যেভাবে অনুপ্রেরণায় আন্দোলিত রাখবেন আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের
উপরে উল্লেখিত দুটি পদ্ধতির কোনটিই সুদীর্ঘ সময়ের জন্য কাউকে অনুপ্রেরণা যোগাতে পারে না। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে লেখা-পড়ায় মনোঃনিবেশ করাতে ল্যাপটপ কেড়ে নিয়ে শাস্তি দেয়ার চাইতে বরং একজন ভাল শিক্ষকের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। অফিসে কর্তাব্যক্তি হিসেবে আপনিও কর্মীদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে কিছু কৌশলের আশ্রয় নিতে পারেন।
কেন আপনার কর্মী ভালো কাজ করার উৎসাহ হারাচ্ছে তা খুঁজে বের করুন
কাজের প্রতি হারিয়ে যাওয়া উৎসাহ আবার ফিরিয়ে আনার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে মানসিকতা পরিবর্তনের কারণ খুঁজে বের করা। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে আপনার কর্মী অলসতাবশত কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন,কিন্তু এর পেছনে মনস্তাত্বিক কিছু কারণ থাকতে পারে। যেমন:
উদ্দেশ্যহীনতায় ভোগা- আপনার টিমের সদস্যরা যদি কোম্পানির লক্ষ্য সম্পর্কে অবগত না থাকেন তবে তাঁরা কাজের মান নিয়ে অবহেলা করতে থাকবেন। তাই আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি পরিবর্তন সম্পর্কে কর্মীদেরকে অবহিত করে দিন। একটি মিশন শেষ হলে আরেকটি মিশন নির্ধারণ করুন। কোম্পানির বর্তমান অবস্থান এবং যে উদ্দেশ্য নিয়ে আপনারা কাজে নেমেছেন তা সম্পর্কে সবসময় খোলা-মেলা আলোচনা করুন।
কাজের উপর কতৃত্ব হ্রাস পাওয়া- গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিজের কাজের উপর কিছুটা হলেও নিয়ণ্ত্রণ পেলে কর্মীরা কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কেবল বসের কথায় উঠতে-বসতে হলে অনেকেরই কাজের প্রতি অনিহা জন্মে। কর্মীদেরকে তাদের নিজেদের মত করে কাজ করার স্বাধীনতা দিন।
ব্যক্তিগত সমস্যা- একজন মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে কোন সমস্যা ঘটলে তা অবশ্যই কর্মক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কর্মজীবন এবং ব্যক্তিজীবন দুটোই পরস্পরের সাথে নিদারূণভাবে সম্পর্কিত। কর্মীদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন। তাদের সমস্যা সম্পর্কে নিজেকে অবহিত রাখুন এবং সেগুলো কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করুন।
সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিন
একটি টাইমলাইন তৈরি করুন- ঠিক কতটা সময়ের মধ্যে আপনি একটি কাজ শেষ করতে চান তা সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করে দিন। কোন কাজ শেষ করার জন্য অনির্দিষ্টকাল সময় বেঁধে দিলে তা কখনও শেষ হবে না।
লক্ষ্য অর্জনে কতটুকু অগ্রগতি সাধন হয়েছে তা সবাইকে জানান- এক্ষেত্র আপনি চার্ট বা হোয়াইট বোর্ডের সাহায্য নিতে পারেন। আপনাদের প্রতিষ্ঠান যে দিন দিন উন্নতি লাভ করছে তার একটি নিদর্শন চার্টে এঁকে তা প্রদশর্ন করতে পারেন। এটি নিঃসন্দেহে সবার মনোবল বৃ্দ্ধি করবে এবং পরবর্তি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে উদ্বুদ্ধ করবে।
কাজ সম্পর্কে সঠিক মন্তব্য করুন
প্রত্যেক কর্মীই তার কাজ সম্পর্কে সৎ এবং সঠিক মন্তব্য পাওয়ার দাবি রাখেন। প্রশংসা যেমন ভালো কাজ করতে উৎসাহ দেয়, তেমনি সমালোচনাও আমাদেরকে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে সাহায্য করে। সবচেয়ে বড় কথা হলো এরকম মন্তব্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে কর্মী এবং কর্তাব্যক্তির মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।
সাফল্যের স্বীকৃ্তি দিন- যেকোন ধরণের ভালো কাজের জন্য আপনার টিমকে বাহবা দিন। এর ফলে তারা সবসময় আরও বেশি ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা পাবেন। তাছাড়াও এধরনের বাহবা কর্মীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং দ্বায়িত্বশীলতা সৃষ্টি করে।
আন্তরিকতা নিয়ে প্রশংসা করুন- কখনই দায়সারা ভাবে কারও প্রশংসা করবেন না। কেউ যদি সত্যিই কোন ভাল কাজ করে থাকেন তবে আন্তরিকতা নিয়ে তাকে কাজের জন্য ধন্যবাদ জানান।
কর্মীদেরকে বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করুন- প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের পরিশ্রমের মূল্য দিন। ভালো কাজের জন্য নানাভাবে তাদেরকে আপনি পুরস্কৃ্ত করতে পারেন। বেতন বাড়িয়ে, ছুটি মঞ্জুর করে বা বিশেষ প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়ে আপনি তাদের প্রতি সম্মান দেখাতে পারেন। ফলে কর্মীদের মাঝে বার্তা পৌঁছে যাবে যে আপনি সাফল্যের এই ধারা অব্যাহত দেখতে চান।
সব কথার শেষকথা এই যে, আপনি যদি কোন কর্মীর কর্মউদ্দীপনায় ঘাটতি দেখতে পান, তবে শুরুতেই ভেবে বসবেন না যে তিনি অলসতা বা অসাবধানতার বশে কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন। সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করুন এবং সেই অনুযায়ী উদ্দেশ্য/লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিন। প্রশংসা এবং উৎসাহ যোগানোর মাধ্যমে একটি সুন্দর কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করুন। এভাবে আপনি আনায়াসেই গড়ে তুলতে পারবেন একটি দারূণ কর্মচঞ্চল টিম যারা কিনা নানারকম প্রতিকূলতা সামলে আপনার প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে যাবে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে।
- See more at: http://finance.priyo.com/node/9967#sthash.6eYsXGzQ.dpuf
0 comments:
Thanks for Comment