কোন বয়সে কতটা ঘুম প্রয়োজন

শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিকঠাক রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু কম ঘুমানোর মতোই বেশি ঘুমানোটাও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আবার শৈশবে, কৈশোরে, তারুণ্যে, যৌবনে আর বার্ধক্যে ঘুমের চাহিদাও আলাদা আলাদা। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন গবেষণার আলোকে সম্প্রতি বয়সভিত্তিক ঘুমের সময়ের এক নির্দেশনা প্রকাশ করেছে। দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে বয়সভিত্তিক ঘুমের সময়ের পরামর্শ তুলে ধরা হলো।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের ১৮ জন গবেষকের একটি দল বয়সভিত্তিক এই ঘুমের নির্দেশনা তৈরি করেছে। বিগত বছরগুলোতে পরিচালিত ৩২০টি গবেষণা প্রতিবেদন পর্যালোচনার মাধ্যমে এই নির্দেশনা চূড়ান্ত করেছেন দেশটির ঘুম বিশেষজ্ঞরা।
এই পরামর্শপত্র তৈরি করতে গিয়ে তাঁরা ঘুমের সঙ্গে সম্পর্কিত স্বাস্থ্যের উপকারিতা এবং স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ঝুঁকিগুলোও যাচাইবাছাই করেছেন। কয়েক রাত ধরে ঘুম কম হতে থাকলে আপনি ক্লান্ত হয়ে যাবেন, মনোযোগ কমে যাবে এবং বিষণ্নতা ভর করতে পারে, উদ্বেগও বেড়ে যেতে পারে। আর যদি এই ঘুম কম হওয়াটা চলতেই থাকে, তাহলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও মুটিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, নিয়মিত অতিরিক্ত ঘুমালেও এই স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলো বেড়ে যেতে পারে।
বয়স অনুযায়ী ঘুমের হিসাব
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের পরামর্শপত্র অনুযায়ী ৬ থেকে ৯ বছর বয়সী শিশুদের রাতে অন্তত ৯-১১ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন, তবে নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঠিকঠাক ঘুমাতে পারলেও ওরা নিজেকে চালিয়ে নিতে পারে। ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ৮-১০ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। তবে কারও কারও নিয়মিত ৭ ঘণ্টা ঘুমালেও চলতে পারে। আর বয়ঃসন্ধির সময়টাতে অনেকেরই প্রায় ১১ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু ১১ ঘণ্টার চেয়ে বেশি ঘুমালে তা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে।
মার্কিন গবেষক দলটির অন্যতম সদস্য শিকাগোর লয়োলা ইউনিভার্সিটির লিডিয়া ডনকারলোস বলেছেন, সারকাডিয়ান ক্লক বা দেহঘড়ির প্রভাবে টিনেজারদের সাধারণত রাতে একটু দেরিতে ঘুম পায় এবং ওরা দেরি করে ঘুম থেকে উঠতে চায়। কিন্তু যখনই ঘুমাক আর যখনই উঠুক, নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুমানোটা খুবই জরুরি। তিনি আরও বলেন, ছুটির দিনে ঘুম পুষিয়ে নেওয়ার চিন্তা অনেকেই করে বটে কিন্তু আসলে ‘বকেয়া ঘুম কখনোই পুষিয়ে নেওয়া যায় না’।

তরুণ বা প্রাপ্তবয়ষ্কদের জন্য ৭-৯ ঘণ্টার ঘুমের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বয়স অনুসারে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে পরামর্শও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ক. নবজাত শিশু : (৩ মাস পর্যন্ত) ১৪ থেকে ১৭ ঘণ্টা। যদিও ১১ থেকে ১৩ ঘণ্টাও যথেষ্ট হতে পারে। তবে কোনোভাবেই ১৯ ঘণ্টার বেশি হওয়া উচিত নয়।
খ. শিশু (৪ থেকে ১১ মাস) : কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা আর সর্বোচ্চ ১৮ ঘণ্টা।
গ. শিশু (১/২ বছর বয়স) : ১১ থেকে ১৪ ঘণ্টা।
ঘ. প্রাক স্কুল পর্ব (৩-৫ বছর বয়স) : বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা।
ঙ. স্কুল পর্যায় (৬-১৩ বছর) : এনএসএফ’র পরামর্শ ৯-১০ ঘণ্টার ঘুম।
চ. টিন এজ (১৪-১৭ বছর) : ৮-১০ ঘণ্টার ঘুম প্রয়োজন।
ছ. প্রাপ্তবয়স্ক তরুণ (১৮-২৫ বছর) : ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
জ. প্রাপ্তবয়স্ক (২৬-৬৪ বছর) : প্রাপ্তবয়স্ক তরুণদের মতোই।
ঝ. অন্য বয়স্ক (৬৫ বা তার বেশি বছর) : ৭/৮ ঘণ্টার ঘুম আদর্শ। কিন্তু ৫ ঘণ্টার কম বা ৯ ঘণ্টার বেশি হওয়া উচিত নয়।
এনএসএফ’র ঘুম বিশেষজ্ঞরা পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে করনীয় সম্পর্কে একটা তালিকাও প্রকাশ করেছেন। এক্ষেত্রে তারা প্রথমেই ঘুমকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছেন। একিইসঙ্গে তারা বলছেন, নীচের টিপসগুলোও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে ঘুমের জন্য।
ক. নিদ্রাহীনতা স্বাস্থ্য ও কাজের ক্ষতি করতে পারে।
খ. ঘুমের নির্ধারিত সময় মেনে চলা।
গ. নিয়মিত ব্যায়াম।
ঘ. বেডরুমের আদর্শ তাপমাত্রা, সাউন্ড ও লাইট।
ঙ. আরামদায়ক বিছানা ও বালিশ।
চ. অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন না নেওয়া।
ছ. শয্যায় যাওয়ার আগে ইলেট্রনিক ডিভাইস বন্ধ করা।

0 comments:

Thanks for Comment

Copyright © 2013 MEDIA INFO