চাকরি পাওয়ার পর যে বিষয় গুলো জানা প্রয়োজন

নতুন চাকরি পেয়েছেন মাত্র ক’দিন হলো। এরই মধ্যে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় মিষ্টি পাঠানো আর বন্ধুদের নিয়ে ফাস্টফুডের দোকানে ঢুঁ মারার কর্মটি শেষ করে ফেলেছেন। ফোন করে চাকরি পাবার সংবাদটিও হয়তো জানানো হয়ে গেছে। ভেবে দেখেছেন কি নতুন যে অফিসের পরিবেশে আপনি ঢুকছেন তার পুরোটাই হয়তো আপনার অজানা। সমস্যার উল্টা পিঠে যেমন সমাধান থাকে তেমনি আপনাকে বুদ্ধি দেওয়ার জন্যও রয়েছে অনেকে। নতুন চাকরিজীবীদের জন্য রইল গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ-

১. প্রথমেই সবার মনে আপনার সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সবাইকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে হবে। মনে রাখতে হবে আপনার সঙ্গে যারা কাজ করছেন তারাও কিন্তু স্ব স্ব ক্ষেত্রে তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই কাজে যোগ দিয়েছেন। তাদেরও উচ্চতর ডিগ্রি বা দীর্ঘদিন কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে পারে। আপনার কাজ এবং উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যদি পর্যবেক্ষক হিসেবে কেউ না থাকে, তবুও এ বিষয়ে সচেতন হোন। অফিসে দেরি করে আসা, লাঞ্চে গিয়ে বেশি সময় কাটানো বা অফিস সময় শেষ হওয়ার আগেই চলে যাওয়ার মতো অভ্যাসগুলো যদি প্রথম থেকেই আপনার মধ্যে চলে আসে, তাহলে শেষে কিন্তু আপনার লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। আর সবার সঙ্গে নম্র ব্যবহার করার পাশাপাশি অফিসের চলতি ধারা বা অফিস পলিটিকস সম্পর্কেও কিছুটা জানার চেষ্টা করুন।

২. ভালো কাজ পারার একটি বড় শর্ত হচ্ছে ভালো কাজ শেখা। এ কারণে আপনার শেখার দুয়ারটা কখনোই পুরোপুরি বন্ধ করে দেবেন না। অফিসের ‘নর্ম অ্যান্ড কালচার’গুলোও শিখতে চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন যে কোনো অফিসই তাদের মানসিকতার সঙ্গে মানানসই লোককে খুঁজে বেড়ায়। তাই আপনার অফিসে কাজের যে ধারা প্রথম অবস্থায় সেটিকেই মনে-প্রাণে অনুসরণ করার চেষ্টা করুন। প্রাথম অবস্থায়ই যদি আপনি আপনার কাজের ধরনে আমূল পরিবর্তন আনতে চান তাহলে আলোচিত হওয়ার চেয়ে সমালোচিত হওয়ার ঝুঁকিই বেশি থাকে।

৩. নতুন চাকরির শুরুতে কথাবার্তায়ও আপনাকে কিছুটা কেউকেটা হতে হবে। অর্থাৎ বেশি কথা না বললেও সঠিক কথাটি কিভাবে ঠিক জায়গায় বলা যায় সে বিষয়টি আপনাকে শিখে নিতে হবে। আর বাইরের কোনো পরিবেশে যখন আপনি অফিসের প্রতিনিধি হিসেবে যাবেন তখন এটা মনে রাখবেন, আপনার কথা বলার ধরনটি শুধু আপনার ব্যক্তিত্বের বিজ্ঞাপনই নয়, একই সঙ্গে এটি আপনার অফিসকেও রিপ্রেজেন্ট করে।

৪. বড় কোনো বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে গিয়ে নতুন চাকরিওয়ালারা অনেক সময় তুচ্ছ বিষয়ে ভুল করে ফেলেন। আপনার ক্ষেত্রে যেন এমনটি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। যে কোনো অফিসিয়াল ডকুমেন্ট বা ই-মেইলের ক্ষেত্রে বানান এবং অন্য ছোটখাটো তথ্যগত ভুলগুলো ভালো করে পরীক্ষা করে তারপর তা উপস্থাপন করুন।

৫. অনাবশ্যক প্রশ্নবাণে আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জর্জরিত না করাই উত্তম। যেসব প্রশ্ন আপনার তাৎক্ষণিক কাজের জন্য জরুরি নয় সেসব প্রশ্ন একটি স্থানে টুকে রাখুন। পরে সুবিধাজনক সময় এগুলোর উত্তর জেনে নিন।

৬. অন্যদের কাজের দিকে নজর দেওয়ার চেয়ে প্রথম এক বছর আপনি আপনার নিজের কাজের প্রতিই বেশি মনোযোগী হোন। নিজের কাজে শতভাগ দক্ষ হয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। সেই সঙ্গে সিডিউল কাজের বাইরে আপনার প্রতিষ্ঠানের ভালোর জন্য যে আপনি বাড়তি কাজ করতেও আগ্রহী সেটা আপনার বসকে বোঝাবার চেষ্টা করুন।

৭. আপনার চাকরির পরিবেশটি কিন্তু মোটেও আগের পরিচিত পরিবেশের মতো নয়। কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি যতই একক সত্তা হিসেবে থাকুন না কেন অফিস সবসময়ই টিমওয়ার্কের জায়গা। তাই একটি টিমের সঙ্গে কাজ করার জন্য যে ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিজের মাঝে গড়ে তোলা দরকার সেদিকে সচেতন হোন।

৮. অফিসের পরিবেশের সঙ্গে আপাত সম্পর্কহীন মনে হলেও আপনার ব্যক্তিগত জীবনটিও গোছানো রাখার চেষ্টা করুন। কারণ ব্যক্তিগত কোনো কারণে যদি আপনি মানসিকভাবে অস্থির থাকেন তবে তার প্রভাব আপনার অফিসের কাজেও পড়তে বাধ্য।

যে চাকরিতেই যোগদান করেন না কেন মনে রাখবেন, ক্যারিয়ারটা নিজের কাছে। তাই বিকশিত করুন যোগ্যতা ও দক্ষতাকে। তাহলেই এগিয়ে যাবেন ক্যারিয়ার দৌড়ে।

0 comments:

Thanks for Comment

Copyright © 2013 MEDIA INFO