হৃদযন্ত্র ভালো রাখার ৩০ উপায়

১. কাজ করুন, বাদাম খান

 গবেষকরা ওগুলোর নামই দিয়েছেন আলফা-নাটস। যাতে আলফা লিনোলেনিক এসিড থাকে। এটি এক ধরনের ওমেগা-৩ ফ্যাট যা শরীরের অভ্যন্তরে প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে। বাদাম এক ধরনের এন্টি-অক্সিডেন্ট যা শরীরে গ্লুকোজকে শক্তিতে পরিণত করে। যুক্তরাষ্ট্রের ডিক বাটকাস হার্ট অ্যান্ড ভাসকুলার স্ক্রিনিং সেন্টারের পরিচালক ড. ল্যারি স্যানটোরা তার গবেষণা থেকে এই মত দিয়েছেন। আর ইয়েলের গবেষকরা বলছেন, প্রতি আধাবেলা আধা কাপ বাদাম আপনার শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া সতেজ রাখবে।
২. নাড়িস্পন্দন মেপে রাখুন

ঘুম থেকে উঠে বিছানা ছেড়ে স্লিপারে পা গলানোর আগে নাড়ির স্পন্দন মেপে নিন। আর তা অভ্যাসে পরিণত করুন। দেখুন প্রতি মিনিটে কতবার স্পন্দিত হচ্ছে আপনার নাড়ি। এই পরামর্শ যুক্তরাষ্ট্রের গ্র্যান্ড রাউন্ডসের ভাইস চেয়ারম্যান কার্ডিওথোরাকিক সার্জন ড. পিয়েরে থিওডোরের। আপনি স্বাস্থ্যবান হলে আপর স্পন্দন হবে ৭০ বা তার কম বিপিএম (বিট পার মিনিট)।যদি দেখতে পান মাত্রা এর চেয়ে বেশি তাহলে দ্রুত ডাক্তার ডাকুন। 
৩. ভালোবাসুন অন্তত দুবার

মাসে যেসব পুরুষ মাত্র একবার কিংবা তারও কম সঙ্গম করছেন তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এই ঝুঁকি, যারা সপ্তাহে দুই কিংবা তিনবার মিলিত হচ্ছেন তাদের ৪৫ ভাগ কম। আমেরিকান জার্নাল অব কার্ডিওলজি এই তথ্য দিচ্ছে। আপনার হৃদযন্ত্রের সুরক্ষায় যৌনমিলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৪. বিষাক্ত বাতাসে যাবেন না

দুষিত, ধুলোময় বাতাস শ্বাসনালী দিয়ে ঢুকে আপনার আরটারির দেয়াল পুরু করে দিতে পারে। পরবর্তীতে সেটাই আপনার হার্ট অ্যাটাকের কারণ হবে। ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এ কথা বলেছেন।
৫. শিম, মটরশুঁটি কিনুন

আলুর প্লেট সরিয়ে দিয়ে শিম-মটরশুঁটির দিকে চামচ বাড়িয়ে দিন। ওগুলো আঁশ-সম্মৃদ্ধ খাবার। আর্কাইভস অব ইন্টারনাল মেডিসিন’র একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে যারা দিনে আধাকাপ আঁশ-সম্মৃদ্ধ মসুর-মটরশুটি-কলাই খাচ্ছেন তাদের রক্তচাপ ৪এমএম পর্যন্ত কমে যায়। গবেষকরা তাই সালাদে কালো শিম, যেকোনো তরকারিতে মসুরের ডাল কিংবা মাসকলাই ঢেলে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
৬. দৌড়ান প্রতিদিন

