ্যের জোরে। গবেষকরা মন মতই তাকে নেতা বানিয়ে দিয়েছিল। এজন্য নেতার কোনো মহত্ত্ব তার মধ্যে দেখা যায়নি।
তোমরা পাশ করে চলে যাচ্ছো। তোমাদের সামনেও এমন নেতা হওয়ার সৌভাগ্য দেখা দিতে পারে। এটাকে যদি সৌভাগ্য হিসেবে ধরে নাও তবে তো সবই ভাগ্যের উপর। তুমি ভাগ্যবান কারণ তোমার মা-বাবা আছে। তুমি সৌভাগ্যবান কারণ তুমি পৃথিবীর ধনী একটি দেশে জন্ম নিয়েছ। তুমি সৌভাগ্যবান কারণ তুমি প্রিন্সটনের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে পড়তে পেরেছ। সুতরাং এতো সৌভাগ্যের ভেতর হয়ত তুমি উৎসর্গ বা বিসর্জন দেওয়া ভুলে গেছ। কিংবা কোনো কিছু উৎসর্গ করার বিষয়টিও তোমাদের মাথায় নেই।
তোমাদের সবার সামনে এক প্লেট বেশি খাবারের সুযোগ আসবে। সবাই এমন সুযোগ জীবনে বহুবার পাবে।
তোমরা দেখবে- খুব সহজেই অতিরিক্ত প্লেটের খাবার তুমি খেতে পারবে। কিন্তু এই অতিরিক্ত খাবারের প্লেটটি না খাওয়ার মধ্যে অন্যরকম আনন্দ আছে। নেতা হওয়ার অন্যরকম আদর্শ লুকিয়ে আছে।
ভুলে যেও না- নিজের দেশের জন্য কাজ করা মানে, পৃথিবীর সব দেশের জন্য কাজ করা।
-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’
0 comments:
Thanks for Comment