জীবনের পথে ঘুরে দাঁড়াতে হলে ।

পথ কখনো মসৃণ কখনো নানা বাধা-বিপত্তিতে ভরা। রাজ্যের বাধা অতিক্রম করেই সফল হতে হয়। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছেও পিছলে যেতে পারে পা! এসব নিয়েই তো জীবন। একটা স্বপ্ন ভাঙে তো আরেকটা স্বপ্নের জাল বুনে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেন অনেকে। এমন মানুষও আছেন যাঁরা হোঁচট খেয়ে আর উঠে দাঁড়াতে পারেন না। কিন্তু চরম দুর্ভোগের সময়টাই জীবনের পথে ঘুরে দাঁড়ানোর সবচেয়ে ভালো সুযোগ। কঠিন এ সময়ে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয় তা নিয়েই এ প্রতিবেদন।
কথা বলুন, হালকা হন
হোঁচট খেতে খেতে এমন দশা হয়েছে, সব আশা ছেড়ে দিয়েছেন। মনের মধ্যে নেতিবাচক চিন্তাভাবনাগুলো পাকাপোক্তভাবে জায়গা করে নিয়েছে। এখন আর কোনো আশার আলোই দেখতে পাচ্ছেন না হয়তো। আশাহতের এই কুচক্র থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হবে আপনাকেই। তবে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে মনের সব দুঃখ, যন্ত্রণা, দুর্দশার কথা কারও কাছে খুলে বলা। এমন কারোর সঙ্গে কথা বলুন, যার ওপর আপনি সত্যি আস্থা রাখতে পারেন। নিজের কষ্টের কথা খুলে বললে দেখবেন নিজেকে অনেক হালকা মনে হচ্ছে। কাছের মানুষের পরামর্শে এ যাত্রায় বেঁচেও যেতে পারেন।
বর্তমান নিয়ে ভাবুন
বিষাদ আর পরাজয়ের গ্লানি চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে। এ ক্ষেত্রে নিজের বেয়াড়া আবেগগুলোকে ঝেড়ে ফেলুন। অতীতকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করুন। যে অতীত পাল্টানোর ক্ষমতা নেই, সেটি ভেবে ভেবে কোনো ফলই পাবেন না। বরং এসব চিন্তা আপনার মনকে আরও অস্থির করে তুলবে। এর চেয়ে ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা অনেক বেশি কাজে আসতে পারে। আপনার সাধ্যের মধ্যে আছে এমন কিছু ভাবুন।
আবেগে রোগ
অনেক কারণেই জীবনে নেতিবাচক ভাবনা তৈরি হতে পারে। এসব ভাবনা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও হুমকি। অতি-আবেগপ্রবণ মন-মানসিকতা শারীরিক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। অফিসের বস হয়তো ‘ভুল’ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আপনি কোনোভাবেই তাঁকে সেটা বোঝাতে পারছেন না। মনের মধ্যে এক ধরনের রাগও হয়তো দানা বেঁধেছে। আপনাকে এসব আবেগ দূর করতে হবে। এমন কিছু করুন, যা নেতিবাচক আবেগ দূর করবে। কেননা আবেগকে বশ করতে না পারলে আগে বাড়তে পারবেন না।
নিজেকে জিজ্ঞেস করুন
জীবনের এই খারাপ সময়টায় নিজেই নিজের সমালোচনা করুন। ভেবে বের করুন ভুলটা কোথায় ছিল। নিজের মনকে প্রশ্ন করুন, নিজেই উত্তর দিন। একটু অন্যভাবেও ভাবতে পারেন। এটি পরীক্ষিত যে নিজের সমস্যা সমাধানের চেয়ে অন্যকে পরামর্শ দেওয়া অনেক সহজ। তাই কল্পনা করতে পারেন আপনার কাছের কোনো বন্ধু এমন কোনো সমস্যায় পড়ে আপনার কাছে এসেছে। এমন হলে আপনি তাঁকে যে সমাধান দিতেন, সেটি নিজের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করতে পারেন।
ঘুরে বেড়ান
সময়টা হয়তো খারাপ যাচ্ছে। তার মানে এই নয় যে এখানেই জীবনের সব শেষ। একটি জিনিস সব সময় মনে রাখবেন, জীবন বহমান, কখনো থেমে থাকে না। তাই অবসরে ব্যায়াম করুন, কোথাও বেড়াতে যান, প্রতিদিনের জন্য একটি করে লক্ষ্য স্থির করে এগোন। এটি আপনার কর্মদক্ষতা বাড়াবে এবং মন থেকে নেতিবাচক চিন্তা দূর করবে। মনে রাখবেন, ব্যস্ত মানুষ ভবিষ্যত্ নিয়ে ভাবে, অতীতে পড়ে থাকে না। এসব মেনে চললে বিষাদ থেকে মুক্তি পেয়ে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন।
কৃতজ্ঞতায় সান্ত্বনা
বিক্ষিপ্ত মন-মানসিকতা নিয়ে গোমরা মুখে ঘোরাফেরা বন্ধ করুন। চোখ বন্ধ করে ভাবুন, আপনি কার কিংবা কাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁরা হতে পারেন আপনার মা-বাবা, বন্ধু-বান্ধব, সন্তান কিংবা স্ত্রী অথবা অন্য কেউ। তাঁদের সঙ্গে সময় কাটান। ভাবুন, আপনার জীবনে যতটুকু অর্জন এই মানুষগুলোর জন্যই এসেছে। আস্তে আস্তে কাছের মানুষদের নিয়ে সুখের জন্য লড়াই করতে শিখে যাবেন।
পরাজয়ে জয়ের শুরু
জীবনের সব অভিজ্ঞতাই গুরুত্বপূর্ণ। কথায় আছে, ‘আমরা ব্যর্থতা থেকেই শিখি, সফলতা থেকে নয়।’ অতীতের ব্যর্থতার কারণগুলো খুঁজে বের করুন। সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে সামনে এগোন। এটি জীবনে যেকোনো রকমের সমস্যা থেকে পরিত্রাণে সাহায্য করবে। খারাপ সময়ই নতুন করে জীবন শুরু করার উত্তম সুযোগ। তাই যা-ই ঘটুক না কেন, মানসিকভাবে শক্ত থাকতে শিখুন। জীবনের রূঢ় বাস্তবের মুখোমুখি হতে সব সময়ই তৈরি থাকুন।

0 comments:

Thanks for Comment

Copyright © 2013 MEDIA INFO