সপ্তাহে কোন না কোন শারীরিক কসরত অবশ্যই করুন। হতে পারে তিন কিলোমিটার দৌড়‍ানো। এই সময় ও দুরত্ব ধীরে ধীরে বাড়িয়ে দিন। কোনো ধরনের বড় পরিবর্তন দেখলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। যেমন ধরুন আপনার হৃদযন্ত্রের ধুকপুকানির মাত্রা যদি দৌড়ের পর ১৮৫ বিপিএম হয় তা কিন্তু আপনার জন্য একটি সিগন্যাল। হতে পারে আপনার আর্টারির দেয়ালে স্তর জমেছে নয়তো হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়েছে, এই মত ড. থিওডরের।
৭. শ্বাস নিন টেনে টেনে
থামুন-ধীর শ্বাস নিন। প্রতি ৩০ সেকেন্ডে ৫ বার শ্বাস নিন। এতে আপনার সিসকোলিক রক্তচাপ কমবে মিনিটে অন্তত ৪এমএমএইচজি মাত্রায়। এটিও হাইপারটেনশন রিসার্চ’র গবেষণালব্দ তথ্য। যদি আপনি ক্রমাগত এমন গভীরভাবে শ্বাসগ্রহণ করতে পারেন আপনার রক্তচাপ দীর্ঘস্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৮. কাজকে ঘাতক বানাবেন না

আপনার কাজকে আপনার ঘাতক হতে দেবেন ‍না। কাজের পরিশ্রান্তি আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সাইকোসোমেটিক মেডিসিনের একটি গবেষণায় বিষয়টি দেখানো হয়েছে। এতে দেখা গেছে যে মানুষগুলো কাজের কারণে পরিশ্রান্ত হয়ে থাকেন তারা হৃদযন্ত্রের জন্য সপ্তাহে দুই বা তিন দিন অনুশীলন করেও ৫৭ ভাগ কম সুবিধা পান।
৯. সর্দি-কাশিকে বিদায় দিন

সর্দি-কাশির জন্য যে ভ্যাকসিন নিচ্ছিন তা কেবল ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে তা-ই নয়, এতে আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। হার্ট জার্নালে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। হতে পারে, এর কারণ হচ্ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে কেবল প্রতিষেধক হিসেবেই কাজ করে না এতে শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে যা আর্টারিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
১০. ঘুম করুন নিরবচ্ছিন্ন

ঘুম যাদের নির্বিঘ্ন তাদের চেয়ে ইনসমনিয়ায় ভুগছেন এমন রোগীর হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি ৪৫ শতাংশ বেশি। নরওয়ের একটি গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে। সপ্তাহে তিন দিন মাত্র ৩০ মিনিট করে শারীরিক কসরত আপনার ঘুম বাড়িয়ে দিতে পারে। অনুশীলন করেই ফল পেতে চাইবেন না। ধৈর্য ধরুন। ফল পেতে কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে, বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা।
১১. কিন্তু বেশি ঘুমাবেন না

বেশি বা অতিরিক্ত ঘুমেও হতে পারে একই সমস্যা। যারা রাতে ১০ ঘণ্টা বা তারও বেশি ঘুমান তারা হৃদরোগের ঝুঁকিই বাড়িয়ে দেন, স্লিপ জার্নালে সে কথাই বলা হয়েছে। বলা হচ্ছে, বেশি ঘুমালে ওজন বেড়ে যায়, মানসিক স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। দিনে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টার ঘুমেও যদি পরিতৃপ্তি না আসে শিগগিরই ডাক্তারের কাছে যান।
১২. অশোষণীয় চর্বি খাবেন না

অশোষনীয় (আনস্যাচুরেটেড) চর্বি গ্রহণের পরিমান বছরে ১ শতাংশ কমাতে পারলেও আপনি শরীর থেকে ক্ষতিকর এলডিএল কলেস্টেরল উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে পারবেন। এই কলেস্টেরল আপনাকে হৃদরোগের ঝুঁকিতে রাখে। তবে খাদ্যদ্রব্য থেকেই এখন এ ধরনের চর্বি বাদ দেওয়া হয়েছে, তবে সেগুলো একেবারে চলে যায়নি। অতএক খাবার কেনার সময় লেবেলে লেখাগুলো ভালো করে পড়ে নিন।
১৩. খান পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার
 
যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন শরীরে অতিরিক্ত এক হাজার মিলিগ্রাম পটাশিয়াম ব্লাড প্রেসার কমায়। তাই খান পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার। একটি কলায় আছে ৪২০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম। এছাড়া মিষ্টি আলু এবং মাছেও আছে যথেষ্ট পটাশিয়াম।
১৪. শরীরে লাগান সূর্যের আলো
 
কটল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা এক গবেষণায় দেখেছেন, ২০ মিনিট সূর্য স্নান করলে সূর্যের অতি বেগুনী আলো শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডের উৎপাদন বাড়ায় যা উচ্চ রক্তচাপ কমায়। সপ্তাহে দুই বার দশ মিনিট করে গায়ে সূর্যের আলো লাগানো যেতে পারে। তবে সূর্যের আলোতে অ্যালার্জি থাকলে কিংবা ত্বকের ক্যানসার থাকলে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
১৫. নীরব পরিবেশে থাকুন
 
ডেনমার্কের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, শব্দ দূষণ প্রতি দশ ডেসিবল বৃদ্ধিতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে দশ শতাংশ করে। যদি আশপাশের পরিবেশ কোলাহলপূর্ণ হয় তবে প্রয়োজনে ঘুমানোর সময় এয়ারপ্লাগ ব্যবহার করে ঘুমান।
১৬. কুকুর হোক পোষ্য
 
গবেষণায় দেখা গেছে যারা কুকুর পালেন এবং তাদের নিয়ে হাঁটতে বের হন তাদের ব্লাড প্রেসার যারা কুকুর পালেন না তাদের থেকে কম। কুকুরকে হাঁটানোর কারণে কুকুরের মালিকেরও ব্যায়াম হয়ে যায়।
১৭. নিয়মিত সকালের নাশতা করুন

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে যারা সকালের নাশতা এড়িয়ে যান তাদের হার্টের অসুখের হার ২৭ শতাংশ বেশি। সকালের নাস্তা না খাওয়ার ফলে রক্তে ব্লাড সুগারের অনিয়মিত ওঠানামাই এর জন্য দায়ী।
১৮. এনার্জি ড্রিংক ছুঁড়ে ফেলুন

এনার্জি ড্রিংক পরিত্যাগ করুন। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের গবেষণায় দেখা গেছে এসব ক্যাফেইন সমৃদ্ধ এনার্জি ড্রিংক সুস্থ মানুষেরও ব্লাড প্রেসার বাড়িয়ে তুলতে পারে।
১৯. দুধ খান পরিমিত
 ফরাসি গবেষকরা দেখেছেন দুধের ক্যালসিয়াম কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। তাই ফ্যাটবিহীন দুধ খাওয়া যেতে পারে পরিমিত পরিমাণে।
২০. ভারী ব্যায়াম নয়

হালকা শারীরিক ব্যায়াম রক্তের এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টরেলের মাত্রা বাড়ায়। তবে ভারী ব্যায়াম যেমন ভারউত্তোলন ইত্যাদি কম করাই ভালো। কারণ এটি রক্তে এইচডিএল কমিয়ে দেয়।
২১. মেতে থাকুন নাচ-গানে

একদল সুইডিশ গবেষকের মতে, যারা একসঙ্গে গান গেয়ে থাকেন তাদের হৃদস্পন্দনের পরিবর্তনশীলতা বা কম্পনের মধ্যে ব্যবধানের মাত্রা অন্যদের চেয়ে ভালো থাকে। হৃদযন্ত্রের বেশি বেশি কম্পন হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
২২. মসলা খান বেশি বেশি

একাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিকসের একটি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, দারুচিনির মতো মসলাগুলোকে অপ্রয়োজনীয় মনে হলেও এটা কিন্তু ওষুধের মতো কাজ করে। খাবারের সঙ্গে দুই চা চামচ দারুচিনি খাবার পরবর্তী রক্তে চিনির ঢেউ দমিয়ে দিতে পারে।
২৩. দলভুক্ত থাকুন

ফিনল্যান্ডের একদল গবেষক বলেন, বিবাহিত পুরুষের চেয়ে অবিবাহিত পুরুষ ১৬৮ শতাংশ হার্ট অ্যাটাকের মৃত্যুর ঝুঁকিতে ভোগেন। অতএব, দলভুক্ত হয়ে বসবাসের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে একান্নবর্তী পরিবারের লোকজনই হার্ট অ্যাটাকজনিত মৃত্যুঝুঁকিতে কম থাকেন। এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ অটুট রেখেও হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
২৪. সালাদে সস খাওয়া বন্ধ করুন
 
ব্লাড প্রেসার ডাউন’র লেখক জ্যানেট বন্ড ব্রিলের মতে, সালাদে দুই ‍চা চামচ চিনি রক্তে চিনি ও এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তবে সালাদে জলপাই তেল, সিরকা ও লেবুর রস মেশানো যেতে পারে।
২৫. বাধাকপি খান বেশি

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, সপ্তাহে মাত্র একটি বাধাকপি খাওয়া লোকটির চেয়ে প্রত্যহ দেড়টি সবুজ বাধাকপি খাওয়া লোকটির হৃদরোগের ঝুঁকি ১২ শতাংশ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২৬. থাকুন হাস্যোজ্জ্বল
 
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির গবেষকদের মতে, হাসিখুশি থাকলে মানসিক চাপ ও প্রদাহ কমে যাওয়ার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়।
২৭. ক্ষিপ্র গতি নয়


হৃদরোগ কমাতে দৌঁড়াদৌঁড়ি কিংবা বাইসাইকেল ভ্রমণে পরামর্শ দিয়েছেন কানাডিয়ান গবেষকরা। তবে তা ক্ষিপ্র গতিতে নয়। পাঁচ মিনিট ওয়ার্ম আপ করে তবে সাইকেল চালাতে শুরু করুন। ১৫ থেকে ৩০ সেকেন্ড দ্রুত প্যাডেল চালান এরপর আবার একই পরিমান সময় নিন ধীর গতির প্যাডেলিংয়ে। এভাবে ১০মিনিট চালিয়ে চার মিনিটের বিরতি নিন। আবার চালান। এতে আপনার লিপিডের অনুপাত বাড়বে।
২৮. হাতের মুঠো সচল রাখুন
 হাতের মুঠো সচল রাখার চার সপ্তাহের একটি ছোট্ট অনুশীলন আপনার রক্তচাপ ১০ ভাগ কমিয়ে দিতে পারে। হাইপারটেনশন জার্নালে এ বিষয়ে বলা হয়েছে। গবেষকরা বলছেন মুষ্ঠী সঞ্চালনের এই অনুশীলন আপনাকে চাপমুক্ত রাখে, এতে রক্তসঞ্চালন বেড়ে যায়। দুই হাতে চারবার দুই মিনিট করে কব্জির এই অনুশীলনটি নিয়মিত করুন। প্রতিবার শুরু করার আগে এক মিনিট জিরিয়ে নিতে হবে।
২৯. ডিমে ক্ষতি নেই, উপকারী 


যারা ভাবতেন ডিমে ক্ষতিকর কলস্টেরল এলডিএল বেড়ে যায় তারা ভুল করছেন। ব্রাজিলের একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে ডিম খেলে হৃদযন্ত্রের আর্টারিগুলো পরিস্কার হয়ে যায়। ডিমের কুসুমে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন ই, বি১২ এবং ফোলেট রয়েছে। দিনে চারটি পর্যন্ত ডিম খাওয়া যেতে পারে বলেই গবেষকদের মত। তবে ক্যালোরির কথা মাথায় রেখে এর বেশি না খাওয়ারই পরামর্শ তাদের।
৩০. নিজেকে স্বাস্থ্যবান করে গড়ে তুলুন 
ফিনল্যান্ডের একদল গবেষক বলেন, বেটা-ক্যারোটিনে সর্বনিম্ন রক্তের মাত্রা হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অপরদিকে বেটা-ক্যারোটিনে সর্বোচ্চ রক্তের মাত্রা হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

0 comments:

Thanks for Comment

Copyright © 2013 MEDIA INFO